রাজধানীতে জনপ্রিয় হচ্ছে বাইসাইকেল
- সুমনা শারমিন
- ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সকাল ৯টার অফিস ধরার জন্য আগে সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হতাম। বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করতাম বাসের জন্য। কষ্টে বাসে উঠতে পারলেও পড়তে হতো যানজটে। সন্ধ্যায় আবার বাসায় ফেরার সময় ভিড় ঢেলে বাসে ওঠা। এখন ভাবলে একটু অবাকই লাগে। কারণ ঢাকার যানজট থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে সাইকেল। ছয় মাস ধরে রামপুরা থেকে কাকরাইলে এসে অফিস করছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী রুপা ইসলাম। তিনি এভাবেই ঢাকার রাস্তায় সাইকেল ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তার কাছে সাইকেল ভোগান্তি এড়ানোর বাহন। রুপা ইসলাম জানান, আগে রামপুরার বাসা থেকে কাকরাইলের অফিসে যেতে এক ঘণ্টা লাগত; এখন মাত্র ৩০ মিনিটে অফিসে যেতে পারছেন।
রুপার মতো এখন রাজধানীতে অনেকেই যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বাইসাইকেল। ঢাকার যানজট এড়াতে তাদের কাছে সাইকেল হয়ে উঠছে বিকল্প যান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক সংগঠন বিডি সাইক্লিস্টের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকায় যাতায়াতের জন্য লক্ষাধিক মানুষ সাইকেল ব্যবহার করেন।
পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইকেলকে গুরুত্ব দেয়া হয়। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, লক্কড়ঝক্কর যানবাহনের চেয়ে ঢাকার রাস্তায় সাইকেল হতে পারে যানজট নিরসন ও সময় বাঁচানোর ‘স্মার্ট’ সমাধান।
ঢাকার রাস্তায় বাইসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাবিল মাহমুদ বলেন, সাইকেল নিয়ে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। গন্তব্যেও পৌঁছানো যায় নির্ধারিত সময়ে। বাস, অটোরিকশা কিংবা লেগুনার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষির ঝামেলা নেই। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে ইচ্ছা হলে কোথাও নেমে প্রয়োজনীয় কাজও সেরে নেয়া যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরের সড়ক করা হয় গণপরিবহন, পথচারী ও মোটরসাইকেল অথবা সাইকেলের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু ঢাকায় শুধু গণপরিবহন হিসেবে বাস আর পথচারীর কথা চিন্তা করে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো পরিবহনের কথা ভাবা আগেও হয়নি, এখনো হচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে যখন বিকল্প বাহনের প্রসঙ্গ এসেছে, তখন সংশ্লিষ্টদের উচিত নতুন ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠা এলাকাগুলোতে এ সুবিধার কথা মাথায় রাখা।
২০১০ সাল থেকে রাজধানীর সড়কে সাইকেল লেনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো লেন চালু হয়নি, নেই সাইকেল পার্ক করার ব্যবস্থাও।
ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশান, বনানী ও মিরপুরের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার (মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড) থেকে ডিওএইচএস পর্যন্ত সাইকেল লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে। উত্তরার একটি পার্কে সাইকেল লেন বানানো হয়েছে, আরো তিনটি পার্কে লেন তৈরির কাজ চলছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এমন কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কয়েকটি সড়কে দেশী-বিদেশী অর্থায়নে সাইকেল লেন করার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে মাইকেল ব্লুমবার্গ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গুলশান ও বনানীতে সাইকেল লেন করা হবে।