২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রাচীন জুলু শিল্পকলার পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার নারী

প্রাচীন জুলু শিল্পকলার পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার নারী - সংগৃহীত

শহুরে জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য যে ফিকে হয়ে যায়, বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এক নারী সেই ঐতিহ্য নতুন করে প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় করে তুলছেন।

এনগুনি উপজাতির নারীরা বিখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকির জন্য এক ট্যাপেস্ট্রি সৃষ্টি করেছেন, সেই খবর ক’জন জানে?

এনগুনিরা কাচের পুঁতি তৈরির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার এবং বাইরের প্রভাব দূরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ডিজাইনার হিসেবে এমবালি এমথেথওয়া মনে করেন, ‘মানুষ পাশ্চাত্যের মতো উপার্জনের চেষ্টা করছে। আমরা ঐতিহ্যের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে পরিচিতি বাড়িয়ে তুলছি।’

এমবালি নিজের এনগুনি সংস্কৃতির চিরায়ত পুঁতি তৈরির কাজে আগ্রহী। কিন্তু তিনি কেন কাচের পুঁতি তৈরির শিল্প পুনর্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? কেনই বা তিনি বড় ট্যাপেস্ট্রির জমি হিসেবে সেই পুঁতি ব্যবহার করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি শহুরে পরিবেশে বড় হয়েছি। আমি মিশ্র জাতির স্কুলে পড়েছি। হাইস্কুল শেষ করার পর নিজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে খুব বিচ্ছিন্ন বোধ করছিলাম। নিজেকে খোঁজার, শহুরে ও পাশ্চাত্যের জীবনধারায় অভ্যস্ত জুলু নারী হিসেবে নিজের পরিচয় বোঝার পথ খুঁজছিলাম। গবেষণার সময়ে আমি পুঁতির কাহিনির সংস্পর্শে এলাম। সেই পুঁতি কিভাবে, কোথা থেকে এসে আমাদের পরিচ্ছদের সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত হয়েছে, সেই কাহিনি নিজের পরিচয় খোঁজার একটা পথ। অন্যদের লেখা আমাদের ইতিহাস ও নথিপত্র আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি না। কারণ সেগুলো খুবই পক্ষপাতদুষ্ট। তারা ভাবত, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ আসলে আদিম। তাই কোনো এক বস্তুর মধ্যে আসল কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে। সেই বস্তু, সেই পুঁতি জুলু সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু উন্মোচন করে।’

সোয়েটোর শাপা স্টেডিয়ামে যে বিশাল মাপের ট্যাপেস্ট্রি শোভা পাচ্ছে, সেটি সৃষ্টি করতে এমবালিকে এক টিম গড়ে তুলতে হয়েছিল। তার ডিজাইনকে বাস্তব রূপ দিতে অনেক মানুষ সেই কঠিন কাজ করেছেন। সেই এনগুনি কারিগরদের সাথে তার সম্পর্ক কেমন ছিল?

এমবালি এমথেথওয়া বলেন, ‘আমি ইন্টারনেট ঘেঁটে অনেক গবেষণা চালিয়ে জানার চেষ্টা করছিলাম, আদৌ কোনো সংগঠন পুঁতির কাজ করে কিনা। সৌভাগ্যবশত আমি সিয়াসিজা ট্রাস্ট নামের এক এনজিওর সন্ধান পেলাম। তারা অনেক গোষ্ঠী ও কারিগরের সাথে কাজ করে। প্রথম দিকে আমি কয়েকজন নারী, পুরানো প্রজন্মের গোগোদের দেখা পেলাম। তারপর কাজ শুরু করার পর সেই সব সম্প্রদায়ের মাঝে গিয়ে কথা বলে বুঝতে পারলাম যে আসলে তরুণ প্রজন্মের অনেক মানুষও সেই কাজ জানে। কিন্তু উপার্জনের তাগিদে তাদের অন্য কাজ করতে হয়। আমার মতে, তাদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।’

প্রাচীন এনগুনি শিল্পকলার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এমবালি ও তার টিম সেই ধারা বাঁচিয়ে রাখতে লাগাতার পরিশ্রম করে চলেছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement