ফার্মগেট থেকে শাহবাগ ঢাকার যানজটের কেন্দ্রবিন্দু
- মাহমুদুল হাসান
- ০৭ মে ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীতে বসবাস করেন অথচ ফার্মগেট থেকে শাহবাগ সড়কে একবারও যান না এমন মানুষ খুবই কম। এক দশমিক দুই কিলোমিটারের ‘কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ’ সড়কটি ফার্মগেট থেকে সোজা চলে এসেছে কাওরানবাজার মোড়ে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত। দুই পাশ মিলিয়ে ছয় লেনের সড়কটিকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যানবাহনের চাপ সামলাতে হয়। রোজায় এই রাস্তায় যান চলাচল আরো বাড়বে। ফলে কারণে-অকারণে এই সড়কে যানজটে আটকে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে। এখন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় ব্যস্ত সড়কটি দুই পাশ থেকে সরু হয়ে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্ক ফোয়ারা অতিক্রম করত প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৮০০ প্রাইভেট কার। সে সময় যানজট কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির কাজের গতি বাড়ায় বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ শ’রও কম যানবাহন গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা অতিক্রম করতে পারছে। এ কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। সকাল ও বিকেলের পর এই সংখ্যা আরো কমে যায়। মেট্রোরেল প্রকল্পকে ঘিরে বিকল্প সড়কের পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ এলাকা। মেট্রোরেলের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর যানজট কমাতে বিকল্প সড়কগুলোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সবজি-ফলের আড়ত, চায়ের দোকান, অস্থায়ী হোটেল, কাপড় বিক্রি, কার পার্কিং, মিনিট্রাক স্ট্যান্ড ইত্যাদি কারণে বিকল্প সড়কগুলোর বড় অংশ দখল হয়ে আছে। আর দখলের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কাওরানবাজার। সংশ্লিষ্টদের ভাষায়, যত ঝামেলা আর বাধা কেবল কাওরানবাজারে।
শুধু কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ নয়, রাজধানীর যেদিক দিয়ে মেট্রোরেলের প্রকল্প এগোচ্ছে, সে দিকেই রাস্তা সরু হয়ে যানজট বাড়ছে। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ প্রশাসনের কাছে পরিচিত ‘ভিআইপি সড়ক’ হিসেবে। এসব ভিআইপি সড়কের ওপর যানবাহন চলাচলের চাপ কমাতে বিকল্প সড়কের দিকে নজর দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। যেসব সড়ককে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে, সেগুলোর বড় অংশ রয়েছে দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। বিকল্প সড়কে হকারদের দাপট বেশি। হকার ছাড়াও মিনিট্রাক স্ট্যান্ড, কার পার্কিং তো রয়েছেই।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৩৭৭টি পিয়ারের ওপর ৩৭৬টি স্প্যান বসে বিস্তৃত হবে ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল প্রকল্প। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ (সিপি)-৩, ৪, ৫, ৬ এই চারটি প্যাকেজে এর কাজ পুরোদমে চলছে। এর মধ্যে প্রথম ভাগে প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে রয়েছে আগারগাঁও পর্যন্ত। প্রকল্পের এই অংশের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে পারবেন বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে সিপি৫ ও ৬-এর কাজ শুরু হয়েছে। সিপি৫-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার রুট হবে।
এই রুটে তিনটি স্টেশন থাকবে। এই অংশে থাকবে ১০৬টি পিয়ার। এসব পিয়ার নির্মাণের জন্য আগারগাঁও থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কের অনেক অংশে বিভাজক তুলে বসানো হয়েছে কংক্রিটের বেষ্টনী। তাই ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার হয়ে একেবারে মতিঝিল পর্যন্ত আট লেনের সড়ক চার লেন হয়ে গেছে। এই চার লেনের সড়ক দিয়ে প্রায় দুই বছর যান চলাচল করবে। তবে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। কাওরানবাজারে সার্ক ফোয়ারার মোড়ে মিলেছে পাঁচটি সড়ক। পাঁচটি সড়কের এই মিলনস্থল থেকে যানবাহনের জট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য যান চলাচল সহজ করতে কাওরানবাজারে ফুটপাথ তুলে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে যানজট কমাতে এই উদ্যোগও কাজে আসছে না বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা।
আসন্ন বর্ষা মওসুম নিয়ে ভাবছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগ। জুন মাসে বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টি হলে কাওরানবাজার ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তখন ফার্মগেট থেকে সার্ক ফোয়ারা মোড় পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে যাবে পুরো রাজধানী ঢাকায়। অন্য দিকে সার্ক ফোয়ারার সামনে কাওরানবাজারে ফুটপাথ তুলে দেয়ায় সড়ক কিছুটা প্রশস্ত হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। রাস্তা পারাপারে এটি আরো প্রকট হয়ে গেছে। কারণ, এই চত্বর দিয়ে প্রতি মিনিটে শত শত পথচারী চলাচল করে। এখানে পদচারী-সেতু তৈরির কোনো উপায় বা সুযোগ নেই। আর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের কাওরানবাজারের দুই পাশের সড়কের মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টির পানিও দ্রুত সরবে না। হ