অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ার সেবায় বাড়ছে বিশৃঙ্খলা
- সুমনা শারমিন
- ০২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন মোড়ে জটলা পাকিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকছে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানির মোটরসাইকেল চালকরা। এসব মোটরসাইকেল চালকের কেউ অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ার আবার কেউ অ্যাপ ছাড়াই চুক্তিতে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকে। আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাপনাটি এমনিতেই বিশৃঙ্খলায় ভরা। তার মধ্যে এসব মোটরসাইকেল চালক নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। লিখেছেন সুমনা শারমিন
কারওয়ান বাজারের একুশে টেলিভিশনের নিচের মোড়টিতে সবসময় জটলা পাকিয়ে থাকে ২৫-৩০টি মোটরসাইকেল। কারওয়ান ছাড়াও বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারের নিচে শাহবাগ অভিমুখী মোড়টিতেও সবসময় জটলা পাকিয়ে থাকে অসংখ্য মোটরসাইকেল।
কারওয়ান বাজারে আর একটি জটলা দেখা যায় জাহাঙ্গীর টাওয়ার ও ব্যাংক এশিয়া ভবনের সামনে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেলের জটলা দেখা মিলে এসব মোড়ে। একই চিত্র চোখে পড়ে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী কিংবা শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ ঢাকা নগরীর প্রায় সবখানেই। ট্রাফিক মোড় বা রাস্তাকে অলিখিত স্ট্যাড কিংবা পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। দাড়িয়ে থাকা এসব মোটরসাইকেলের কোনোটি অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ার আবার কোনোটি অ্যাপ ছাড়াই চুক্তিতে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকে। যদিও সরকারের রাইডশেয়ার নীতিমালায় বলা আছে, কোনো রাইডশেয়ারিং মোটরযান যাত্রী সংগ্রহের উদ্দেশে নির্ধারিত স্ট্যান্ড বা অনুমোদিত পার্কিং স্থান ব্যতীত রাস্তার যেখানে সেখানে অপেক্ষায় থাকতে পারবে না। যাত্রী ওঠানামা ব্যতীত রাইডশেয়ারিং মোটরযানকে সবসময় চলমান থাকতে হবে। নীতিমালা না মেনে রাস্তায় ও মোড়ে যাত্রীর জন্য চালকদের এ অপেক্ষা ঢাকায় যানবাহন ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এলাকায় সিগনালাইজড ইন্টারসেকশন আছে প্রায় ৭০টি। এর বাইরে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য মোড়, যেগুলোয় দিনভর লেগে থাকে যানজট। মোড়গুলোর যানজটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল। যানজট-বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁঁকিও তৈরি করছে ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেল। আয়ের সহজ উৎস হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলেছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, এখন পর্যন্ত অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ার সেবায় নিবন্ধন করেছে এক লাখ ৮০৯টি মোটরসাইকেল। সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল রয়েছে সহজ রাইডের। প্রতিষ্ঠানটিতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩০ হাজার ৮২২। একইভাবে ওভাইতে ২৬ হাজার ১১০, পাঠাওয়ে ২০ হাজার, উবারে ১১ হাজার ৭৮৪, পিকমিতে সাত হাজার ৭০৭ ও চালাওয়ে নিবন্ধন আছে চার হাজার ৩৮৬টি মোটরসাইকেলের। তবে একজন চালক একই সাথে একাধিক কোম্পানিতে যুক্ত থাকায় অ্যাপে সেবা দেয়া মোটরসাইকেলের প্রকৃত সংখ্যা এর কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
রাইডশেয়ারে চলা বা রাইডশেয়ার বাদ দিয়ে ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলগুলোকে বাড়তি ঝামেলা বলে মন্তব্য করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি বলেন, আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাপনাটি এমনিতেই বিশৃঙ্খলায় ভরা। গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে ট্রাফিক মোড়গুলোর কার্যকারিতা কিন্তু অনেকটা কমে এসেছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল। এগুলো যেখানে যাত্রী পাওয়া যায়, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আর যাত্রী পাওয়ার সবচেয়ে ভালো জায়গা মোড়। মোড়ের ওপর মোটরসাইকেল দাঁড়ালে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তার প্রশস্ততা কমে যায়। মোড়গুলো চার রাস্তার ধারণক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এলোমেলোভাবে বাস দাঁড়ানোর কারণে মোড়গুলোর প্রশস্ততা যেমন কমে, তেমনি মোটরসাইকেলও মোড়ের একটা বড় অংশ দখলে নিচ্ছে। বাংলাদেশে রাইডশেয়ার বেশি দিন চালু হয়নি। এটা মাত্র আরম্ভ হয়েছে। মানুষের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এখনই এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। এখনো সময় আছে। প্রথম থেকে এসব বিষয় নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।