সবুজ বিলুপ্ত হওয়ায় নগরের উষ্ণতা বাড়ছে
- আমার ঢাকা প্রতিবেদক
- ৩০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ইট-পাথরের চাপায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার সবুজ রূপ। দশকের পর দশক ধরে বৃক্ষ উজাড়ের মিছিলে ঢাকা তার আগের শ্যামল রূপশোভা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের রূপ মানেই সবুজে ঘেরা এক শ্যামলিমা। ঢাকা শহরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। যখন থেকে এ শহর নগরে রূপ নেয়া শুরু করে, তখন থেকে এখানে উদ্যানচিন্তার উন্মেষ ঘটে।
প্রতিদিন নতুন নতুন বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে, আর কেটে ফেলা হচ্ছে পুরনো বাড়ির চারপাশে থাকা গাছ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষতলের শীতল ছায়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি জনপদে জনগণের তিন গুণ গাছ থাকা দরকার। কিন্তু প্রায় দুই কোটি মানুষের এ ঢাকা শহরে গাছ আছে কয়টি? সঠিক সংখ্যা কারো কাছে না থাকলেও তা দুই-তিন লাখের বেশি হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঢাকা শহরে গাছের যথাযথ কোনো পরিসংখ্যান কখনোই করা হয়নি।
এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক দুর্লভ গাছ। যেসব দুর্লভ গাছ এখনো কোনোমতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোও নগরবাসী ও কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা, অপরিণামদর্শিতা, লোভ আর নগর পরিকল্পকদের ভুলে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অযতœ আর অবহেলাই এসব দুর্লভ বৃক্ষের ললাটলিখন। প্রতি বছরই প্রাচীন ও দুর্লভ গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
ঢাকা শহরে এখনো যত গাছ আছে, সেগুলোর একটি বড় অংশ উজাড় হওয়ার ঝুঁকির মুখে। এসব বৃক্ষের স্থান দখল করে নিচ্ছে অপরিকল্পিত বাড়িঘর। ফলে বৃক্ষশোভিত ঢাকার অপরূপ নিসর্গ ক্রমে হয়ে উঠছে ছায়াহীন ঊষর। নির্মল বায়ুর বদলে ঢাকার আকাশ ঘিরে আছে দূষিত বায়ুর বিষবাষ্প। ঢাকার বাতাস, পানি ও মাটি দূষিত হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট সব কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ঢুকতে পারছে না এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে মাটিতে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডারে ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছে ডিসিসি, রাজউক ও সড়ক বিভাগ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান গাছের যথাযথ পরিচর্যা করে না। অনেক সড়ক দ্বীপেই চোখে পড়ে পাকুড়, মেহগনির মতো বৃহৎ গাছের চারা। কিন্তু এসব গাছের চেহারা একেবারেই মলিন ও জীর্ণ। ফুটপাথে যে দু’-একটা গাছ আছে, সেগুলোর চারপাশ ইট-সিমেন্টে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এসব গাছের চারপাশে কমপক্ষে এক মিটার জায়গা রাখা উচিত ছিল। এদিকে ঢাকায় দেশী গাছ কমছে। শূন্যতা পূরণ করতে আনা হচ্ছে বিদেশী গাছ, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে খবর রয়েছে।
কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সামান্য ঝড়ে রাজধানী ঢাকার সড়কের পাশে ও সড়ক বিভাজকসহ বিভিন্ন স্থানে লাগানো গাছপালা ভেঙে পড়ছে। এসব গাছের কোনো পরিচর্চা করা হয় না। অতিরিক্ত ডালপালা ও ঝুঁকিপূর্ণ অংশও অপসারণ করা হয় না। প্রতিটি গাছের ডালপালা বেড়ে উঠছে আপন গতিতে। এসব কারণে সামান্য ঝড়ের কবলে পড়লেই ভেঙে পড়ছে গাছগুলো। এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলেছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গাছ ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ মাটির গুণগত মান পরীক্ষা না করে গাছ লাগানো। তা ছাড়া গাছের সঠিক পরিচর্চা না করা, ঝড়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা না কাটা এবং ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গাছ ভেঙে পড়ছে।
অল্প কিছু বৃক্ষ সড়ক-মহাসড়কে আছে। এসবের কোনো যতœ নেয়া হয় না। কেউ একটু দেখভাল করে না। গাছের গোড়ায় নেই মাটি। ফলে সামান্য ঝড়ে গাছগুলো পড়ে যাচ্ছে। সরকারের নানা সংস্থা নানা কথা বলে। এসব গাছের দায়িত্ব কেউই নিতে চায় না। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় কোনো পর্যায়েই পরিবেশ বাঁচানোর জোরালো প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না। যা কিছু হয়, সবটাই বিচ্ছিন্নভাবে। ফলে এক দশকে ঢাকার পরিবেশ কতটা খারাপ হয়েছে, সেটা নতুন করে বলার অবকাশ নেই। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, নদীদূষণ এ রকম হাজারো দূষণ চলছে। এসব তো মানুষই করে, তাই নয় কি? আমরা নিজেরাই পরিবেশের সবচেয়ে বড় শত্রু, স্বেচ্ছায় সেটা স্বীকার করি বা না করি। বিভিন্ন দূষণে শিশু, বৃদ্ধ ও হৃদরোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় গাছ লাগানো হচ্ছে না বলে রাজধানীর পরিবেশে গুরুতর বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত গাছের অভাবে ঢাকার বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নগরের উষ্ণতা বাড়ছে।