২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সুদান বিক্ষোভে নতুন মোড়!

সৌদি ও আমিরাতের সহায়তার প্রস্তাব সুদানের বিক্ষোভকারীদের প্রত্যাখ্যান - সংগৃহীত

সুদানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বিগ্ন বিক্ষোভকারীরা দেশ দু’টির সহায়তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দেশ দু’টিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘রাখুন আপনাদের টাকা নিজেদের কাছে রাখুন’। রিয়াদ এবং আবুধাবি খার্তুমকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দেয়ার একদিন পর এই আহ্বান জানানো হলো।

তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ দু’টির রোববারের সাহায্যের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর সুদানের সামরিক সদর দফতরের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আমরা সৌদির সহায়তা চাই না’। সোমবার আলজাজিরাকে ব্যবসায়ী আদিল গ্যাসেম আলসীদ বলেন, ‘তারা সুদানকে নিয়ন্ত্রণ ও তদবিরের জন্য অর্থ ব্যবহার করছে। নিজেদের দেখভাল এবং স্বার্থ সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ আমাদের রয়েছে।’ জ্বালানির জন্য পাঠানো হবে।

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি 
এদিকে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশ পরিচালনাকারী অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক পরিষদ একটি বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন নেতা এ কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতারা রোববার বলেন, তারা সামরিক শাসকদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন কারণ উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার সামরিক পরিষদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক পরিষদ অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পরিপূরক। পরিষদ জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার জন্য লোভী নই। বিরোধীদলগুলোর সাথে আমরাও একমত। বিরোধীদলগুলোর প্রস্তাবনা পাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’

সূত্র : আলজাজিরা

সুদানে বিক্ষোভ অব্যাহত বশিরের দুই ভাই গ্রেফতার

প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর রাষ্ট্রক্ষমতা বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার দাবিতে সুদানের রাজধানী খার্তুমে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের দুই ভাইকে।
অন্তর্বর্তী সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্র শামসুদ্দিন কাবাশি বলেছেন, তাদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সাবেক শাসক ওমর আল বশিরের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা হলেন- আবদুল্লাহ আল বশির ও আলাবাস আল বশির। 

বিভিন্ন সূত্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সাবেক প্রেসিডেন্টকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে খার্তুমের উত্তরে কোবার জেলখানায় স্থানান্তর করেছে কর্তৃপক্ষে। এমন খবরের পর সামরিক কাউন্সিল থেকে ওই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সুদানের সাবেক এক মন্ত্রী বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে মঙ্গলবার রাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসংবলিত একটি জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোবার জেলখানার একজন প্রহরী এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি দেখেছি প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে কয়েক ডজন সেনাকর্মকর্তা নিয়ে এসেছেন। তবে তারপর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে বা কী হয়েছে তার পরিণতি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

দারফুরে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযুক্ত ওমর আল বশির। তারা তাকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে; কিন্তু এ আহ্বানে সাড়া দেবে না বর্তমান সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে তাকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে দেশেই বিচার করা হবে।

এ দিকে, শত শত মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ করছে প্রতিদিন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বুধবার তারা সেনা সদর দফতরের বাইরে দিনব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এ সময় তাদের বেশির ভাগের পরনে ছিল সাদা কোট। তারা উড়িয়েছেন সুদানের পতাকা। স্লোগান দিয়েছেনÑ স্বাধীনতা, শান্তি, ন্যায়বিচার ও বিপ্লব জনগণের পছন্দের বিষয়। এ দিন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে খার্তুমে আলাদা একটি র‌্যালি বের করেন সাংবাদিকেরা।

২২ বছর বয়সী মেডিক্যাল পড়ুয়া আয়া আবদুল আজিজ বলেছেন, খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ। তিনি এতে যোগ দিয়েছেন নারীদের অধিকারের দাবিতে। পাশাপাশি ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেয়ার দাবিতে। আমাদের দাবি অন্তর্বর্তী বেসামরিক কাউন্সিলে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। খালিদ মুহাম্মদ নামে একজন চিকিৎসক বলেছেন, আমরা বশিরকে বিতাড়িত করেছি; কিন্তু এখনো আমরা তার শাসনযন্ত্র থেকে মুক্তি পাইনি। এই আন্দোলনের পুরোভাগে আছে সুদানিজ প্রফেশনালস অ্যাসোসিয়েশন। তারা সামরিক কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ক্ষমতা অন্তর্বর্তী বেসামরিক সরকারের হাতে অবিলম্বে তুলে দিতে, যে সরকার চার বছর দেশ শাসন করবে। এই গ্রুপটির আশঙ্কা, ওমর আল বশিরের নিয়োগ দেয়া সেনাবাহিনী ক্ষমতায় ঝুলে থাকার চেষ্টা করবে অথবা তাদের অনুগত কাউকে নির্বাচিত করবে।


আরো সংবাদ



premium cement