মশক নিধনে এখনো অকার্যকর ওষুধই ব্যবহার হচ্ছে
- ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ জন্য দুই সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একপর্যায়ে দুই সিটি করপোরেশন স্বীকার করে, তাদের ওষুধে মশা মরে না। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন দুই মেয়র। গত জুলাই মাসে দুই সিটি করপোরেশনকে নতুন ওষুধ সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। ১ আগস্ট সরাসরি ওষুধ আমদানির লাইসেন্স পায় ডিএনসিসি। এর পরও জটিলতা না কাটায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একপর্যায়ে এডিস মশা নির্মূলে দ্রুত দেশের বাইরে থেকে কার্যকর নতুন ওষুধ আনার নির্দেশ দেন আদালত।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ব্যবহার করতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। সে অনুযায়ী বিশেষ বিমানযোগে চীন ও ভারত থেকে নতুন ওষুধ আমদানি করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি)। এ জন্য পৃথক দু’টি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু পুরনো ‘অকার্যকর’ ওষুধ এখনো ব্যবহার করছে ডিএনসিসি। যদিও ডিএনসিসি বলছে, তারা পুরনো ওষুধের পাশাপাশি নতুন ওষুধও ব্যবহার করছে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বেশ কয়েকটি উপাদানের সংমিশ্রণে আমরা একটি ওষুধ ব্যবহার করি। তার মধ্যে একটি উপাদান নিয়ে এক ব্যক্তি গবেষণা করেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধের একটি উপাদান অকার্যকর। বাকি দু’টি উপাদানের কার্যকারিতা আছে। তবে ওই ওষুধটি আমাদের নিজস্ব ফিল্ড পরীক্ষা, প্ল্যান প্রোটেকশন উইংয়ের পরীক্ষা ও আইইডিসিআরের পরীক্ষায় কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। এরপর চীনের নানজিং ইকো ফার্ম বায়োটেকনোলজি লিমিটেড থেকে ম্যালাথিউন ওষুধ আমদানি করে ডিএনসিসি। এজন্য বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে ডিএনসিসি।
অভিযোগ উঠেছে সেই অকার্যকর পুরনো ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করেনি ডিএনসিসি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএনসিসির মশকসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির প্রধান ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরনো ওষুধ ব্যবহার করছি এটা সত্য। পাশাপাশি নতুন ওষুধও ব্যবহার শুরু করেছি। এখনও এক লাখ ১০ হাজার লিটার সরাসরি ব্যবহার উপযোগী (রেডি ফর ইউজ) নতুন ওষুধ আছে। এই ওষুধ প্রস্তুত করতে যে পরিমাণ কাঁচামাল বা ম্যালাথিউন প্রয়োজন, সেটি চীন থেকে এলসির মাধ্যমে আনা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ওষুধ (ম্যালাথিউন) আনা হয়েছে সেটি প্রধান ভাণ্ডার কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আর পুরনো যে কোম্পানিকে চার লাখ লিটার ওষুধ দেয়ার জন্য আগে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে, সেই কার্যাদেশের ওষুধ সরবরাহ এখনো শেষ হয়নি। কার্যাদেশ বাতিলও হয়নি। তারা কয়েক ধাপে আমাদের ওষুধ দিয়েছে। তাই এখনো তাদের সেই ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে।
আদালতের নির্দেশ ছিল আগের ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া, সেটা পালিত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, ‘ডোজ বাড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগের মতোই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আমরা লার্ভিসাইডিংয়ের (লার্ভা নিধন) দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। কারণ, অ্যাডাল্টিসাইডিংয়ে (উড়ন্ত মশা) মশা মরে না।
ডিএনসিসির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডিএনসিসির প্রধান ভাণ্ডার কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, তারা আগের ওই কোম্পানিকে (নোকন) যে কার্যাদেশ দিয়েছেন, সেই কার্যাদেশে গ্রহণ করা ওষুধ এখনো ব্যবহার করছেন। এটা কেন যে করছেন, সেটি আমার জানা নেই।