২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সরগরম ইফতারির বাজার

-

দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর অলিগলি, বড় সড়ক সবখানেই শুরু হয় ইফতারের হাঁকডাক। হোটেল-রেস্তোরাঁ, মসজিদ, বিপণি বিতানের আশপাশ, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার ফুটপাথসহ পুরো রাজধানী পরিণত হয় বড়ছোট ইফতারি বাজারে। প্রতিটি সড়কের পাশে শামিয়ানা টানিয়ে বসে ইফতারের পসরা। বিকেলের আগেই শুরু হয়ে যায় ভাজাভাজি। তপ্ত কড়াই থেকে ছেঁকে ছেঁকে তোলা হতে থাকে বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপিসহ নানা রকমের খাবার। পাশেই টেবিল পেতে চলে বিক্রি। রাজধানীজুড়ে দোকানের যেমন গোনাবাছা নেই, ক্রেতাও তেমনি অগুনিত। তবে এবারো রাজধানীর ইফতার বাজারের প্রধান আকর্ষণ সেই চকবাজার। দেড় শ’ বছরের পুরনো এই ইফতারি বাজারে দুপুরের পর থেকেই ক্রেতার সমাগম শুরু হয়। বিকেল ৪টার পর ভিড় উপচে পড়ে। চকবাজারের ইফতারি বাজারে দাম বেশি হলেও বাহারি সব খাবারের সন্ধান করেছেন ভোজনরসিকরা। আর বরাবরের মতো তাদের প্রধান গন্তব্য পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারি বাজার। চড়া দামেই বাহারি সব ইফতার কিনে ঘরে ফিরছেন তারা।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের রাস্তায় বরাবরের মতো যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বড় বাপের পোলায় খায়, সুতি কাবাব, রোস্ট, পায়া, কিমা, শাহী পরোটা, কিমা পরোটা, শাহী জিলাপিসহ শতাধিক পদ বিক্রি হয় এখানে। চকবাজারের ইফতারের সবচেয়ে হিট আইটেম হলো বড় বাপের পোলায় খায়। ডিম, গরুর মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, মুরগির গিলা-কলিজা, সুতি কাবাব, গোশতের কিমা, চিড়া, ডাবলি, বুটের ডাল, মিষ্টি কুমড়াসহ ১৫ পদের খাবারের সাথে ১৬ ধরনের মসলা মিশিয়ে ৩১ পদের মিশ্রণ দিয়ে এটি তৈরি হয়। এবার প্রতি কেজি বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। গত বছর এর দাম ছিল ৪৫০ টাকার মধ্যে। ঐতিহ্যবাহী হলেও সময়ে সাথে সাথে এর বিক্রি কমলেও উপকরণ ও মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
মসলাদার খাবারটির থেকে চোখ সরাতেই নজরে এলো শাহী জিলাপি। দুই কেজি ওজনের একাধিক শাহী জিলাপির পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকেই। এবার প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে এক পিস জিলাপির দাম নেয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। তবে ক্রেতারা চাইলে ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের জিলাপিও কিনতে পারবেন।
চকবাজারে গরুর সুতি কাবাব ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি, খাসির সুতি কাবাব ৮০০ থেকে ৮৫০, শামি কাবাব ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, টিক্কা কাবাব ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, চাপালি কাবাব ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। মুরগির রোস্ট প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২৫০ টাকায়। আস্ত মুরগি মোসাল্লামের পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। টানা পরোটা ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, খাসির গোশতের কিমা পরোটা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গরুর গোশতের কিমা পরোটা ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস এবং পাঁচ থেকে ১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, সমুচা প্রভৃতি।
