২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তিল ধারণের ঠাঁই নেই বাণিজ্যমেলায়

-

আর কয়েকদিন পরেই শেষ হচ্ছে বাণিজ্যমেলা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেলার গেটের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। সোমবার দুপুরে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর। বেলা বৃদ্ধির সাথে বাড়ে দর্শনার্থীদের স্রোত। ক্রেতাদের আকর্ষণে বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন বিক্রেতারা। ছাড় পেয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। এতে খুশি বিক্রেতারাও। সন্ধ্যার দিকেই মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে। টিকিট কাটার অপেক্ষায় থাকে অনেক মানুষ। সন্ধ্যায় মেলায় ঢুকে পা ফেলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ল। মেলার কোথাও বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। দর্শনার্থীদের ঢলে আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর অঞ্চলের সব রাস্তায় তীব্র যানজট ছিল। অনেকে যানজট ঠেলে মেলার সামনে আসতে পারলেও, পার্কিংয়ে গাড়ির জায়গা হয়নি।
মেলায় দর্শনার্থীদের বেশি আগ্রহ গৃহস্থালি পণ্যের প্রতি। মেলায় প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালির পাশাপাশি রয়েছে প্রেসার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার, ওভেন, রাইস কুকার, ইস্ত্রি, ইন্ডাকশন চুলা, ফ্যানসহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক পণ্য। ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন ছাড়ের পাশাপাশি নানা উপহার। মেলায় ক্রেতাদের জন্য বিশাল ছাড় ও অফার নিয়ে এসেছে দেশের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্র্যান্ড ভিশন। মেলায় ক্রেতারা ভিশন পণ্য কিনলেই পাচ্ছেন সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।
মেলায় সনি-র্যাংগস প্যাভিলিয়নে পণ্য কিনলেই মিলছে হীরার পণ্য পাওয়ার সুযোগ। এ প্রমোশনের অধীনে টিভি, ফ্রিজ, ডিপফ্রিজ, এসি, ওভেন কিনলেই উপহার হিসেবে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের অর্নামেন্টস-ডায়মন্ডের নোসপিন, ফিঙ্গার রিং, কানের দুল, লকেট ও নেকলেস সেটের আজীবন ওয়ারেন্টি।
মেলায় তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ব্লেজার। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে মেলায় বাহারি স্যুট, কোট-ব্লেজার এনেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নানা অফারে ১৩ শ’ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রঙ ও সাইজের ব্লেজার। যদিও এবার ঢাকায় তুলনামূলক শীত কম থাকায় ব্লেজারের চাহিদা একটু কম। তবে সব সময় মেলায় শেষ দিকে ব্লেজার বেশি বিক্রি হয়। এবার শেষ সময়ের বিক্রি বাড়বে বলে জানান এক বিক্রেতা।
মেলায় নতুন ও আকর্ষণীয় হলো অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার দোকান। সেখানে হরেক জিনিসপত্র যেমন : ওয়ারড্রব, বুকশেলফ, ফুলদানি, টেবিল ইত্যাদি আছে। এবার মেলায় ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিকস, সিরামিক ও গৃহস্থালি পণ্যের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোয় বেচা কেনা হচ্ছে বেশি। অনেকেই আবার মেলায় আসছেন বিভিন্ন কোম্পানির নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে। কেউ আসছেন, বিশেষ মূল্য ছাড়ে কেনাকাটা করতে। এ ছাড়া দেশী-বিদেশী তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য, ফার্নিচার, শৌখিন পণ্যের প্রায় সব স্টল-প্যাভিলিয়নেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রিক পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে ওয়ালটন, মিনিস্টার-মাইওয়ান, যমুনা ইলেকট্রনিকস, শার্প ইত্যাদি।
এবারের বাণিজ্যমেলায় অলটাইমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজ ‘অলটাইম জাম্বু’। সাত ধরনের আইটেম নিয়ে তৈরি এ প্যাকেজের মধ্যে থাকা পণ্যের আসল দাম ৭২০ টাকা। তবে মেলা থেকে কিনতে ক্রেতাদের খরচ হবে ৫০০ টাকা।
মেলায় ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় আসি প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য কেনার জন্য। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কালেকশনও বেশি। সব ধরনের পণ্য এখানে পাওয়া যায়। তাই দেখে পছন্দমতো পণ্য কিনতে পারি। এ ছাড়া মেলায় অনেক ছাড় ও অফারও থাকে।
পুরান ঢাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম তার পরিবারসহ মেলায় আসেন। তিনি জানান, যানজট ঠেলে মেলায় ঢুকতে অনেক কষ্ট হয়েছে। মেলার টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লেগেছে। মেলায় ঢুকে দেখি বেশির ভাগ এলাকা দর্শনার্থীতে ভরে গেছে। একজন আর একজনের সাথে ঠেলাঠেলি ছাড়া মেলায় হাঁটা যাচ্ছে না।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় নান্না ও হাজীর বিরিয়ানি নাম ব্যবহার করে একাধিক স্টল খাবারের ব্যবসা করছে। এর মধ্যে একটি স্টলের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা হয়েছে হাজীর বিরিয়ানি। এ নামের আগে ছোট করে লেখা রয়েছে ‘অরিজিনাল’। আরেকটি স্টলের সামনে সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা হাজীর বিরিয়ানি ও কাবাব হাউজ। তার পাশেই একটি স্টল বড় সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছে নান্না বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ।
অবাক করার বিষয় হলো, হাজীর বিরিয়ানি নাম ব্যবহার হলেও এর একটিও পুরান ঢাকার নামকরা আসল ‘হাজির বিরিয়ানি’ নয়। একই রকম যে স্টলটি নান্না বিরিয়ানি লিখে রেখেছে সেটিও পুরান ঢাকার নামকরা ‘নান্না বিরিয়ানি’ নয়। মূলত নামকরা হাজীর ও নান্না বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নিতেই এ কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা।
এ দিকে পুরান ঢাকার নামকরা দু’টি বিরিয়ানি হাউজের নাম ব্যবহার করে ব্যবসা করলেও খাবারের দামের ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তার ফারাক। পুরান ঢাকার বিরিয়ানি হাউজ দু’টিতে খাবারের যে দাম রাখা হয়, বাণিজ্যমেলার বিরিয়ানির স্টলগুলোতে তার প্রায় দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে। এক প্লেট (ফুল) মাটন কাচ্চির দাম ৩৫০ টাকা, আর হাফ নিলে ২০০ টাকা। চিকেন বিরিয়ানির দাম এক প্লেট (ফুল) ৩২০ টাকা, আর হাফ ১৮০ টাকা। এ ছাড়া, পাওয়া যাবে ১০০ টাকা প্লেট চটপটি এবং ১২০ টাকা প্লেট সকা।
এ বিষয়ে মেলায় দায়িত্ব পালন করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতের এক কর্মকর্তা বলেন, ভোক্তার অধিকার ক্ষুণœ হলে যে কেউ, যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ পেলে ক্ষতিয়ে দেখব। প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেলা কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ ছাড়া যেকোনো ধরনের দোকানপাট মেলায় নিষিদ্ধ। কিন্তু বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা মেলে, অলঙ্কার, খাবার, খেলনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন হকাররা। মেলায় হকারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দাবি, তারা নিয়মিত হকারদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছেন।
গত ৯ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলা শুরু হয়। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে মাসব্যাপী এ বাণিজ্যমেলা। মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল রয়েছে ৪১২টি। বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২ প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে।
এবারই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যমেলার প্রবেশ টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন আয়োজকেরা। এ জন্য দর্শণার্থীদের প্রতিটি টিকিটের জন্য নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দুই টাকা দিতে হবে। মোবাইল অ্যাপ, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে মেলার প্রবেশ টিকিট কেনা যাবে। এ বছর মেলায় ঘুরতে আসা দর্শণার্থীদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখছে কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement