২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উগান্ডায় পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নের অভিনব প্রয়াস

উগান্ডায় পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নের অভিনব প্রয়াস - সংগৃহীত

প্লাস্টিক আবর্জনা রিসাইক্লিং, সৌরশক্তির ব্যবহার এবং মেয়েদের স্কুলশিক্ষায় উৎসাহ। একই সাথে তিনটি সমস্যার সহজ সমাধান করে দেখাচ্ছেন উগান্ডার এক উদ্যোক্তা। সেই সাথে নারীদের কর্মসংস্থানও করছেন তিনি।

শালোম খাইয়িনজা ও লিলিয়ান অ্যামনজিনের অপেক্ষায় অনেকেই বসে থাকেন। তবে প্রতিবেশী বা আত্মীয় হিসেবে নয়, এই দুই তরুণী গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে বাসায় আসেন। এই দুই সোলার টেকনিশিয়ান কিছুকাল আগে সেখানে সোলার মডিইউল বসিয়েছেন। সম্ভবত অনিয়মিত বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে আলোর বাতি জ্বলছে-নিভছে। তাদের সেই সমস্যার উৎস সন্ধান করতে হবে। এই কাজ তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে তুলছে।

লিলিয়ান বলেন, ‘সিস্টেম বসানোর মতো কিছু কাজ করে সামান্য উপার্জন করেছি। আমরা পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়া সত্যি বন্ধ করতে পেরেছি। পরিবেশে আর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন হচ্ছে না। ফলে আমাদের সবার উপকার হয়েছে।’

সুসান নাতুম্বওয়ে অন্যভাবে হলেও সৌরশক্তির কারণে উপকৃত হচ্ছেন। ১৫ বছর বয়সী এই স্কুলশিক্ষার্থীর পিঠের ব্যাকপ্যাকের মধ্যে এক মিনি সোলার প্যানেল বসানো আছে। সেটি দিয়ে একটি বাতি চার্জ করে সে রাতেও পড়াশোনা করতে পারে। সেই বাতি আবার তার বাবার মোবাইল ফোনও চার্জ করে।

সুসান বলে, ‘এই সোলার ব্যাগের কল্যাণে আমি রাতেও বই পড়তে পারি। যেমনটা দেখছেন, আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এর ফলে আমার পড়াশোনারও উন্নতি হয়েছে। আমি পরীক্ষায় পাশ করব।’

সৌরশক্তি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার জন্য এই তিন তরুণী জামিলা মায়াঞ্জার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় তিনি সামাজিক উদ্যোগপতি হিসেবে সক্রিয়। তার কর্মীরা রাস্তার পাশে প্লাস্টিক ব্যাগের সন্ধান করলে তিনিও সেই কাজে হাত লাগান। কারণ সোলার ব্যাকপ্যাকও পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি।

কাম্পালায় আবর্জনা এক বড় সমস্যা। স্মার্ট গার্লস ফাউন্ডেশন উগান্ডার প্রতিনিধি জামিলা মায়াঞ্জা বলেন, ‘এই প্লাস্টিক ব্যবহার ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। পানির প্রণালীতে ফেলে দেয়ার বদলে আবর্জনার পুনর্ব্যবহার যে সহজ, আমরা তা দেখাতে চাইছি।’

পরিষ্কার করার পর প্লাস্টিক ব্যাগগুলোকে সোলার ব্যাকপ্যাকে রূপান্তরিত করা হয়। বাইরের অংশে আকর্ষণীয় পানি প্রতিরোধী উপাদান বসানো হয়।

জামিলার ফাউন্ডেশন প্রায় ২০ জন নারীর কর্মসংস্থান করছে। তারা প্রতিটি ব্যাকপ্যাকের জন্য প্রায় পাঁচ ডলার পারিশ্রমিক পান। কয়েকটি ব্যাকপ্যাক ২০ ডলারের বেশি মূল্যেও বিক্রি করা হয়। তবে শুধু দরিদ্র নারী ও মেয়েরা বিনামূল্যে সেটি পেতে পারেন। ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি ব্যাকপ্যাক বিক্রি বা দান করা হয়েছে।

কিশোরীরা এমন ব্যাকপ্যাকের সাহায্যে অগোচরে স্যানিটারি প্যাডের মতো উপকরণও স্কুলে আনতে পারছে। সেটা সম্ভব না হলে তাদের মধ্যে অনেককেই পিরিয়েডের সময়ে পড়াশোনার ক্ষতি করে বাসায় থাকতে হতো।

জামিলা মনে করেন, ‘মেনস্ট্রুয়েশন পিরিয়ডের সময়েও স্কুলে থাকা যে স্বাভাবিক, আমাদের সেটা দেখানো জরুরি ছিল। এই ব্যাগ সেই সুবিধা করে দিয়েছে। ফলে স্কুলে তারা আরো ভালো ফল করছে। তাই এই ব্যাগ মেয়েদের স্কুলে রেখে তাদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছে।’

স্কুলের পর সুসানকে প্রায়ই বাসায় কিছু কাজ করতে হয়। অন্ধকার হলেই সে পড়াশোনার অনুমতি পায়। সৌরবাতি ছাড়া সেটা সম্ভবই হতো না। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে তার ব্যাকপ্যাকে বসানো সৌরবাতি আবার চার্জ হয়ে যায়।

বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের শিক্ষকের মতে, সুসানের পড়াশোনার উন্নতি হয়েছে। সোলার ব্যাকপ্যাক যে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের ব্যবহারিক ও সহজ দৃষ্টান্ত, সে বিষয়ে তিনি সন্তুষ্ট।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement