ঢাকার সড়কে বাসচালকদের ডোপ টেস্ট

মাদকাসক্ত চালকদের ধরতে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানী ঢাকার সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ডোপ টেস্ট শুরু করা হবে। পরীক্ষায় কোনো চালকের প্রস্রাবের নমুনায় মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেলে, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হবে। সাথে সাথে পাঠানো হবে কারাগারে।
গত বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথসভায় এ কথা জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সভায় ঢাকার চারটি বাসটার্মিনালের মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাসের সাধারণ মালিক, শ্রমিকরাও।
খন্দকার এনায়েত বলেন, দু’টি কারণে ঢাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম কারণ মাদক। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ চালক মাদকাসক্ত। তারা যানজটের রাস্তায়ও দুর্ঘটনা ঘটায়। কারণ, দুই লেনের রাস্তাকে চারলেন দেখে। দুর্ঘটনার দ্বিতীয় কারণ চুক্তিতে বাস চালানো। এই দু’টি সমস্যার সমাধানে মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, দুই সিটি করপোরেশন ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাথে আলোচনা করেছে।
আলোচনার বরাতে তিনি জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডোপ টেস্ট চালু করা হবে। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাবে। সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সহায়তা দেবে। মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
চুক্তিতে বাস চালানো বন্ধে ঢাকায় কাউন্টার সার্ভিস চালু করা হবে বলে যৌথসভায় জানানো হয়। প্রথমপর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে বছিলা-মতিঝিল এবং মিরপুর-মতিঝিল রুটে কাউন্টার চালু হবে। খন্দকার এনায়েত বলেন, বর্তমানে এই দুই রুটে যে স্টপেজ নির্ধারণ করা রয়েছে, তা অযৌক্তিক। যেখানে বাস থামানোর জন্য বে নির্মাণের জায়গা রয়েছে সেখানে স্টপেজ নির্ধারণ করা হবে। যাত্রী ওঠানামায় বাস যত্রতত্র থামবে না। বাস বে’তে দাঁড়াবে। ১০টি কোম্পানির বাস চললেও, একটি কাউন্টার থেকে সবার টিকিট বিক্রি করা হবে। মালিকরা যার যার বাসের টিকিট বিক্রির টাকা পাবেন। বাস বে নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে দুই সিটি করপোরেশনের সাথে আলোচনা চলছে। এক কাউন্টার ছাড়া কোথাও বাসের দরজা খোলা থাকবে না। কাউন্টার পদ্ধতি চালু হলে চুক্তিতে বাস চালানো বন্ধ হয়ে যাবে।
যৌথসভায় সাধারণ চালকরা বলেন, চুক্তিতে বাস চালানোর কারণে তারা সবসময় ‘টার্গেটের’ চাপে থাকেন। বলাকা পরিবহনের চালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, একটি বাসে দৈনিক খরচ ৯ হাজার টাকা। এ টাকা আয়ের পর যা থাকে, তা চালক-হেলপার পান। টাকা তোলার চাপের কারণে হুড়োহুড়ি করে বাস চালান চালকরা। যাত্রী ধরতে বিপজ্জনক ওভারটেকিং করে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু বলেন, একটি বাসকে দিনে এক হাজার থেকে বার শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিতে হলে মালিকরা বাসের যতœ নিতে পারতেন। চালককে বাড়তি টাকা দিতে পারতেন। পরিবহনে নৈরাজ্যের মূলে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে শৃঙ্খলা আসবে না। খন্দকার এনায়েত বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধে তিনি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের সাথে কথা বলেছেন। রাস্তাঘাটে বৈধ, অবৈধ সব রকমের চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। সমিতির টাকা মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি হিসেবে নেয়া হবে। রাস্তায় টাকা তোলা বন্ধ করা হবে।