মরক্কোতে কুয়ায় পড়া শিশুকে ঘিরে আলোড়ন, উদ্ধারে চলছে প্রচেষ্টা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:১৫
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর গভীর কুয়ায় পড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে পুরো আরব বিশ্বে। শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকর্মীরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার রায়ান নামের এই শিশুটি মরক্কোর উত্তরাঞ্চলীয় বাব বারদ শহরে কুয়ায় পড়ে যায়।
মরক্কোর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, বাড়ির কাছের এই কুয়াটি যখন চারদিন আগে শিশুটির বাবা মেরামতের কাজ করছিলেন, তখন শিশুটি হঠাৎ কতরে কুয়ার ৩০ মিটার (এক শ’ চার ফুট) গভীরে পড়ে যায়।
শিশুটিকে উদ্ধারে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন জরুরি উদ্ধারকর্মীরা।
শনিবার মরক্কোর সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, উদ্ধারকর্মীরা শিশুটির এক দশমিক আট মিটার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
বলা হচ্ছে এই উদ্ধার অভিযান অত্যন্ত জটিল, তবে উদ্ধার-কর্মীরা তাদের অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে ভূমিধ্বসের আশঙ্কায় শিশুটিকে উদ্ধারের এই তৎপরতা আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
উদ্ধারকাজ দেখতে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সমবেত লোকজন হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে উদ্ধারকারীদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
শিশুটিকে উদ্ধারের তৎপরতা পুরো আরব বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগে সেভ রায়ান (রায়ানকে রক্ষা করো) ছড়িয়ে পড়েছে।
কুয়াটি বেশি প্রশস্ত না হওয়ার কারণে এখন সেখানে বড় আকারের গর্ত তৈরি করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বুলডোজার দিয়ে এই গর্ত করা হচ্ছে কুয়ার সমান্তরালে। কিন্তু সেখানকার মাটিতে পাথর ও বালি থাকার কারণে জায়গাটি ধসে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, তারা বালকটির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
তারা আশা করছেন গর্তটি যখন কুয়ার গভীরতার সমান পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে তখন আড়াআড়ি সুড়ঙ্গ তৈরি করে বালকটিকে বের করে আনা সম্ভব হবে।
একজন উদ্ধারকারী আবদুস সালাম মাকোদি শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা গত তিনদিন ধরে একটানা কাজ করছি। ফলে লোকজন ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও পুরো টিম ধৈর্য ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উদ্ধার কাজে সহায়তা করা শেফশাউন অ্যাসোসিয়েশন অব কেভিং অ্যান্ড মাইনিংয়ের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইয়াসিন আল-কুয়াহাবি জানান, কুয়াটি সরু হওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান স্থানীয় অনেক স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকর্মীরা বার বার কুয়ার নিচে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো কুয়াটি খুব সরু। এর ব্যাস মাত্র ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি)। কুয়ার ২৮ মিটার গভীরে গিয়ে এটি আরো বেশি সরু হয়ে গেছে। ফলে আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারছি না।’
উদ্ধারকারী দলের একজন বলেন, ‘আমরা যতোই তার কাছে যাচ্ছি, কুয়াটি ততোই সরু হয়ে যাচ্ছে। সেখান দিয়ে আরো নিচে নামা কঠিন। একারণে আমরা একটা গর্ত করে ভেতরে নামার চেষ্টা করছি।’
তবে কর্তৃপক্ষের ভয় হচ্ছে এর ফলে দুর্ঘটনাক্রমে ভূমিধ্বসের মতো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
রায়ানের বাবা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে তিনি এক পলকও ঘুমাতে পারেননি এবং রায়ানের মা খুব ভেঙে পড়েছেন।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের সাথে সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্তে আমি তার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম, আর তখনই সে কুয়ার ভেতরে পড়ে গেল। এর পর থেকে আমি ঘুমাইনি।’
মরক্কোর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় কাঁদছিলেন রায়ানের মা। তিনি বলেন, ‘পুরো পরিবারটিই তাকে খুঁজতে গিয়েছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি যে সে আসলে কুয়ার ভেতরে পড়ে গেছে। তাকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমি এখনও আশা ছাড়িনি।’
বৃহস্পতিবার কুয়ার ভেতরে একটি ক্যামেরা ফেলা হয়েছিল। তার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে শিশুটির এখনও জ্ঞান আছে। যদিও তার মাথায় সামান্য আঘাতের কিছু চিহ্ন রয়েছে।
শিশুটির যাতে শ্বাস নিতে কষ্ট না হয় সেজন্য উদ্ধার-কর্মীরা কুয়ার ভেতরে অক্সিজেনের মাস্ক ফেলেছেন। ভেতরে খাবার এবং পানিও দেওয়া হয়েছে।
কুয়াটির কাছে চিকিৎসকদের একটি দলও অবস্থান করছে। যে কোনো সময়ে রায়ানকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে তারা প্রস্তুত।
তাকে কুয়ার ভেতর থেকে তুলে আনার পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেখানে একটি হেলিকপ্টারও পাঠানো হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি ও আলজাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা