পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্র
- সুমনা শারমিন
- ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার কারাস্মৃতিজড়িত স্থাপনা জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নাগরিকদের জন্য থাকছে পার্ক, মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানান নাগরিক সুবিধা। এই সংরক্ষণ ও রূপান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এটি উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
‘পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এই সংরক্ষণ ও রূপান্তরের কাজ চলছে। গত বছর নভেম্বরে কারা অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ২৮ জুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নকাজের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
নাজিমুদ্দিন রোডের প্রায় ২২৮ বছরের পুরনো এই কারাগারের সাথে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ও ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মোগল সুবাদার ইব্রাহিম খান ঢাকার চকবাজারে (নাজিমুদ্দিন রোড) একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ১৭৮৮ সালে ওই দুর্গের ভেতরে অপরাধী রাখার জন্য একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণ করা হয়। এই দুর্গকেই একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তর করা হয়।
প্রাচীন কারা ভবনটি ছিল জরাজীর্ণ ও বসবাসের অযোগ্য। তাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পূর্ব পাশে নতুন আরেকটি কারাগার নির্মাণ করে সরকার। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে নাজিমুদ্দিন রোড থেকে এই কারাগারে বন্দীদের স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে এই কারাগার অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এখন কারাগারটি সংরক্ষণ ও সবুজ উদ্যান করার কাজ চলায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।
কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, পুরনো কারাগারের জায়গা রয়েছে প্রায় ৩৮ একর। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে প্রায় ২৫ একর জায়গার ওপর। এ জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবরে পুরনো কারাগারের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও কারা অধিদফতর। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ৩৪টি প্রতিষ্ঠান নকশা ও মডেল জমা দেয়। এর মধ্যে স্থাপনাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ফর্ম থ্রি আর্কিটেক্টসের’ নকশা সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়।
ফর্ম থ্রি আর্কিটেক্টস কারাগারের জায়গাটিকে তিনটি জোনে ভাগ করেছে (এ, বি, সি)। এর মধ্যে কারাগারের উত্তর অংশে জোন-এ এলাকায় একটি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এখানে কনভেনশন হল, সুইমিংপুল, সিনেপ্লেক্স ও চার শতাধিক গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে। কারাগারের দক্ষিণ অংশটি জোন-বি। এখানে চক কমপ্লেক্স নামের একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে বইয়ের দোকান ও ফুডকোর্ট থাকবে। পাশে শিশুদের খেলার জায়গা, মসজিদ, পুকুর ও ৮৫টি গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হবে। এ ছাড়া কারাগারের মাঝের অংশে (জোন-সি) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর, পুরনো কারাগার ও এর ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে। পাশেই থাকবে কারা উদ্যান, লেক, গ্রন্থাগার, হাঁটাচলার পথ। নির্মাণ করা হবে পৃথক দু’টি মসজিদ। সব মিলিয়ে মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেক জায়গা উন্মুক্ত রাখা হবে।