২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

করোনার কারণে স্কুল এখন মুরগির খামার

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে এখন মুরগি ডাকার শব্দ শোনা যায় - ছবি : বিবিসি

করোনাভাইরাসের কারণে কেনিয়ায় আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি অনেক স্কুলের টিকে থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।

মুয়ে ব্রেথ্রেন স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এক সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে গমগম করলেও এখন সেখানে শুধু মুরগির ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।

ব্ল্যাকবোর্ডে অংক করার পরিবর্তে লিখে রাখা হয়েছে টিকা দেয়ার সময়সূচি।

জোসেফ মাইনা যিনি কিনা সেন্ট্রাল কেনিয়ান স্কুলের মালিক, তিনি তার স্কুলের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটিকে মুরগির খামারে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছেন।

টিকে থাকার জন্য জরুরি

মার্চে যখন সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ আসলো ঠিক তখন থেকে তাকে কঠিন সময়ে মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি তখন একটি ঋণ শোধ করছিলেন এবং এর কারণে ব্যাংকের সাথে তাকে পুনরায় সমঝোতা করতে হয়।

প্রথমে মনে হয়েছিল যে সব কিছু হারিয়ে গেছে। কিন্তু ‘পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে টিকে থাকার জন্য আমাদেরকে কিছু করতে হবে,’ মাইনা বিবিসিকে বলেন।

বেসরকারি স্কুলগুলো যা কেনিয়ার প্রায় এক পঞ্চমাংশ শিশুদের শিক্ষা দিয়ে থাকে তাদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বেতন। এসব ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে তারা কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারবে না এবং মারাত্মক ধরণের অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়বে।

অনলাইন শিক্ষণের মাধ্যমে হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে তারা যে আয় করছে তা শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণেও পর্যাপ্ত নয়, একথা জানায় কেনিয়ার প্রাইভেট স্কুল
অ্যাসোসিয়েশন-কেপিএসএ।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী পিটার নডরো বলেন, তিন লাখের মতো স্কুলের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলের শিক্ষকদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

এর সাথে ১৩৩টি স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

‘এতো খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি’

খারাপ অবস্থা থেকে বাঁচতে রোকা প্রিপারেটরি নামে মধ্য কেনিয়ার একটি বেসরকারি স্কুল নিজেদের খেলার মাঠকে খামারে পরিণত করেছে।

‘এর আগে কখনো এতো খারাপ অবস্থা তৈরি হয়নি,’ জেমস কুংগু বিবিসিকে বলেন। যিনি ২৩ বছর আগে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আগে যেখানে খেলার মাঠ ছিল সেখানে এখন সবজি বড় হচ্ছে। তিনি মুরগিও পালছেন।

‘আমার অবস্থা অন্য স্কুলগুলোর মতোই। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে এখন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ-ই নেই। মানসিকভাবে আমরা অনেক ভেঙে পড়েছি,’কুংগু বলেন।

মুয়ে ব্রেথ্রেন এবং রোকা- উভয় স্কুলেই মাত্র দু’জন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা এখন খামারের কাজে সাহায্য করেন।

‘এটা ধনীদের জন্য নয়। তবে আমরা মানিয়ে নিয়েছি... অন্তত আপনি বিরক্ত হবেন না, আপনি ব্যস্ত থাকবেন আর এটাই থেরাপি হিসেবে কাজ করে,’ কুংগু বলেন।

শিক্ষকদের করার মতো কিছু নেই

দুটি স্কুল যেখানে আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে সেখানে মালিকরা শঙ্কায় রয়েছেন তাদের শিক্ষকদের নিয়ে যারা পাঁচ মাসের বিনা বেতনে ছুটিতে গেছেন।

সরকারি স্কুলের কর্মকর্তাদের তুলনায় এই পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ তারা বেতন পায়।

মাইনা বলেন, তাকে তার স্কুলের অনেক শিক্ষক ফোন করে জানতে চেয়েছেন যে তারা কোনো কাজে আসতে পারেন কিনা। ‘কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজেদের খাওয়ার মতোই পর্যাপ্ত খাবার নেই,’ তিনি বলেন।

এর কারণে অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন।

ম্যাকরিন ওটিয়েনো যিনি নাইরোবিতে একটি বেসরকারি স্কুলে ছয় বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন, বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আশ্রয় এবং খাবারের জন্য তিনি একটি বাড়িতে শিশু লালন-পালনের চাকরি নিয়েছেন।

‘যখন থেকে কেনিয়াতে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকে আমার করার মতো কিছু ছিল না।’

‘আমি আমার সন্তানদের জন্য কিছু একটা করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু এটা সহজ ছিল না,’ তিনি বিবিসিকে বলেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement