সামাজিক মাধ্যমে 'গুজব' ঠেকাতে বিজ্ঞাপন
- বিবিসি
- ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৩:০১, আপডেট: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৩:০৯
মিসরে ফেসবুকসহ সামাজিক নেটওয়র্কে 'গুজব' ঠেকাতে টেলিভিশনে সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। দেশটিতে তিন মাসে ২১ হাজার গুজব ছড়িয়েছে।
এক জনসমাবেশে এই তথ্য তুলে ধরে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। এরপর থেকে সতর্কবার্তা দিয়ে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।
দেশটিতে সামাজিক নেটওয়র্কে সর্বশেষ ছড়িয়েছিল, একটি মানব পাচারকারী দল তিনটি শিশুকে কায়রোতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর হত্যা করেছে।
এটি প্রত্যাখান করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে।
সেই বিজ্ঞাপনে নিরাপত্তা বাহিনীকে উদ্ধৃত করে প্রচারণাটিকে গুজব হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, "সামাজিক নেটওয়ার্কে আপনি যা দেখবেন, তার সবটাই বিশ্বাস করবেন না।"
বিজ্ঞাপনে এও বলা হয়েছে, "সামাজিক নেটওয়ার্কে কোনো খবর শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নিন। খবর জানার জন্য বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য মাধ্যমের উপর নির্ভর করুন।"
আরেকটি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।
এই বিজ্ঞাপনে ১০ দিনের একটি সময়সীমা ধরে সেই সময়ে সামাজিক নেটওয়ার্কে আটটি 'গুজব' ছড়ানোর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম মিথ্যার একটি প্ল্যাটফর্ম বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে আটটি গুজবের কথা বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তার একটি হচ্ছে, মিসরের একটি তহবিলের আওতায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
এটিকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করাই এই তহবিলের লক্ষ্য এবং সেটাই তারা করছে।
সামাজিক মাধ্যমে আরেকটি ঘটনা প্রচার করা হয়েছিল যে, সুয়েজ খালে ছয়টি জাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে।
কিন্তু সেখানে এ ধরণের কিছুই ঘটেনি বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
'গুজব দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে'
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি সামাজিক নেটওয়ার্কে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে যে প্রচারণায় চালাচ্ছেন, দেশটির সংবাদমাধ্যমও একই ধরণের প্রচারণায় নেমেছে।
গুজব দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলে সিসি যে বক্তব্য দিয়েছেন, পত্রিকাগুলো তা গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে।
গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সিসি'র হুঁশিয়ারিকে মিসরের সংবাদমাধ্যম প্রধান শিরোনাম হিসেবেও প্রকাশ করেছে।
যেমন একটি বেসরকারি পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম করা হয়েছে, "সিসি- তিন মাসে আমরা ২১ হাজার গুজবের মুখোমুখি হয়েছি।"
অনলাইন সংবাদপত্র বা নিউজ ওয়েবসাইটগুলোও এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিচ্ছে।
তারা সরকারি কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সাক্ষাৎকার প্রচার করছে, তাতে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে বক্তব্য থাকছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে একটি ওয়েবসাইট বলেছে, যুবকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টির টার্গেট নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
সরকারের মিডিয়া এবং গুজব মনিটরিং ইউনিটের পরিচালক নাইম সাদ বলেছেন, তাদের টিম থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সামাজিক নেটওয়ার্কে গুজব চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং প্রতিটির জবাবও তুলে ধরা হচ্ছে।
আরো পড়ুন : মুরসির বিচার স্থগিত, মিসরে কীসের ইঙ্গিত?
সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিচার স্থগিত করেছে দেশটির একটি আদালত। মিসরের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত অবৈধ প্রবেশ- নামে পরিচিত একটি মামলা আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে কায়রোর অপরাধ আদালত।
২০১২ সালের ৩০ জুন মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। এর এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
তখন থেকেই মুরসি আর তার হাজার হাজার সমর্থক বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এসব বিচারকে রাজনৈতিক আখ্যা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি মিসর সরকার।
২০১৩ সালের ওই অভ্যুত্থানের পর মিসরীয় কর্তৃপক্ষ বিরোধী আর সমালোচকদের ওপর নজিরবিহীন দমন অভিযান শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে অনেককেই বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে, গুম করে ফেলা হয়েছে। (২১ জুলাই ২০১৮, প্রকাশিত সংবাদ)