২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আফ্রিকায় কত সৈন্য আছে যুক্তরাষ্ট্রের

আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতি - ছবি : সংগ্রহ

বর্তমানে বিশ্বের ১৭৭টি দেশে ২ লাখের বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। যারা কয়েক শ’ সামরিক স্থাপনা পরিচালনা করছে। আফ্রিকা মহাদেশও ব্যতিক্রম নয়। গত ২ আগস্ট মেজর জেনারেল রজার এল ক্লাউটিয়ের আফ্রিকায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের দায়িত্ব নেন। 

আফ্রিকায় বর্তমানে কোন যুদ্ধ করছে না যুক্তরাষ্ট্র, তথাপি মহাদেশটিতে প্রচুর সংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। নেভী সিল’স গ্রিন বিরেটস এবং আরো বেশ কয়েকটি বিশেষ বাহিনী অন্তত ২০টি আফ্রিকান দেশে প্রায় একশ মিশন পরিচালনা করছে। এই সেনাদের কিছু কর্মকাণ্ড ও অবস্থান প্রকাশ্য, আবার কিছু অত্যন্ত গোপন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভাইস ম্যাগাজিনের তথ্য মতে, আফ্রিকায় প্রতি বছর অন্তত সাড়ে তিন হাজার মহড়া ও সামরিক তৎপরতা চালায় মার্কিন সেনারা, গড়ে যা প্রতিদিন অন্তত ১০টি। আর গত ১০ বছর আগের তুলনায় যা প্রায় দুই হাজার শতাংশ বেশি। অনেক কর্মকাণ্ড আছে যাকে যুক্তরাষ্ট্র ‘পরামর্শ ও সহযোগিতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে যা প্রকৃত পক্ষে সংজ্ঞার আলোকে যুদ্ধ থেকে পৃথক করা কঠিন।

বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে এক হাজার সামরিক ঠিকাদারসহ প্রায় সাড়ে সাত হাজার মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা মোতায়েন আছে আফ্রিকায়। এক বছর আগেও যা ছিলো ছয় হাজার। গত এক বছরে বেড়েছে দেড় হাজার। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এই সংখ্যা। সোমালিয়ায়তেই গত বছর দ্বিগুণ হয়েছে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা। এই সৈন্যরা চোখ রাখছে আফ্রিকা মহাদেশের ৫৩টি দেশে। ‘অন্ধকার মহাদেশ’ খ্যাত আফ্রিকায় দেশের সংখ্যা ৫৪টি।

আফ্রিকম নামে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড যখন গঠিত হয় তখন মহাদেশটিতে কোন সেনাঘাঁটি স্থাপন বা আফ্রিকার ভূখণ্ডে সেনা মোতায়েনের কোন পরিকল্পনা ছিলো না। কিন্তু এখন মহাদেশটিতে রয়েছে অনেকগুলো সেনা পোস্ট ও ঘাঁটি। ক্রমশই বাড়ছে এই সংখ্যা। অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিক টারসের মতো আফ্রিকা অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনা প্রায় পঞ্চাশটি।

আলজেরিয়া, বুরুন্ডি, শাদ, কঙ্গো, জিবুতি, মিসর, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, তিউনিসিয়া ও উগান্ডার মতো দেশগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার জন্য সেনাদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। ওই অঞ্চলে আফ্রিকমের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা ও গোয়েন্দা নজরদারি।

আরো পড়ুন: রাশিয়ার চেয়েও সৌদির সামরিক ব্যয় বেশি!

ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করার পর সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে শুধু রাশিয়াকে অতিক্রম নয়, বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে তৃতীয় শীর্ষ বরাদ্দকারী দেশের অবস্থানে পৌঁছেছে সৌদি আরব।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরব ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ৬৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৯.২ শতাংশ বেশি।


এর আগে সামরিক বাজেট বরাদ্দের দিক দিয়ে আমেরিকা ও চীনের পর রাশিয়া ছিল তৃতীয় এবং সৌদি আরব ছিল চতুর্থ। কিন্তু গত বছর রাশিয়া সামরিক বাজেটের পরিমাণ এক পঞ্চমাংশ হ্রাস করায় সৌদি আরব তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। সৌদি আরব একাই পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে সামরিকীকরণ করার চেষ্টা করছে। সামরিক খাতে সৌদি আরবের এ পদপে কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

এক দিকে, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করছে। দেশটি ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ও বিপুল অস্ত্র কিনছে। এসআইপিআরআইয়ের একজন গবেষক সিমন বেসম্যান বলেছেন, রিয়াদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ। এসব যুদ্ধবিগ্রহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সৌদি আরব জড়িত। সিরিয়ায় তৎপর আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা হচ্ছে সৌদি আরব।

সামরিক খাতে সৌদি আরবের ব্যাপক অর্থ বরাদ্দের আরেকটি বাধ্যবাধকতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক। সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে অস্ত্রসম্ভারের ছবি তুলে ধরেছেন তা বিরল। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অর্থ আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব ২০১১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এখন অস্ত্র ব্যয় দেশটির মোট জিডিপির শতকরা ১০ শতাংশ।

সৌদি আরবের ৬৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয়ের পাশাপাশি রাশিয়ার এ ব্যয় ৬৬, ফ্রান্সের ৫৭, ভারতের ৬৩ এবং ব্রিটেনের খরচ হচ্ছে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময় অর্থাৎ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৬০৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চীনের সামরিক বাজেট ছিল ২২৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সঙ্ঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে বাধ্য।

গত বছর সৌদি আরবে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সফরে যান তখন দেশটির কাছে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সই হয়। গত বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয় তার আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৭৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

গত বছর শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৬.২ শতাংশ যা এসব দেশের জিডিপির ৫.২ শতাংশ। সাত থেকে ১০টি মুসলিম দেশ এ ধরনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এরা হচ্ছে ওমান, যার অস্ত্র ব্যয় জিডিপির ১২, সৌদি আরব ১০, কুয়েত ৫.৮, জর্ডান ৪.৮, লেবানন ৪.৫ এবং বাহরাইন জিডিপির ৪.১ শতাংশ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আলজেরিয়ার সামরিক ব্যয় ৫.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে প্রযুক্তি ব্যয় ইরান তার ৮০ মিলিয়ন জনসংখ্যার তুলনায় অন্তত ইসরাইলের চেয়ে বৃদ্ধি করেছে। ইসরাইলের জনসংখ্যা ৯ মিলিয়ন। ১৯৯৬ সালে ইরান ৯৬০টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করে এবং একই বছর ইসরাইল করে ১০ হাজারটি। এরপর ইরানে এ ধরনের গবেষণা প্রবন্ধ বাড়তে থাকে। হারেৎজ বলছে, বছরে ৪১ হাজার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করছে ইরান। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় তুরস্ক ও সৌদি আরবও পিছিয়ে নেই।


আরো সংবাদ



premium cement