বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব : ৯ হাজার কোটি টাকা তুলতে চায় পিডিবি
- আশরাফুল ইসলাম
- ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:২২
বিদ্যুতের আরেক দফা দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের পকেট থেকে বাড়তি ৯ হাজার কোটি টাকা তুলতে চায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিয়েছে সংস্থাটি। পিডিবির সাথে আরো কয়েকটি বিতরণ কোম্পানিও গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করছে বিইআরসি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সিরিজ গণশুনানি শুরু হবে। আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গণশুনানি চলবে।
বিইআরসির সদস্য মো: আবদুল আজিজ খান আগামীকাল থেকে গণশুনানির বিষয়টি নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। গণশুনানি শেষ হওয়ার পর বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেবে মূল্য সমন্বয় করা হবে কি, হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিনা টেন্ডারে কুইক রেন্টালের যখন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল এটা স্বল্প সময়ের জন্য করা হচ্ছে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এসব ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কয়লাভিত্তিক সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ খাত দীর্ঘমেয়াদি ভর্তুকির নিচে পড়ে গেছে। এমনি পরিস্থিতিতে জনগণের ঘাড়ে বাড়তি মূল্য চাপিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করা হচ্ছে। ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরই নির্ভরশীলতা এখন বাড়ছে। সামনে গ্যাসের পরিবর্তে এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। সবমিলে পুঞ্জীভূত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকবে। জনগণকে এর খেসারত দিতেই হবে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ছিল কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ানো। সেটা সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায়ও ছিল। কিন্তু সেটা ঝিমিয়ে পড়ায় এ দুর্গতি হচ্ছে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, পিডিবি পাইকারি ও খুচরা, পিজিসিবি সঞ্চালন মূল্যহার ও সব বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের জন্য কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছে। আবেদন পাওয়ার পর কমিশন গণশুনানির এই তারিখ নির্ধারণ করেছে। সবার আগে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য পরিবর্তনের আবেদন করে পিডিবি। গত ২৩ অক্টোবর তারা এই আবেদন কমিশনের কাছে জমা দেয়। আবেদনে পিডিবি জানায়, ২০২০ সালে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হতে পারে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময় প্রয়োজন হবে ৪৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ফলে বাকি আট হাজার ৬০৮ কোটি টাকা পূরণের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। এ জন্য মূল্য সমন্বয় করতে কমিশনের কাছে অনুরোধ জানায় তারা। একইভাবে তারা জানিয়েছে, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলে খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এ বিষয়েও বিইআরসির কাছে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ দিকে পিডিবির পাশাপাশি গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব করেছে পাঁচ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, আরইবি ও ওজোপাডিকো। পিজিসিবিও সঞ্চালন চার্জ সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বিইআরসি সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনে কত মূল্য বাড়ানো হবে এমন কিছু উল্লেখ করেনি। তবে বিভিন্ন পরিচালন-ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার বাড়ালে যে হারে পাইকারি মূল্যহার বাড়বে, সেভাবে কোম্পানিগুলোর বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি কমিশনের বিবেচনার অনুরোধ জানায়।
গণশুনানির বিষয়ে বিইআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রস্তাবিত পাইকারি মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি হবে। এরপর বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর প্রস্তাবিত সঞ্চালন মূল্যহার পরিবর্তন নিয়ে শুনানি হবে। এরপর ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি। প্রথম দিন (১ ডিসেম্বর রবিবার) সকাল ১০টায় শুরু হবে পিডিবির গ্রাহকপর্যায়ের মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর শুনানি। একই দিন বেলা ২টায় শুরু হবে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) শুনানি। ২ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এবং দুপুরে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)-এর শুনানি। এরপর ৩ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এবং দুপুরে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)-এর গ্রাহকপর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে গ্রাহকপর্যায়ে ২০১৭ সালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়। তখন ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা বা ৫.৩ শতাংশ হারে মূল্য বাড়ানো হয়, যা একই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। কিন্তু ওই সময় পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়নি। এর আগে ২০১৫ সালে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮.১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।
আর চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা