২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেন হাফতার

টেলিভিশন ভাষণে খলিফা হাফতার - ছবি : সংগৃহীত

লিবিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজ নেতা জেনারেল খলিফা হাফতার। মঙ্গলবার এক টেলিভিশন ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি।

টেলিভিশন ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ যে সংকটে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একমাত্র পথ নির্বাচন।’

জেনারেল হাফতার তার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বেনগাজির নির্বাচন কেন্দ্রে মঙ্গলবারে তার প্রার্থিতার আবেদন জমা দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

২০১৪ সালে নতুন করে শুরু গৃহযুদ্ধে দুই ভাগে বিভক্ত দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় তবরুককেন্দ্রীক সাবেক সরকারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রধান ছিলেন জেনারেল খলিফা হাফতার। জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় ত্রিপোলিকেন্দ্রীক সরকারের সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে পরিচিতি পান তিনি।

২০১৯ সালে রাজধানী ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নিতে হাফতার বাহিনী হামলা চালায়। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ মাস সংঘর্ষের পরেও ত্রিপোলি দখল করতে ব্যর্থ হন জেনারেল হাফতার।

গত ২২ সেপ্টেম্বর লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রধানের পথ থেকে সরে দাঁড়ান জেনারেল হাফতার। ওই সময়ই ধারণা করা হয়েছিলো, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এদিকে রোববার লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজের প্রার্থিতার আবেদন জমা দেন দেশটির সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফি। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাবাহ শহরে নির্বাচন কমিশন অফিসে নিজের আবেদন জমা দেন তিনি।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে আলোচনায় স্থির হওয়া শর্ত অনুসারে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর লিবিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়।

জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ চার দশক দেশটি শাসন করা একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গাদ্দাফি সামরিক পন্থায় বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চাইলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হলেও দেশটিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দেশটি ত্রিপোলিকেন্দ্রীক পশ্চিম ও তবরুককেন্দ্রীক পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

গত বছরের অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘ উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে এবং দেশটির সংকট সমাধানে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ সংলাপের পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিবাদমান পক্ষগুলো দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সম্মত হয়। বিবাদমান পক্ষগুলো অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি দেশটির সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ ইউনুস মানফি এবং প্রধানমন্ত্রী পদে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিনিধি আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে নির্বাচিত করে।

পরে লিবিয়ার পার্লামেন্টে আলোচনার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ২৪ ডিসেম্বরের নির্বাচন পরিচালনা করবে।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement