২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

টঙ্গী-পাটুরিয়া রেলপথ সমীক্ষা ও নকশায় ২৮ পরামর্শক

টঙ্গী-পাটুরিয়া রেলপথ সমীক্ষা ও নকশায় ২৮ পরামর্শক - সংগৃহীত

কারিগরি প্রকল্প হলেও কিছু কিছু প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় ও পরামর্শকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত রাখা হয়। কম বা সহনীয় খরচের মধ্যে যে কারিগরি বা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা সম্ভব হতো সেটায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। ঢাকার টঙ্গী থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার নতুন করে রেলপথ নির্মাণের পদক্ষেপের প্রথম ধাপ হিসেবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা করার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সরকারি অর্থায়নের এই প্রকল্পে দেশী ও আন্তর্জাতিক মিলে ২৮ জন পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতি মাসে পরামর্শকদের পেছনেই যাবে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা বলে প্রস্তাব থেকে জানা গেছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ প্রকল্পের সাথে সংযোগ রেখে কেরানীগঞ্জ থেকে নিমতলী পর্যন্ত (ভায়া মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া) রেললাইন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত এলাইনমেন্ট নির্ধারণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা প্রস্তুত, বিস্তারিত নকশার ওপর ভিত্তি করে ব্যয় প্রাক্কলন, টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত এবং নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শকের কার্যপরিধি প্রস্তুত করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

জানা যায়, দেশের ৪৪টি জেলায় রেল নেটওয়ার্ক আছে। সম্প্রতি সরকার ৩০ বছর মেয়াদি যে রেল মাস্টার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে তাতে দেশে বাকি সব জেলাতেই রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শহর ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ঢাকার সাথে মানিকগঞ্জের কোনো রেল যোগাযোগ নেই। সেই রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই এই কারিগরি সমীক্ষা প্রকল্প। আড়াই বছর লাগবে এই প্রকল্পটির মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন করতে।

ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, আড়াই বছরের প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থ। ফিজিবিলিটি স্টাডি ও বিশদ নকশা তৈরিতে আন্তর্জাতিক পরামর্শক লাগবে সাতজন এবং দেশীয় পরামর্শক প্রস্তাব করা হয়েছে ২১ জন। এই দুই কাজে মোট ২৮ জন পরামর্শক লাগবে। যাদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সম্ভাব্যতা যাচাই পর্যায়ে ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, আর নকশা তৈরিতে ২০ কোটি ৯১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ফলে এখানে প্রতি মাসে গড়ে পরামর্শক খাতে খরচ হবে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর প্রতি পরামর্শক গড়ে পাবেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর সাথে রয়েছে আটজন সাপোর্ট স্টাফ। তাদের বেতন হবে আলাদা।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটি নিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সচিবের নেতৃত্বে প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা হয়। সেখানে সরকারের ভবিষ্যতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ও সেতু বিভাগের চলমান কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই থাকার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। জানানো হয়, এই মুহূর্তে কোনো স্টাডি নেই। বলা হয়, টঙ্গী-পাটুরিয়ার পরিবর্তে ঢাকার আউটার রিং বিবেচনায় পদ্মা রেল সংযোগের সাথে এলাইনমেন্টের সাথে ইন্টারফেইসিং রেখে কেরানীগঞ্জ-নিমতলী ভায়া মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সমীক্ষা প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করে কারিগরিভাবে পরীক্ষান্তে উপযোগী এলাইনমেন্ট করার জন্য সম্মত হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ভিন্ন।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, রেললাইনটির এলাইনমেন্ট নির্ধারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের চলমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাধীন কাজের সাথে সামঞ্জস্য রাখার বিষয়ে পরামর্শকের টার্মস অব রেফারেন্সে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এত ছোট একটা প্রকল্পে এত বেশি পরিমাণ পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই ব্যয় পরামর্শকের সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে করে ২০ কোটি টাকায় আনা সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement