জারের পানিতে ডায়রিয়া-কলেরার জীবাণু
- মাহমুদুল হাসান
- ১২ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
অধিকাংশ মানুষ এখন পারতপক্ষে অনিরাপদ পানি পান করেন না। কারণ এই পানিই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যা কমবেশি সবাই জানে। অনেকেই বাড়তি অর্থ ব্যয় করে বোতলজাত বা জারের পানি পান করছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার কারণেই রাজধানীর সাধারণ চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস-আদালতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ হয় জারভর্তি পানি। রাজধানী ঢাকায় এখন গড়ে উঠেছে পানির রমরমা বাণিজ্য।
অনিরাপদ পানি পানের কারণে প্রাদুর্ভাব ঘটছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগের।
দেশে প্রতি বছর ডায়রিয়ার কারণে এক লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এ অবস্থায় নিরাপদ পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। এর সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অফিস, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান ও রাস্তার পাশের দোকানে জারের পানি সরবরাহ করছে, যা বেশির ভাগই অনিরাপদ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীর চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস-আদালতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ করা জারভর্তি পানিতে রয়েছে ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত জারের পানির নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোর বেশির ভাগেই উচ্চমাত্রায় কলিফর্মের (ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু) উপস্থিতি শনাক্ত করেছে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি।
জারের পানিতে কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু থাকলেও দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এ নিয়ে দীর্ঘ দিন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় নড়েচড়ে বসে বিএসটিআই। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। এর মধ্যে কয়েকটিতে কলিফর্মের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল ও সাতটির সনদ স্থগিত করে বিএসটিআই।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, ভাসানটেক, পল্টন, বিমানবন্দর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর, যাত্রাবাড়ী, কাফরুল, রমনা ও লালবাগ থানার ২৬টি অফিসপাড়া ও জনবহুল স্থানের রাস্তার পাশ থেকে জারের পানির ৮০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অভিজ্ঞ স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের সংগৃহীত এসব নমুনা পাবলিক হেলথ ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ৪৪টি নমুনাতেই কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে। আটটি নমুনায় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম (মলমূত্রের সাথে ছড়ানো কলিফর্ম) উভয়েরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ওই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফুড রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক লতিফুল বারী। কলিফর্ম ছাড়াও এসব জারের পানি আরো নানাভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, জারের পানি দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার কারণে তা গরম হয়। ওই গরমে প্লাস্টিকের উপাদানগুলো পানিতে মিশে যায়। এসব পানি পান করলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে, সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব জারের পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। এ কারণে এগুলোয় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের পটভূমিতে বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অধিক জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহরে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ২৫০টি জারের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল। সে সময়ও এসব নমুনায় উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফুড সেফটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বেলাল হায়দার বলেন, উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম থাকলে পানিবাহিত ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা রোগ হতে পারে। আর ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতিতে পানি পানযোগ্যই থাকবে না।