এফ আর টাওয়ার এর আগুন নিয়ে আইইবি’র তদন্ত প্রতিবেদন
- ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এফ আর টাওয়ারটি পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে গত শনিবার বিশদ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) গঠিত তদন্ত কমিটি। এ প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করতে না পারলেও তা শর্ট সার্কিট, এয়ার কন্ডিশনার বা গ্যাসের লিকেজ থেকে হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে। আর তা ভবনটির অষ্টম তলার রান্নাঘর বা এর পাশে টাওয়ারের মাঝখানে অবস্থিত একটি ঘর থেকে ছড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কমিটির ইঞ্জিনিয়াররা। আর আগুন লাগার পর ওই ভবনে এত বিপুল হতাহতের মূল কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে ভবনটির ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণকে দায়ী করা হয়েছে। আর জরুরি বহির্গমন সিঁড়িটি এতই ত্রুটিপূর্ণ ছিল যে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই ধরনের একটি সিঁড়ি থাকা বা না থাকা একই কথা।’
ভবনটির প্রায় প্রতিটি তলায় ন্যাচারাল ভেন্টিলেশনের যথেষ্ট অভাব ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এফ আর টাওয়ারে কোনো অগ্নিনিরোধ দেয়াল ছিল না। ফলে উৎস যেখানেই হোক তা সব তলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে আগুন পুরো তলায় ছড়িয়ে পড়তে বেশ কিছুটা সময় লাগার কথা। তবে অতি স্বল্পতর সময়ে পুরো অষ্টম তলায় ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যা সবাইকে জরুরি বহির্গমন করতে বাধ্য করে। তবে যাওয়ার সময় সম্ভবত অষ্টম তলার অফিসের দরজা বন্ধ না করে সবাই বের হয়ে যায়। ফলে সামনের সিঁড়িঘর হয়ে যায় ধোঁয়া বহির্গমনের একমাত্র পথ যা ওপর তলায় অবস্থিত সবার বের হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এমনকি নবম ও ১০ম তলার মানুষজনও সিঁড়িঘর দিয়ে নামতে পারেনি। ২৬ জনের অনেকের মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে এবং অক্সিজেনের অভাবে। আগুন অষ্টম তলা থেকে নবম ও দশম তলায় ছড়িয়ে পড়তে বেশ সময় লেগেছে। ফ্লোরগুলোতে আগুন ছড়ানোর পথ ছিল দু’টি। প্রথম পথটি ছিল উত্তর ও দক্ষিণের প্রশস্ত গ্লাস প্যানেল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার দ্বিতীয় পথটি ছিল অষ্টম তলার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের ফলস সিলিং এর ওপরে থাকা টয়লেটের পিভিসি পাইপ। নিচে অতিরিক্ত আগুন ও তাপে পিভিসি পাইপ গলে ওপর তলার টয়লেট ও রান্নাঘরকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আগুন নবম তলায় দক্ষিণ পাশে ছড়িয়ে পড়ে। নবম তলার উত্তর পাশে এবং দশম তলায় আগুন ক্ষতিগ্রস্ত গ্লাসের সাইড থেকে প্রবেশ করে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অষ্টম, নবম এবং দশম তলার গ্লাস প্যানেল গরম থাকায় তা যখন অগ্নি নির্বাপণে ব্যবহৃত ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে আসে তখন সহজেই ভেঙে যায়। ভবনটির নকশা প্রণয়নে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।