২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কায়েস সাইদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তিউনিসের রাস্তায় হাজারো লোক

তিউনিসের রাস্তায় কায়েস সাইদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ - ছবি : মিডল ইস্ট মনিটর

তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার তিউনিসীয় নাগরিক। রোববার রাজধানী তিউনিসে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন তারা।

বিক্ষোভকারীরা তিউনিসের হাইরুদ্দিন পাশা স্ট্রিটে এসে জড়ো হন এবং পরে হাবিব বুরগুইবা অ্যাভিনিউ অভিমুখে পদযাত্রা করেন। এই সময় বিক্ষোভস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা 'সংবিধান, স্বাধীনতা, জাতীয় সম্মান', 'অভ্যুত্থান ব্যর্থ হোক', 'জনগণ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চায়' লিখিত ব্যানার ও তিউনিসিয়ার পতাকা বহন করেন।

বিক্ষোভের আয়োজনকারী 'সিটিজেন অ্যাগেইনস্ট ক্যু' আন্দোলনের মুখপাত্র জাওহার বিন মুবারক বলেন, 'আমরা শুধু অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছি, আমাদের জনগণের নয়।'

তিনি বলেন, 'আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি অংশগ্রহণের এবং আমাদের জনগণ বিভক্ত নয়।'

তিনি আরো বলেন, 'ট্যাঙ্ক ও অভ্যুত্থানের ছায়ায় কখনোই সংস্কার হতে পারে না।'

রোববারের বিক্ষোভে পাঁচ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী অংশগ্রহণ করেন বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট সাইদের সমর্থনে তিউনিসের রাস্তায় আট হাজারের বেশি লোক সমাবেশ করে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়। এর পরদিন সাইদ ঘোষণা করেন, সারাদেশে ১৮ লাখ মানুষ তার সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে।

গত ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।

পরে ২৩ আগস্ট 'রাষ্ট্রের জন্য হুমকি' বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।

অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ।

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে 'সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' বলে অভিযোগ করে আসছে।

এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে বহিস্কার ও পার্লামেন্ট স্থগিতের দুই মাস পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন কায়েস সাইদ। ভূতত্ত্ববিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাজলা বুউদেন রমাদানকে তিউনিসিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট সাইদ।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সরকার দেশটিতে গঠন করা হয়নি।

২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো।

এছাড়া বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে।

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর


আরো সংবাদ



premium cement