লিবিয়ায় দুই প্রধানমন্ত্রী, দাবিবাহর প্রতিই সমর্থন জাতিসঙ্ঘের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:২৬
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় তবরুকের পার্লামেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের সদস্যরা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতহি বাশআগাকে নির্বাচিত করে।
তবে জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখনো আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকেই সমর্থন করবে সংস্থাটি।
এর আগে গতবছর ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে লিবিয়ার সব পক্ষের অংশগ্রহণে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় ঐক্য সরকারকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করে পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্ট।
ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে পদত্যাগের জন্য পার্লামেন্ট আহ্বান জানালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।
পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টের মুখপাত্র আবদুল্লাহ বিলিহিক জানান, লিবিয়ার হাই কাউন্সিল অব স্টেট থেকে নির্ধারিত মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদ আল-বাইবাসের প্রার্থিতাকে প্রত্যাহার করা হয়। ফলে একক প্রার্থী হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্যরা ফাতহি বাশআগাকে নির্বাচিত করেন।
লিবিয়ার বিমানবাহিনীর সাবেক পাইলট ও ব্যবসায়ী ফাতহি বাশআগা পশ্চিমাঞ্চলীয় পক্ষের প্রভাবশালী এক রাজনীতিবিদ। মিসরাতার বাসিন্দা বাশআগা ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকোর্ড (জিএনএ) সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় পক্ষে সমর্থন দেয়া তুরস্ক, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের সমর্থনে থাকা রাশিয়া ও মিসরের সাথে তিনি সম্পর্ক উন্নয়ন করেন।
পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজ নেতা জেনারেল খলিফা হাফতার ও তার সামরিক বাহিনী পার্লামেন্টের বৃহস্পতিবারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় পক্ষের সমর্থনে থাকা পার্লামেন্ট থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটিতে আবার একই সময়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর আবির্ভাব হলো। এর মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে বিভক্ত দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আবার বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পূর্বাঞ্চলীয় পার্লামেন্টের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহ।
শুক্রবার লিবিয়ার টিভি চ্যানেল আল-আহরারে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘লিবিয়ানদের নতুন করে যুদ্ধে টেনে নেয়ার যেকোনো পদক্ষেপকেই আমি প্রত্যাখ্যান করি।’
তিনি বলেন, লিবিয়ার রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে তিনি এক পরিকল্পনা করছেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে তিনি প্রেসিডেন্টের প্রার্থিতা ত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
ডিসেম্বরে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আল-দাবিবাহ তার প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার কথা ঘোষণা করায় সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবারের হামলার বিষয়ে তিনি জানান, তার ওপর হামলা ‘কোনো পরিকল্পিত ঘটনা’ ছিলো না। তবে তাকে হত্যার জন্য দুইজন ভাড়াটে সৈনিককে নিয়োগ করার অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে তবরুকের পার্লামেন্টে নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানী ত্রিপোলিতে প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহর গাড়ি বহরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। হামলায় বন্দুকধারীদের ছোড়া একটি গুলি প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা গাড়ির কাঁচ ভেদ করলেও তিনি ও তার সাথীদের কেউ আহত হননি।
এদিকে জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারা এখনো আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকেই সমর্থন দিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিককে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সংক্ষেপে এর উত্তর, হ্যা।’
তিনি বলেন, ‘লিবিয়ার সকল নেতা ও অংশীদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লিবিয়ান জনগণকে তাদের ভাবনায় রাখা।’
ডুজারিক বলেন, ‘অপর একজন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্তির খবর আমরা দেখেছি। আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিতই থাকবে।’
জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ চার দশক দেশটি শাসন করা একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গাদ্দাফি সামরিক পন্থায় বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চাইলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হলেও দেশটিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দেশটি ত্রিপোলিকেন্দ্রীক পশ্চিম ও তবরুককেন্দ্রীক পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০২০ সালের অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘ উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে এবং দেশটির সংকট সমাধানে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করে।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ সংলাপের পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিবাদমান পক্ষগুলো দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সম্মত হয়। বিবাদমান পক্ষগুলো অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি দেশটির সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ ইউনুস মানফি এবং প্রধানমন্ত্রী পদে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিনিধি আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে নির্বাচিত করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব থাকলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইন ও বিধিমালা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে বিতর্কের জেরে শেষ পর্যন্ত গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে নির্ধারিত এই নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় পূর্বাঞ্চলীয় পক্ষের সমর্থনে থাকা পার্লামেন্ট জাতীয় ঐক্য সরকারকে অকার্যকর হিসেবে ঘোষনা করে।
সূত্র : আলজাজিরা ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা