বিশ্বের সেরা শিক্ষক কেনিয়ার পিটার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ মার্চ ২০১৯, ১২:০৩
প্রতিবছর ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজ’ দেয়া হয় কোনো একজন শিক্ষককে। কর্ম, সৃজনশীলতা, প্রজ্ঞা সব কিছু মিলিয়েই মূল্যায়নের পর কাউকে দেয়া হয় এ পুরস্কার। এ বছরের এ বিশেষ সম্মাননাটি দেয়া হয়েছে কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের একজন শিক্ষককে। গত শনিবার দুবাইয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
পুরস্কারজয়ী শিক্ষকের নাম পিটার টাবিচি। শেষ পর্যায়ের নয়জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে তিনিই অর্জন করেন দশ লাখ ডলার মূল্যমানের এ পুরস্কার। তার এই সাফল্যে পিটারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তাও। এক ভিডিও বার্তায় পিটারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার গল্প গোটা আফ্রিকার গল্প। তরুণ প্রতিভায় ভরা এক মহাদেশের গল্প।
কিন্তু কোন দিক দিয়ে সেরা ছিলেন পিটার?
জানা গেছে, কেনিয়ার নাকুরু অঞ্চলে রিফ্ট ভ্যালির কাছে থাকা এক প্রত্যন্ত গ্রামের নাম পাওয়ানি। সেখানে ‘কেরিকো মিক্সড ডে সেকেন্ডারি স্কুল’ নামের একটি স্কুলে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান পিটার। ওই স্কুলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই এতিম। আবার অনেকের হয়তো শুধু বাবা কিংবা শুধু মা রয়েছেন। তবে একটি দিক দিয়ে তারা সকলেই এক পর্যায়ের। তা হলো- শিক্ষার্থীদের সকলেরই অবস্থান দারিদ্রসীমার নীচে। প্রায়ই দিনই খালি পেটে দিন কাটে তাদের। স্কুলে আসতে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় তাদের।
এসব সমস্যার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার মতো সামাজিক সমস্যাও বেশ প্রকট। রয়েছে মাদকাসক্তির মতো গুরুতর সমস্যাও। রয়েছে অপ্রতুল শিক্ষকের সমস্যাও। প্রতি ৫৮ ছাত্রের জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। কিছু কিছু কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ কাজ করে নামমাত্রই। এসব সমস্যায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ওই অঞ্চলে অনেক বেশি।
কিন্তু এসব কিছু কেউ উপেক্ষা করে নিজের মতো করে ছাত্রদের স্কুলমুখী করতে উদ্যোগী হন পিটার। প্রত্যেক মাসেই তাদের পেছনে নিজের বেতনের প্রায় ৮০ শতাংশ খরচ করেন ৩৬ বছর বয়সী পিটার। ছাত্রদের পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলতে বেশিরভাগ ক্লাসেই ‘ইনফর্মেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ (আইসিটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তিনি। পিটারের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায় দেশের বড় বড় স্কুলগুলোকে পিছনে ফেলে ‘জাতীয় বিজ্ঞান’ প্রতিযোগিতাগুলোতেও কৃতিত্ব অর্জন করেছে এই প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা।
পিটার শুধু কেনিয়াতেই নয়, বরং পুরো আফ্রিকাতেই তার এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে চান।
এসব কারণেই পিটার টাবিচি জিতে নেন এবারের ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজ’। পুরস্কারটি জেতার পরে পিটার বলেন, আফ্রিকায় প্রত্যেক দিনই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। এ পুরস্কারটি মূলত আমাকে নয়, সম্মান জানাচ্ছে আফ্রিকার যুবসমাজকে। আমার ছাত্রদের কৃতিত্বেই আজ আমি এখানে।
তিনি বলেন, আমার স্কুল, আমার ছাত্র-ছাত্রী এবং কিছু বই আমাকে এ অবস্থানে আনার পেছনে অবদান রেখেছে। আমি তাদের সবািইকে ধন্যবাদ জানাই।