মিসরের সংবাদমাধ্যমে যেভাবে পরিবেশন করা হয় মুরসির মৃত্যু সংবাদ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ জুন ২০১৯, ১৬:২১
বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির মৃত্যুর খবর বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হলেও মিসরের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছিলো তার বিপরীত চিত্র। স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট মিসরের গণমাধ্যমে কোন গুরুত্ব পায়নি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিসরের একমাত্র রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুর খবর।
৬৭ বছর বয়সী মুরসি সোমবার আদালতে মামলার শুনানির সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২০১২ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে মিসরের ৩০ স্বৈরশাসক হুসনি মোবারকের পতনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন মুরসি; কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাপ্রধান আবদুল ফাতাহ আল সিসি। এরপর অনেকগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাকে কারাবন্দী করা। ব্যাপক দমন-নির্যানত করা হয় তার দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের ওপর।
মঙ্গলবার মিসরের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর কোনটিই মুরসির মৃত্যুর সংবাদ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেনি। ভেতরের পাতায় সাধারণত যেখানে অপরাধ বিষয়ক সংবাদ ছাপা হয় সেখানে স্থান পেয়েছে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যু সংবাদ। এমনকি কোন রিপোর্টেই মুরসিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
বেশির ভাগ পত্রিকায় ৪২ শব্দের একটি সংবাদ হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সেই সংবাদটি সামরিক জান্তার সরবরাহকৃত।
মিসরের মাদা মাসর অনলাইন নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, আল মাসরি আল ইউম নামের একটি পত্রিকা শুধু প্রথম পাতায় স্থান দিয়েছে সংবাদটি।
সরকারি মালিকাধীন তিনটি সংবাদপত্রে মুরসিকে অবহিত করা হয়েছে ‘অভিযুক্ত’ বা ‘মৃত’ হিসেবে। ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’ বা ‘ব্রাদারহুড নেতা’ এমন কিছুই লেখা হয়নি। কিছু বেসরকারি মালিকানার পত্রিকা কোন বিশেষণই ব্যবহার করা হয়নি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা আল আহরাম তাদের চতুর্থ পাতায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম দিয়েছে ‘গুপ্তচরবৃত্তির মামলার শুনানির সময় মোহাম্মাদ মুরসির ইন্তেকাল’।
আল আকবার পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিলো ‘বিচার চলাকালে মোহাম্মাদ মুরসির ইন্তেকাল’। একই শিরোনামে তৃতীয় পৃষ্ঠায় খবর ছোট্ট খবর প্রকাশ করেছে আল গোমহুরিয়া।
দেশটির বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও একই পন্থা অবলম্বন করেছে। এবং তাদের খবরে মুরসির রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছ।
সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে দেশটির শাসকের পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি বা বক্তব্য দেয়া হয়নি। পরদিন ভোরবেলা বহু পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া সেখানে কাউকে থাকতে দেয়নি সামরিক জান্তা। সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার ছিলো না।
মুরসির আইনজীবী জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্টের ইচ্ছে ছিল নিজ গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার কিন্তু সামরিক শাসকরা তার পরিবারকে বাধ্য করেছে রাজধানী কায়রোর একটি করস্থানে দাফন করতে। মুরসির ছেলে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তোরা জেলখানার হাসপাতালে আমরা তার লাশ গোসল করাই। জেল মসজিদে জানাজা হয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের আধ্যাতিক নেতারা যেখানে শায়িত আছেন সেখানেই দাফন করা হয়।’ আল জাজিরা