ইবোলা নিয়ে ‘বড় সাফল্যের’ কথা জানালেন কঙ্গোর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১১:১৪, আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১১:৩০
কয়েক দশক ধরে ইবোলা আবির্ভূত হয়েছে মানুষের জন্য বড় আতঙ্ক হিসেবে। কারণ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে গেছেন এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে শুরু করেছে, কারণ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বিজ্ঞানীরা ইবোলার চিকিৎসায় সাফল্য পাবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
তাদের গবেষণা বলছে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত রোগীই বেঁচে যেতে পারেন।
কঙ্গোতে ইবোলা রেসপন্সের সমন্বয়ক প্রফেসর জিয়ান জ্যাকুয়াস মুয়েম্বে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বলেছেন, এ রোগ হয়তো খুব শিগগিরই ‘প্রতিরোধ ও চিকিৎসাযোগ্য’ হবে এবং তিনি এ পরীক্ষাকে ‘বছরের সবচেয়ে বড় খবর’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
‘আমি অত্যন্ত খুশী এটা নিয়ে’, তিনি বলছিলেন বিবিসিকে।
‘ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে আমি চার দশক চিন্তা করেছি। তাই এটা আমার জীবনের বড় অর্জন।’
এই গবেষণাটি কঙ্গোতে হয়েছে, যেখানে গত আগস্ট থেকে ইবোলায় মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত এক হাজার আট শ’।
চারটি ওষুধ ব্যবহার করে পরীক্ষাটি শুরু হয় গত নভেম্বরে।
সাত শ’ ব্যক্তিকে বাছাই করা হয় চিকিৎসার পরীক্ষার জন্য।
এর মধ্যে প্রথম ৪৯৯ জন যে ওষুধ দিয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন তা এখন নিশ্চিত।
ড. মুয়েম্বে বলছেন, দুটি ওষুধ যেগুলো ল্যাবরেটরিতে আরইজিএন-ইবি৩ ও এমএবি১১৪ নামে পরিচিত - সেগুলো ইবোলার বিরুদ্ধে খুবই সক্রিয়।
মূলত চিকিৎসার ধরণটা হলো এমন, যেখানে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
আরইজিএন-ইবি৩ যেসব রোগীদের প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর হার কমে ২৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে চিকিৎসা না করলে মৃতের হার ৬০-৭০ শতাংশ।
‘এটা বড় ধরণের আবিষ্কার। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইবোলার কোনো চিকিৎসা নেই, কোনো টিকা নেই। তাই এটাই বছরের সবচেয়ে বড় খবর,’ বলছিলেন ড. মুয়েম্বে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, যাদের অ্যান্টিবডিসহ ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তারা এক ঘণ্টার মধ্যেই ভালো বোধ করতে শুরু করেন।
কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, মনে রাখতে হবে এটি চিকিৎসা, প্রতিরোধ নয়।
এটা ইবোলাকে রক্ত থেকে দু সপ্তাহের মধ্যেই সরিয়ে দেবে।
‘এটা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে একটি চিকিৎসা। কিন্তু এটা কোনো টিকা নয় এবং রোগীরাও সারা জীবনের জন্য সুরক্ষিত নয়।’
তার আশা- আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এই পরীক্ষা নিরীক্ষার চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।
১৯৭৬ সালে যে দলটি ইবোলা চিহ্নিত করেছিলো ড. মুয়েম্বে সে দলের একজন সদস্য। তিনি বলছেন, নতুন আবিষ্কার রোগটির বিস্তার বন্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।
‘এর প্রভাব হবে অসাধারণ। কারণ মানুষজন ইবোলার প্রতিরোধে চিকিৎসাই নিচ্ছিলো না। মানুষ চিকিৎসা কেন্দ্রকে মৃত্যুকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছিলো।’
‘এখন যদি দেখে যে মানুষ চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে ও সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরছে তাহলে তারা আর রোগীকে লুকিয়ে রাখবে না। বরং হাসপাতালে নিয়ে আসবে। তাই রোগটির বিস্তার বন্ধ করার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
আশা...
মঙ্গলবার একজন মা ও এক সন্তান ইবোলার চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
৪২ বছর বয়সী ওই মা ও তার এক বছর বয়সী সন্তান দু সপ্তাহ আগে ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার স্বামী ইবোলায় মারা গেছেন।
‘আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই,’ আরো নয় সন্তানের জননী ওই নারী বলছিলেন সাংবাদিকদের।
‘আমি ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। এখন আমি সুস্থ, যদিও আমার স্বামী মারা গেছেন। কারণ তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে দেরী হয়েছিলো।’
তিনি বলেন, ইবোলা আছে ও এতে মানুষ মরছে কিন্তু আশার কথা আপনি দ্রুত সুস্থও হতে পারেন।
ইবোলা কী?
• ইবোলা একটি ভাইরাস যেখানে শুরুতে জ্বর হয়ে শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। গলায় সমস্যা দেখা দেয়।
• এরপর বমি, ডায়রিয়া ও শরীরে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
• আক্রান্ত ব্যক্তির কেটে যাওয়া ত্বক, তার মুখ, নাক, বমি, রক্ত, মল বা শরীরের অন্য ধরনের তরল কোনো পদার্থের সংস্পর্শে এলে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।
• পানিশূন্য হয়ে রোগীর মৃত্যু হয় বা শরীরে কয়েকটি অঙ্গ অকার্যকর হয়েও মৃত্যু হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি