আত্মপ্রচারে ব্যস্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তা
- শামছুল ইসলাম
- ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪৪
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য ৬৪ জেলায় ত্রাণ কার্যপরিচালনার জন্য আট হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল ও দুই কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ফান্ড থেকে মাঠ প্রশাসনে পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ অব্যাহত রেখেছে সরকার। সরকারি শৃঙ্খলা মেনে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও অনেকে এটাকে ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। এ ঘটনায় বিব্রত খোদ প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। তারা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ প্রবণতা বন্ধের দাবি জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাইরে আসায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে বিতর্কিত হন যশোরের মনিরামপুরের এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান। এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে জনসমক্ষে পিটিয়ে আহত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি)।
এ ঘটনায় এসিল্যান্ড নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, মেম্বারকে আরো পেটানো উচিত ছিল। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা আক্তারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় তার অফিস পিয়ন লোকজনকে কানে ধরিয়ে লাঞ্ছনা ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার শিকার হচ্ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঠিক তখনই সরকারের রুটিন কাজ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আত্মপ্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
একাধিক ডিসির বিরুদ্ধে স্থানীয় কর্মচারীদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক তার ফেসবুক পেজে যেসব ছবি বা উন্নয়ন কাজের তথ্য তুলে ধরবেন সেগুলো তাদের লাইক ও শেয়ার দিতে হবে। অনেক সময় সেগুলো লাইক শেয়ার না দিলে তাদের বেতন ভাতায় স্বাক্ষর করেন না জেলা প্রশাসকরা। ফলে তার নিচের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের ছবি ও কাজের দেয়া ফিরিস্তিতে লাইক শেয়ার দিতে বাধ্য হন।
আছে আবার ভিন্নচিত্রও। অনেক কর্মকর্তা নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই দুর্যোগে নতুন নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে জনগণের সেবায় ব্যস্ত রয়েছেন। ত্রাণ কাজে সাধারণের পাশে গোপনে দাঁড়িয়ে অধস্তনের কাজ দেখভাল করছেন। দিনরাত পরিশ্রম করে অসহায়-দুস্থদের ত্রাণ বিতরণ করলেও কোন ফটোসেশন করছেন না।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদকে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা কাঁধে নিয়ে নিম্নআয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। একাধিক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার পরও একজন জেলা প্রশাসক নিজেই চালের বস্তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
একইভাবে ভাইরাল হয় সরকারি দামি জিপ রেখে সাইকেল চালিয়ে একজন ইউএনওর জনসেবা করার ছবি। গত শনিবার রাতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মাধখলা চৌরাস্তা বাজারে আগুন লাগলে উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনে সাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউএনও শেখ মহিউদ্দিন।
এসব বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন বলেন, মাঠ প্রশাসনে সবসময়ে কিছু লোক শো-অফ করার চেষ্টা করে। আমি এটাকে সাংঘাতিকভাবে দেখি না। যারা সিনিয়র আছে তারা বুঝতে পারেন কে কি করছে। বরং আমার কাছে খারাপ লাগে যখন তারা সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এগুলো খ্বুই দুঃখজনক। যেখানে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা আছে সেখানে কিছু লোক থাকবে তো একটু বাড়তি শো-অফ করার জন্য। আমি দেখি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যানা সদস্যরা এগুলো করছে। তখন কেউ কিছু বলছে না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত না। সবার মধ্যে এক ধরনের পরিমিত বোধ থাকা উচিত। আমাদের পরিমিত বোধ খ্বু কম। বাড়াবাড়ির মধ্যে যদি খারাপ কিছু থাকে তাহলে এর মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হওয়া উচিত।
সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা তাদের মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে। তারা মনে করছে আমি কি হনুরে। এটার জন্য অনেকটাই দায়ী আমাদের সরকার। তবে বর্তমান সরকারকে বলছি না, সব সরকারকে বলছি। প্রশাসন, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, তারা মাথায় উঠে বসেছে। একটা কড়া অনুশাসনে যাওয়া উচিত সবপর্যায়ে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। সেটা প্রশাসন, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কেউ হোক। দায়িত্ব পালন করার জন্য সবাইকে সেবার মনোযোগ থাকতে হবে। সাহায্য করার মানসিকতা থাকতে হবে। সর্বোপরি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।