২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী শহর তালিকায় তৃতীয় ঢাকা

-

‘গ্লোবাল লিভঅ্যাবিলিটি ইনডেক্স’ অনুযায়ী, বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী শহরগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণই এর মূল কারণ। আর এমন নগরায়ণের কারণে বছর বছর বেড়েছে ঢাকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও। গত ১৮ বছরে ঢাকা শহরের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪ থেকে সাড়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। আর মাটির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেই জনজীবনে ব্যাপক অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি খুবই আশঙ্কাজনক। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই পড়বে।
ঢাকা শহরের মাটির তাপমাত্রা এত বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি শহরে শুধু ঘরবাড়িই থাকবে না, প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষিজমি, সবুজ অঞ্চল, উন্মুক্ত স্থান ও জলাধার রাখতে হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে কৃষিজমি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। জলাধার যা ছিল, তারও বড় একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে। এতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে।
ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, ‘বিল্ট-আপ এরিয়া (ভবনসহ নানান অবকাঠামো তৈরি)’ বৃদ্ধি, জলাভূমি কমা, ঘনবসতিসহ নানা বিষয় জড়িত। তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী জলাভূমি কমে যাওয়া। মানবদেহের কিডনির মতো জলাভূমি একটি শহরের কিডনি হিসেবে কাজ করে। শহরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে। ঢাকা শহরের জলাভূমির বেশির ভাগই এখন ভরাট করা হয়েছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা শহরে ভূপৃষ্ঠের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে ঢাকার ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার মাটির তাপমাত্রা ১৫-১৮ ডিগ্রির সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর ২০০০ সালের জানুয়ারিতে মাটির তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৭১ এবং সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ১৮ দশমিক ৮০ এবং সর্বোচ্চ হয় ২৮ দশমিক ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন ঢাকার ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার মাটির তাপ ২১-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
ঢাকা শহরের নগরায়ণ পরিকল্পিতভাবে হয়নি। বেশির ভাগ এলাকাই গড়ে উঠেছে জলাভূমি ভরাট করে। ভরাটের জন্য বালু ব্যবহার করা হয়েছে। বালু অতিমাত্রায় তাপ শোষণ করে, এ জন্য ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকার ভূমির তাপমাত্রা বেশি। বালু দিয়ে ভরাট করার পর তার ওপর ঘাস লাগালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কিছুটা হলেও কমত। মাটির তাপ বাড়ার কারণে শহরের আবহাওয়াও উষ্ণ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement