আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইবরাহীমি চুক্তি’ স্বাক্ষর করলো সুদান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:১২
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও দেশটির সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘ইবরাহীমি চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে আফ্রিকার দেশ সুদান।
দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বুধবার এ চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয়।
এর আগে উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও কূটনীতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।
ইবরাহীমি ধর্মের (ইসলাম, খ্রিস্ট, ইহুদি) অনুসারী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় এটি ‘ইবরাহীমি চুক্তি’ (আব্রাহাম অ্যাকর্ড) হিসেবে পরিচিতি পায়।
সুদানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্কিন রাজস্বমন্ত্রী স্টিভেন মনুশিনের খার্তুম সফরকালে দেশটির বিচারমন্ত্রী নাসরউদ্দীন আবদুল বারি এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
একইসাথে সুদানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী হিবা আহমেদের সাথে মার্কিন রাজস্বমন্ত্রী একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা স্মারকে বিশ্বব্যাংকে সুদানের সব বকেয়া ঋণ পরিশোধে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই পদক্ষেপ ২৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সুদানকে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বার্ষিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তার সুযোগ গ্রহণে সক্ষম করবে।’
খার্তুমের মার্কিন দূতাবাস বলেছে, এই চুক্তি সুদানকে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও অর্থনৈতিক সুযোগের রূপান্তরিত পথে চলতে সহায়তা করবে।
ইসরাইলের সাথে সুদানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার দুই মাস পরেই দেশটির এই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা এলো।
অক্টোবরে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম সরকারি ঘোষণার পর সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন এই চুক্তির বিরুদ্ধে একটি বিরোধী জোট গঠনের কথা জানায় তারা।
সুদানের ফোর্সেস অব ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ (এফএফসি) জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরীক পপুলার কংগ্রেস পার্টি অক্টোবরে এক বিবৃতিতে বলে, সুদানের জনগণ এই স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি মানতে বাধ্য নয়।
সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদিক আল-মাহদি এই ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন, বিক্ষোভের সময় তিনি সরকার আয়োজিত একটি সম্মেলন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছিলেন।
গত বছর ট্রাম্প প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ইসরাইলের কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। ৭০-এর দশকে মিসর ও ৯০-এর দশকে জর্ডানের ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার পর তৃতীয় ও চতুর্থ আরব রাষ্ট্র হিসেবে এই দুটি দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। পরে মরক্কো ইসরাইলের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
ইসরাইলের সাথে সম্প্রতি কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করা দেশগুলো ভৌগোলিকভাবে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি থেকে বহু দূরে অবস্থিত এবং আরব-ইসরাইল সংঘাতে তাদের ভূমিকাও সীমিত।
এই চুক্তিটি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গুরুতর বিভক্তি ও দুর্বলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি শান্তি প্রক্রিয়ায় ছাড় দেয়ার বিনিময়েই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ায় আরবদের দীর্ঘ দিনের দৃঢ় অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে চুক্তিটি।
মার্কিন রাজস্বমন্ত্রীর সুদানে এক দিনের সফর মূলত দেশটির খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতি এবং ঋণ সহায়তাসহ সম্ভাব্য মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্যকে কেন্দ্র করেই সম্পন্ন করেছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
সুদানের বর্তমানে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ আছে। বকেয়া এই ঋণ থেকে মুক্তি এবং বিদেশি ঋণের নতুন সুযোগকে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
দেশটির সরকার বর্তমানে বিপুল বাজেট ঘাটতির সমস্যা মোকাবেলায় সংগ্রাম করছে। এছাড়া জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধসহ জরুরি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের সংকটে ভুগছে সুদান।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতানুসারে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি দুই শ’ শতাংশ বাড়ায় রুটি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দাম বিপুল হারে বেড়ে গিয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সুদানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসে সহায়তা দেয়া রাষ্ট্রের’ তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। এই পদক্ষেপের ফলে খার্তুম সরকার ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হয়।
সূত্র : আলজাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা