২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন, যেতে হলো জেলে

ডায়ান রইগারা - ছবি : সিএনএন

রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মী ছিলেন ডায়ান রইগারা। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নেয়া ডায়ান চেয়েছিলেন দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে, সে লক্ষ্যে প্রেসিডন্টে নির্বাচনে প্রার্থীতাও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরিণত এতটা ভয়াবহ হবে ভাবতে পারেনি কেউ, ডায়ান ও তার মা এখন কারাবন্দী-তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বিচার চলছে।

কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পাওয়া যাবে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার রাজনীতির এক কালো অধ্যায়ের চিত্র। এক সময়ের গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটি এখন একনায়কের কবলে। দেড় যুগ ধরে দেশটিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট পল কাগামে। ৬০ বছর বয়সী কাগামো আইনি মারম্যাচে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকার পথ তৈরি করেছেন। এরপরও চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তার পরিণতি হবে ডায়ানের মতো। এমনিতে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে রুয়ান্ডার রাজনীতি অনেক নারীবন্ধব।

দেশটির ৬০ শতাংশ পার্লামেন্ট সদস্য নারী, ৭ জন বিচারপতির মধ্যে চারজনই নারী। কিন্তু সেই দেশটিতেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চাওয়ার কারণে ডায়ানকে থাকতে হচ্ছে কারাগারে। মূলত প্রেসিডেন্ট কাগামোর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা ও তার বিরুদ্ধে প্রার্থীতা ঘোষণার পর জনগনের সমর্থনের কারণেই ক্ষোভের শিকার হতে হয়েছে তাকে।

২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দেশে ফেরেন ডায়ান। তার বাবার মৃত্যুও ছিলো রহস্যজনক। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও সেটি নিয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি তুলে প্রথম সরকারের বিরাগভাজন হন ৩৭ বছর বয়সী ডায়ান। তার বাবা ছিলেন নামকরা ব্যবসায়ী, পরিবারের অভিযোগ সরকার তার ব্যবসায় দখল করতে চাইলে বাধা দেয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয় রাস্তায় ট্রাক চাপা দিয়ে।

২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন ডায়ান। নির্বাচনী হলফ নামায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে মনোনয়ন বাতিল করা হয় তারা। আইন অনুযায়ী কিছু সংখ্যক ভোটারের স্বাক্ষর দাখিল করতে হয় মনোনয়ন পত্রের সাথে। ডায়ান সেখানে মৃত ব্যক্তিদের স্বাক্ষর দাখিল করেছেন বলে দাবি করে নির্বাচন কমিশন। কয়েকদিন পর গ্রেফতারও করা হয় তাকে।

এক সময় দেশটিতে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন প্রেসিডেন্ট কাগামো। রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধ ও সহিংসতা বন্ধে তার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠি আরপিএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ওই গৃহযুদ্ধে চার মাসেরও কম সময়ে ৮ লাখ লোককে হত্যা করা হয়েছিলো। ২০ লাখ লোক পালিয়েছে দেশ ছেড়ে।

কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যান তিনি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছেন দীর্ঘদিন ধরে। দেশটিতে নির্বাচন যা হয়, তা মূলত অনেকটাই সাজানো। চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন এমন কাউকে প্রার্থী হতে দেয়া হয় না।

ডায়ানের পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, তাদের সবার গতিবিধির ওপর সারাক্ষণ নজর রাখে সরকারি লোকরা। ডায়ানের সমর্থকদের অনেকেকে জেলে যেতে হয়েছে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ দেশ ছেড়েছেন।

ডায়ান নিজেও জানতেন যে পল কাগামোর বিরুদ্ধে যাওয়া মানে ‘আত্মহত্যা’, কিন্তু কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদী হতেই হবে। তাই পরিবারে সদস্যদের বিরোধীতা সত্ত্বেও তিনি রাজনীতিতে নামেন। দরিদ্র ও তরুণ সমাজ ব্যপক সমর্থন দেয় তাকে। আর সেটাই ভয়ের কারণ হয়ে দাড়ায় প্রেসিডেন্টের জন্য। ডায়ান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে বিচার চলছে দেশটির আদালতে। তাদের ব্যবসায় বাজেয়াপ্ত করেছ সরকার।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সিএনএনের পক্ষ থেকে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট অফিস, পুলিশ বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। সূত্র: সিএনএন


আরো সংবাদ



premium cement