২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পুরান ঢাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন

-

অগ্নিকাণ্ড ও ভবনধস থেকে পরিত্রাণ পেতে আরবান ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট (ভূমি পুনঃউন্নয়ন) পদ্ধতির মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে বদলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সাথে অনেক মতবিনিময়ও হয়েছে। রাজউক তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিল, সিঙ্গাপুর-জাপান-কোরিয়াসহ উন্নত অনেক দেশ এভাবেই ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিকভাবে সজ্জিত করেছে। এলাকাবাসীর অনীহা আর রাজউকের দুর্বলচিত্তের কারণে ভেস্তে গেছে পুরান ঢাকার ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কার্যক্রম। ফলে পুরান ঢাকায় এখনো ঘিঞ্জি, সরু রাস্তাঘাট আগের মতোই বিদ্যমান। যেকোনো দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ঘটে চলেছে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
নগর পরিকল্পনাবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার মাহমুদ বলেন, ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের শর্ত হলো, যারা জমির মালিক তাদের মধ্যে একজন আপত্তি করলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। রাজউক পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে অনেকেই মনে করেছেন, উন্নয়নের দায়িত্ব রাজউকের হাতে ছেড়ে দিলে ওই জমিই হয়তো ভবিষ্যতে ফেরত পাবেন না তারা। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় অনেক জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা আছে। এসব জমি যাদের দখলে আছে, তারা মনে করেছেন রিডেভেলপমেন্ট হলে দখল ফিরে পাবেন না। এ জন্যই এলাকাবাসী বাধা দিয়েছেন। কিন্তু পুরান ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হলে ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের কোনো বিকল্প নেই। গত বুধবার রাতে চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে হতাহতের ঘটনার পর পুনঃউন্নয়নের এ আলোচনা আবার সামনে এসেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, রাজউক ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্টের যে আইডিয়া নিয়ে আমার কাছে এসেছিল সেটা খুবই ভালো আইডিয়া। সিঙ্গাপুর ও জাপান এভাবে পরিকল্পিত নগরায়ন ঘটিয়েছে। আমার দায়িত্ব ছিল মধ্যস্থতাকারীর। কিন্তু পুরান ঢাকার হোল্ডিং মালিকদের যখন ডাকলাম তারা অনাগ্রহ দেখাল। কারণ পুরান ঢাকায় ঘরবাড়ি যখন হয়েছে, তখন রাজউক ছিল না। বাংলাদেশও হয়নি। বংশপরম্পরায় তাদের জমির বণ্টননামা নিয়েও ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেছে, এই জমি রাজউককে ডেভেলপের জন্য দিলে তারা ঠিকমতো বুঝিয়ে দেবে কি না বা যাদের জমি নিয়ে বণ্টননামার জটিলতা রয়েছে তারা ফেরত পাবে কি না। এমনকি তিন বছর যে ডেভেলপের জন্য লাগবেÑ এ সময়টা তারা কোথায় থাকবে। অনেকে তো ওই অবকাঠামোর আয়ের ওপরই বেঁচে থাকে। এ রকম নানা জটিলতার জন্য তারা আপত্তি দিয়েছিল।
ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায়নি। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট করলে রাস্তাও প্রশস্ত হতো, আগুন নেভানোর পানিও পাওয়া যেত। অ্যাম্বুলেন্সও দাঁড়াতে পারত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট ফর্মুলা অত্যন্ত ইতিবাচক। এ ফর্মুলা প্রয়োগ করে বিশ্বের অনেক ঘিঞ্জি শহর ভেঙে আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। তবে এ কাজ করতে গেলে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণ এগিয়ে এলে অনেক সহজেই এ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করা যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ল্যান্ড রিডেভেলপমেন্ট ফর্মুলার মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক ঘিঞ্জি শহরকে আধুনিক ও বাসযোগ্য শহরে রূপান্তর করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্তরা জানান, ঘিঞ্জি এলাকার একেকটি এলাকা নিয়ে একটি ব্লক তৈরি করা হয়। সেই ব্লক ধরে পরিকল্পনা করে বহুতল ভবন তৈরি হয়। এসব ভবনে থাকবে আধুনিক নাগরিক সুবিধা।


আরো সংবাদ



premium cement