২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যে শহরে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ আতঙ্কে থাকেন নারীরা

ধর্ষণ
পুলিশের ভূমিকায় বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা - ছবি : বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার দারিদ্র্য-পীড়িত শহর ডিয়েপস্লুট। কিন্তু অভাবের চেয়েও এখন এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা- নিরাপত্তাহীনতা। বিশেষ করে এখানকার প্রতিটি নারীকে প্রতিনিয়ত থাকতে হয় ধর্ষণ আতঙ্কে।

অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা । ফলে এখানকার পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, এমনকি অনেকে ধর্ষক পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।

কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই শহরটি সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হল?
দেশটির পিছিয়ে পড়া এই শহরটি নারীদের জন্য কতোটা বিপদজনক তার আভাস পাওয়া যায় স্থানীয় ভুট্টা বিক্রেতা মারিয়ার ভাষ্যে। তিনি জানান, রাত ঘনালেই এই শহর নরকে পরিণত হয়।

মিসেস মারিয়া বলেন, ‘আমি জানি এখানে অনেক নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। আমার ভাবতে কষ্ট হয়, ভয়ও লাগে। কারণ কে জানে একদিন হয়তো আপনার নিজের কেউ এর শিকার হতে পারে। মেয়েরা শুধুমাত্র বাড়ির ভেতরেই নিরাপদ। কেউ যদি প্রয়োজনে একটু বের হয় তাহলে তার ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চলে।’

তবে নিজ বাড়িতে থেকেও রক্ষা পাননি মিসেস মারিয়া। তিন মাস আগেই তিনি দুইবার ধর্ষণের শিকার হন, একই ব্যক্তির দ্বারা। সেসময় তার চার বছর বয়সী মেয়েটি তার বাড়িতেই ছিল।

মিসেস মারিয়া জানান সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা।

‘আমার মেয়েটা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ ওই লোকটা আমার বাড়িতে ঢুকে মোবাইল আর টাকা চাইলো। আমি গরিব, ওসব আমার কিছুই ছিল না। তখন সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে নির্যাতন চালায়। আমি চিৎকার করতে পারিনি। চাইনি মেয়েটা জেগে উঠুক। ভয় পেয়েছিলাম, যদি তার সাথেও এমন কিছু হয়?’

এখানকার স্থানীয় এক সাংবাদিক গোল্ডেন মাটিকা। তিনি জানালেন এই শহরটি কিভাবে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে?

‘অপরাধীরা এখানে অনেক নিরাপদ। যারা কোনো অপরাধ করে না, তাদের চাইতে অনেক আরামে আছে তারা। কারণ এই শহরে তারা যা খুশি তাই করতে পারে। তারা জানে তাদের ভয়ে কেউ রাতে বের হবে না।’

মিস্টার মাটিকা তার টেলিভিশন প্রামাণ্য চিত্রের জন্য নারীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেন।

সেখানে ডিয়েপস্লুট শহরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ স্বীকার করেছে যে, তারা নারী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত।

তাদের মধ্যে এমন দুই ব্যক্তি ছিল যারা ক্যামেরার সামনে নির্দ্বিধায় জানায় তারা ধর্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্বিত। ওই ভিডিওতে তারা বর্ণনা করে নিজেদের সেসব অপকর্মের কথা।

‘কোন বাড়ির দরজা খোলা পেলেই ভেতরে ঢুকে যেতাম। তারপর ছুরি বের করে নারীদের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতাম।’

এই নির্যাতন ওই নারীর ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে -এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এমন বিষয় কখনোই মাথায় আসেনি। কারণ তখন মাথা ঠিক থাকে না।’

এ ধরণের মানুষের নির্লজ্জতা বা বেহায়াপনা দেখে এখন আর কেউই অবাক হয় না। কেননা প্রতিবার ভয়াবহ অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় তারা।

গত পাঁচ বছরে পুলিশের কাছে ধর্ষণের পাঁচশ মামলা দায়ের করা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র একটির।

বিচারহীন এই সমাজে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় স্থানীয়রা এখন নিজেরাই নিজেদের নিয়ম তৈরি করেছে।

তেমনই একটি ভয়াবহ উদাহরণ সৃষ্টি শহরের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, শহরের এ প্রান্তেই সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়।

কয়েক মাস আগেই এই নদীর তীরে কয়েকজন সন্দেহভাজন অপরাধীকে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

মিস্টার মাটিকা সেই দৃশ্য তার ক্যামেরায় ধারণ করেন। কি ঘটেছিল সেদিন? জানান মিস্টার মাটিকা, ‘ওইদিন দাঙ্গাকারীরা তিন সন্দেহভাজন ধর্ষককে ধরে আনে। তারা আরো নানা ধরণের অপরাধে জড়িত ছিল বলেও অভিযোগ। জনতা তাদের প্রচুর মারধর করে। একজনের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাঙ্গা থামাতে পুলিশের একটি দল আসে ঠিকই কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক কম ছিল। পরে তারা ব্যাকআপের জন্য আরো পুলিশ ডাকে। ওই সন্দেহভাজনদের ততোক্ষণে প্রায় আধমরা অবস্থা।’

ডিয়েপস্লুট শব্দের অর্থ ‘গভীর খাদ’। আর এখানকার মানুষ নিজেদের জীবনকে এই ময়লার ভাগাড়ের সঙ্গে তুলনা করেন, যেখানে তাদের নিরাপত্তার কোনো মূল্যই নেই। যেখানে তাদের আবর্জনার মতোই ছুঁড়ে ফেলা হয়।

সূত্র : বিবিসি

আরো পড়ুন :
ধর্ষণকে শত্রুতার নতুন অস্ত্র হিসেবে দেখছেন ভারতের মুসলিমরা
আলজাজিরা, ২২ এপ্রিল ২০১৮
কাশ্মিরের উপজাতিরা আধুনিক ভারতের কোনো সুযোগ-সুবিধাই পায় না। পাহাড়ে ছাগল, গরু আর ঘোড়া চরিয়েই তাদের জীবিকা চলে। তারা সাধারণত খবরেই আড়ালেই থাকে, কিন্তু সম্প্রতি আট বছর বয়সী শিশু আসিফা বানুর অপহরণ করে মন্দিরে আটকিয়ে চার দিন ধরে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের সমস্যাগুলো সামনে আসে।

হিন্দু অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের মুসলিম শিশুটি হিন্দুদের দ্বারা গণধর্ষণ ও নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তার অভাবে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। ৭৪ বছর বয়সী গোলাম মোহাম্মাদ রাস্তার পাশের ইউক্যালিপ্টাস গাছের নিচে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, হিন্দুরা চায় না আমরা এই এলাকায় থাকি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের মনে অনেক শত্রুতা রয়েছে। গোলাম মোহাম্মাদ আরো বলেন, আমি ধর্ষণের ঘটনাটি রেডিওতে শুনেই এলাকা ছেড়েছি। এখন রাস্তার পাশের তাবুতে আছি, সাথে আমার মেয়েও আছে। চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না, সবসময় ভয়ে থাকি, মনে হয় হয়তো কেউ আসছে।

পুলিশ বলছে, সম্প্রতি আসিফাকে মাদকাসক্ত করে আটজন মিলে চার দিন ধরে মন্দিরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে মাথায় পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; যা বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ওই ক্যাম্পেরই এক বাসিন্দা রেসনা বিবি তার দশ বছর বয়সী নাতনীর দিকে দেখিয়ে বললেন, আসিফা এর মতো বড়ই ছিল। জম্মু-কাশ্মির একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্য হলেও জম্মু এলাকায় হিন্দু বেশি। মুসলিম যাযাবররা সাধারণত অতিরিক্ত শীত থেকে বাঁচতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এই এলাকায় আসে। কিন্তু স্থানীয় হিন্দুদের তোপের মুখে পড়তে হয়। যদিও ওই সব ভূমির মালিকানা নির্দিষ্ট কোনো হিন্দুর নয়।

মোহাম্মদ বলেন, জম্মু থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। আমরা জম্মু ছেড়েছি তিন দিন আগে। আরো দুই সপ্তাহ লাগবে মূল শহর শ্রীনগরে পৌঁছতে। রেসনা বিবি বলেন, এটা কোনো জীবন নয়, আমি চাই আমার সন্তান লেখাপড়া করুক।


আরো সংবাদ



premium cement
আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা দেবে শামসুল হক ফাউন্ডেশন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির এক সপ্তাহ পর বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত সমন্বয়কদের ওপর হামলা হালকাভাবে দেখছে না সরকার কমছে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি গাজীপুরে কোরআন অবমাননার অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার অযাচিত অস্থিরতা নয়, দায়িত্বশীল হোন সুখী : দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন বেসরকারি স্কুল-কলেজে সাত পদে এনটিএসসির অধীনে নিয়োগ এই মুহূর্তে হঠকারিতা দিকে যাওয়া জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে : মির্জা ফখরুল পাইকগাছার নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

সকল