সারাদিন রোজা রাখার ক্লান্তি নিমিষেই কেটে যায় দারুণ এক গ্লাস পানীয়তে। চকবাজারে তারও ব্যবস্থা রয়েছে। দুধ ও পেস্তা বাদামের শরবত বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লিটার দরে। লাবাং ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা লিটার। ফালুদা বড় বাক্স ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
এবার চকবাজারে ইফতার ও সেহরির খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি মনিটরিং টিমের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এই দলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রতিনিধিরা রয়েছেন। মেয়র জানিয়েছেন, এ দলগুলো নিশ্চিত করবেন যাতে কেউ ভেজাল, পচা-বাসি খাবার বিক্রি করতে না পারে। দাম বেশি নেয়া হচ্ছে কি না সেটিও দেখবে এই মনিটরিং কমিটি। পবিত্র রমজান মাসে কোনো ব্যবসায়ী ইফতার সামগ্রীসহ খাদ্যে ভেজাল দিলে বা পচা-বাসি খাবার বিক্রি করলে তাকে এবারের ঈদ কারাগারে কাটাতে হতে পারে। রাজধানীতে ভিড়ের বিচারে চকের পরই বেইলি রোডের অবস্থান। চকবাজারে ঐতিহ্য, আর বেইলি রোডে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
ইফতারে আভিজাত্য বেইলি রোডে
রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতারিতে রুচি আর আভিজাত্যের ছোঁয়া অনেক আগে থেকেই। দুপুর গড়ানোর পর থেকেই অভিজাত সব দোকানে হরেক রকম বাহারি সব পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অন্যান্যবার সড়কের দুই পাশ ও ফুটপাথ দখল করে ইফতারির দোকান বসলেও এবারের দৃশ্যটা কিছুটা ভিন্ন। রেস্তোরাঁগুলো এবার আর রাস্তায় বসেনি। দোকানের ভেতরে সাজানো হয়েছে ইফতারির পসরা। ফলে ফুটপাথ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছেন পথচারীরা।
রমজান মাসজুড়ে বেইলি রোড পরিণত হয় ইফতার বাজারে। রাজধানীর চকবাজের মতো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বেইলি রোডেও ইফতার সামগ্রী কিনতে আসেন। ইফতারের অন্যান্য সব কিছুর সাথে এখানে পাওয়া যাচ্ছে জালি কাবাব, ¯িপ্রং রোল, চিকেন কাটলেট, গ্রিল, রেশমি কাবাব, বিফ শিক, মাটন শিক, দেশি রোস্ট, পিস রোস্ট, খাসির লেগ রোস্ট, ঝালফ্রাই, গরুর চপ, গরুর কিমা, গরুর কলিজি, মগজ, খাসির চপ, হালিম, কিমা পরোটা, চিকেন শর্মা, পাটিসাপটা, কোপ্তা, জুসসহ হরেক ইফতারির সমাহার।
নবাবী ভোজ ও ঐতিহ্যবাহী ক্যাপিটাল ইফতার বাজারসহ অন্যান্য দোকানে স্পেশাল হালিম পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। চিকেন আস্ত রোস্ট ৫০০, মার্টন ভুনা ১২৫০, মার্টন লেগ রোস্ট প্রতি পিস ৫০০, চিকেন রেশমি কাবাব ২৪০, প্রতি কেজি গরুর কিমা ৫৫০, গরুর মগজ ৭০০, চিকেন ঝাল ফ্রাই ৫৫০, জাম্প রোস্ট ৪০০, খাশির রোস্ট ২৫০, দেশী মুরগি প্রতি পিস ২০০, গরুর সুতি কাবাব প্রতি কেজি ৬০০, চিকেন ললি ৫০, বিফমিনি কাবাব ৪০, চিকেন সিঙ্গারার স্টিক ৩০, প্রন বল ৫০ টাকা, এগচপ ১৫, আলু চপ প্রতিপিস ১০, বেগুনি ও পেঁয়াজু ১০ টাকা। এ ছাড়া ইফতারির বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নানা রকমের প্যাকেজ।
নবাবী ভোজের ব্যবস্থাপক দীপু আহমেদ বলেন, বেইলি রোডের ইফতার বাজার আধুনিকতার ছোঁয়ার পাশাপাশি আছে ঐতিহ্যবাহী এবং আভিজাত্যের ছোঁয়া। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইফতার কিনতে বেইলি রোডে আসে। রমজানের প্রথম দিন থেকেই ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকে।
মালিবাগ থেকে বেইলি রোডে ইফতার কিনতে এসেছেন রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেইলি রোডের ইফতার বাজার আগে থেকেই নামকরা। নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী এখানে পাওয়া যায়। যে কারণে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজনরসিক মানুষরা এখানে ইফতার কিনতে আসে।

 


আরো সংবাদ



premium cement