২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর সুদান জুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ

রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে খার্তুমে বিক্ষোভ। টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা - ছবি : এএফপি

সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করার পর রাজধানী খার্তুমসহ দেশের সর্বত্র রাজপথে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়ে, পতাকা উড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

সোমবার অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহান বেসামরিক সরকার ভেঙে দেন, রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করেন এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

সৈন্যরা জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে এবং ১০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এই অভ্যুত্থানকে নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে কূটনীতিকরা বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই সঙ্কট নিয়ে মঙ্গলবার আলোচনার কথা রয়েছে।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহান যুক্তি দিয়েছেন যে রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। সেনা সদস্যরা খার্তুমে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্ষোভ আয়োজনকারীদের গ্রেফতার করছে বলে খবর আসছে।

শহরের বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল স্থগিত রয়েছে। ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

খবর পাওয়া যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মীরা ধর্মঘট করছেন, এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় সামরিক হাসপাতালগুলোতে একমাত্র জরুরি চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা সেবা দিতে ডাক্তাররা অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

‘সামরিক শাসন চাই না’
সুদানে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে বেসামরিক নেতাদের সাথে সেনাবাহিনীর বিরোধ চলছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ ‘সুদানের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।’ আমেরিকা সুদানের জন্য বরাদ্দ ৭০ কোটি ডলার সহায়তা স্থগিত করেছে।

রাতভর বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরও বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার সকালে রাজপথ থেকে সরেনি। তারা বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে অনড় আছে।

‘মানুষের দাবি বেসামরিক শাসন,’ এই স্লোগান দিয়ে, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তারা রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবন্ধক তৈরি করেছে। বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে বহু নারী। তারা ‘সামরিক শাসন চাই না’ বলে ধ্বনি দিচ্ছে।

সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালানোর পরেও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

আহত একজন বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর সদর দফতরের বাইরে সৈন্যরা তার পায়ে গুলি করেছে। আরেক ব্যক্তি বলেছেন সেনাবাহিনী প্রথমে স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে, তারপর তারা তাজা গুলি ছোঁড়ে।

‘দুজন মারা গেছে, আমি নিজের চোখে দেখেছি,’ বলছেন আল-তাইয়েব মোহামেদ আহমেদ।

সুদানের চিকিৎসকদের ইউনিয়ন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফেসবুকে লেখা হয়েছে নিহতদের গুলি করা হয়েছে সেনা দফতরের বাইরে।

শহরের একটি হাসপাতালের ছবিতে রক্তমাখা পোশাকে, বিভিন্ন ধরনের আঘাত নিয়ে আহত মানুষদের দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
সুদানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের খবরে বিশ্ব নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাজ্য, ইইউ, জাতিসঙ্ঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সাথে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিতে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এই নেতদের অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। সুদান আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য দেশ।

গৃহবন্দী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক এবং তার স্ত্রী, এছাড়াও তার মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য ও আরো বেসামরিক নেতারা।

বিবিসির আরবি বিভাগের মোহামেদ ওসমান রাজধানী থেকে খবর দিচ্ছেন যে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিট সোমবার ভোরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যায় এবং তাকে অভ্যুত্থানে অংশ নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ২০১৯ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর কথা ছিল। কিন্তু আগেও বেশ কয়েকবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর সেই লক্ষ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। সবশেষ অভ্যুত্থানের চেষ্টাটি হয়েছিল এক মাসের কিছু আগে।

ক্ষমতা ভাগাভাগির ভিত্তিতে গঠিত পরিষদের প্রধানের পদে ছিলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহান। তিনি বলেছেন, এরপরেও সুদান বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেনি। ২০২৩-এর জুলাইয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement