ঢাকা মেডিক্যালে ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার উদ্বোধন
- সুমনা শারমিন
- ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
এক ছাতার নিচে জরুরি সব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত রোববার থেকে চালু হয়েছে ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার। সেবাটি চালু হলে দুর্ঘটনায় আহত রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসবে বলে আশা করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৬ জানুয়ারি ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, জরুরি বিভাগে নতুন সেবা চালু করা হয়েছে; যাতে দ্রুত মুমূর্ষু রোগীরা চিকিৎসা পায়। সারা দেশ থেকে অনেক সড়ক দুর্ঘটনাসহ অনেক মুমূর্ষ রোগীরা জরুরি বিভাগে আসে। তাদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হলে অনেকেই বেঁচে যাবে। কিছু দিন আগেও রোগীরা টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়ে হাসপাতাল ভেতরে কিছুটা দূরে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত। এখন সেটা করতে হবে না। জরুরি বিভাগেই এই সেবা পাবে। এমন হাসপাতাল চাই না যেখানে চিকিৎসক পাওয়া যাবে না, ওষুধ পাওয়া যাবে না। কোনো রোগীকে যেন বলতে না হয় মেশিন নষ্টের কারণে চিকিৎসা হয়নি; যে কারণে জরুরি বিভাগ খোলা হয়েছে সেটি যেন ব্যাহত না হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসির উদ্দিন বলেন, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয়। এই রোগীর জন্য দু’জন মেডিক্যাল অফিসার ও চারজন ক্যাজুয়ালটি চিকিৎসকদের পক্ষে চিকিৎসা সেবাদান করা কষ্টসাধ্য ছিল। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি বিভাগের সক্ষমতা ও চিকিৎসা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘ দিন ধরে অনুভূতি হচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বিভাগে মুমুর্ষূ রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জরুরি বিভাগে ১৫ শয্যার একটি আধুনিক ও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখানে ৪টি আইসিইউ বেড, ৬টি এইচডিইউ বেড, ৫টি বিশেষ অবজারভেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কেন্দ্রটির নাম ওয়ার স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার নাম দেয়া হয়েছে। এখানে থাকবে পাঁচটি মাইনর অস্ত্রোপচার কক্ষ, ইসিজি কক্ষ, নেবুলাইজেশন, কার্ডিয়াক মনিটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।
গাইনি অ্যান্ড অবস্, শিশু রোগীদের জন্য কনসালটেশন কক্ষ, নিউরোসার্জারি ও হেড ইনজুরিসহ বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল রোগীদের জন্য জেনারেল সার্জানি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য কেমিকেল দূষণজনিত রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য একটি ডিকন্টামিনেশন কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে রোগীদের জন্য দ্রুত রোগ নিরূপণের জন্য সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ একটি মিনি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে যেকোনো মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত রোগ নিরূপণ করে চিকিৎসা সেবাদান করা সম্ভব হবে বলে জানান পরিচালক নাসির উদ্দিন।
সহিংসতা, সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনোভাবে আহত এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল ঢামেক হাসপাতাল। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার রোগী হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়। এখানে দিনে প্রায় ২০০ জন রোগীর জরুরি অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এত বেশি রোগীর চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মূলত এ কাজটি সহজ করতেই ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার চালু করা হয়েছে। ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে আগত রোগীদের লাল, কমলা, হলুদ ও সবুজ রঙে চিহ্নিত করে সেবা দেয়া হবে। অতি জরুরি বা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের লাল রঙে চিহ্নিত করা হবে। এরপর জরুরি বা মারাত্মক আহতদের কমলা রঙ, আঘাত মারাত্মক কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা সম্ভব এমন রোগীদের হলুদ এবং অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক রোগীদের সবুজ রঙে চিহ্নিত করা হবে।
ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ডা: আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগত রোগীদের প্রথমে ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার (ইএমও) রিসিভ করবেন। এরপর রোগীকে ট্রিয়াজ কর্নারে পাঠানো হবে। সেখানে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী রঙ চিহ্নিত করা হবে। পরে তাকে দ্বিতীয় দফায় ট্রিয়াজ করা হবে। পরে অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা শুরুর পর তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওয়ার্ডে পাঠানো হবে।
ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে অর্থোপেডিক্স, নিউরোলজি ও নিউরো সার্জারি, হৃদরোগ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ এবং শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি বিভাগে একজন করে কনসালট্যান্ট নিয়োজিত থাকবেন। তাদের তত্ত্বাবধানে সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ওটি বয় ও অন্যান্য লোকবল নিয়োজিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব মো: আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: খান আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই।