রাজধানীতে ত্রুটিপূর্ণ ভবন ৬ হাজার ৪০২টি
- আহমেদ ইফতেখার
- ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীতে ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য নকশা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ রাজউকেরই তৈরি ত্রুটিপূর্ণ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ভবনের তালিকা সংগ্রহ করেছে কমিশন। এসব ভবনের নির্মাণ সংক্রান্ত নথি ও ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তথ্যাদি আগে অনুসন্ধান করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভবনের তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, দুদকের কাছে রাজধানীর ত্রুটিপূর্ণ ছয় হাজার ৪০২টি ভবনের তালিকা আছে। তারা এ তালিকা ধরে অনুসন্ধানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০১৩ সালেই এসব ভবন নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে কাজ শুরু করেছিল দুদক।
গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আবার নড়েচড়ে বসেছে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ওই টাওয়ারটি বেআইনিভাবে পাঁচ তলা বাড়িয়ে ২৩ তলা পর্যন্ত করা হয়। ভবন নির্মাণে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বের করতে চায় দুদক।
পর্যালোচনায় দুদক দেখতে পায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০-১২ তলা, ৯ তলার অনুমোদন নিয়ে ১২-১৫ তলা, ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ২০-২২ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এই অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। অন্যান্য অনিয়মের মধ্যে রয়েছে নকশায় অনুমোদিত আয়তনের চেয়ে বড় আকারের বাড়ি নির্মাণ এবং রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়ার শর্ত ভঙ্গ। পাকা দেয়াল তুলে অথবা অন্যান্য কৌশলে বাড়িসংলগ্ন সরকারি জায়গা নিজেদের দখলে রাখা ও দুর্বল অবকাঠামোতেও অনেক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী, সড়ক ৮ ফুট ৩ ইঞ্চির বেশি চওড়া না হলে তার পাশে ভবন নির্মাণে অনুমতি দেয়া হয় না। অথচ ওই মাপের চেয়ে ছোট রাস্তার পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সারি সারি ভবন। রাজউক আওতাধীন এলাকার স্থাপনা নির্মাণে এ ধরনের ত্রুটি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত আছে। একশ্রেণীর বাড়ি মালিক রাজউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব অনিয়ম করে পার পেয়ে যান। রাজউকের মাঠপর্যায়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অর্থের বিনিময়ে তাদের সহায়তা করে।
রাজউক থেকে সংগ্রহ করা তালিকা পর্যালোচনা করে বেশ কিছু ভবনে অস্বাভাবিক নির্মাণ ত্রুটি পেয়েছে দুদক। এবার ওই সব ভবনের নথিপত্র ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেয়া হবে। রাজউকের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, গুলশান এভিনিউয়ে সাবেক এমপি আবদুল জব্বারের মালিকানাধীন জব্বার টাওয়ার ছয় তলার অনুমতি নিয়ে ২২ তলা এবং ডা: এইচ বি এম ইকবালের মালিকানাধীন ইকবাল টাওয়ার ছয় তলার অনুমতি নিয়ে ২০ তলা করা হয়েছে। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে ১২ তলাবিশিষ্ট তাহের টাওয়ার। রাজউকের তালিকায় ভবনটিকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে ছয় তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করেছে ইউনিয়ন প্রোপার্টিজ লিমিটেড। এ এইচ এম মোস্তফা কামাল ১৩ তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করেছেন ২০ তলা ভবন। এম এন এইচ বুলু ছয় তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করেছেন ২০ তলা ভবন। এ এলাকায় নোমান চৌধুরী ও মনিরুজ্জামান মিলুর মালিকানাধীন দু’টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে।
এ ছাড়া গুলশান এভিনিউয়ে শফিউর রহমানের ছয় তলা ভবন, গাজী নুরুল ইসলামের আট তলা ভবন, এসিউর প্রোপার্টিজের ৯ তলা ভবন, সালাহ উদ্দিন আহমেদের ছয় তলা ভবন, মো: মনিরুজ্জামানের ৯ তলা ভবন, আজিজুল হক ও নাজনীন হকের দু’টি ভবন কোনোরূপ অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ফার্মগেটের তেজকুনিপাড়ায় বাবুল টাওয়ার ছয় তলার অনুমোদন নিয়ে ১২ তলা করা হয়েছে। হ