অডিট ম্যানেজের টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২৩, আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২৩
জেলা, উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব রক্ষকদের ঢাকায় ডেকে এনে অডিটের টাকা তোলার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
গত ৩ জানুয়ারি ‘ছুটির দিনে সারাদেশ থেকে খামারবাড়ি ডেকে টাকা তুলছে প্রকল্প অফিস’ শিরোনামে দৈনিক নয়া দিগন্তে খবর প্রকাশের পর গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পার্টনার প্রকল্পের পিডি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করে আসছেন। দোষ চাপাচ্ছেন তার হিসাবরক্ষক মানিক পাটোয়ারির উপর। তবে, তদন্ত কমিটি তদন্ত করে টাকা আদায়ের সত্যতা পেয়েছে।
প্রতিবেদনে মতামতে উল্লেখ করা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, অডিট নিষ্পত্তির কাজটা ১৫ জানুয়ারি হওয়ার কথা থাকলেও ৩ ও ৪ জানুয়ারি জেলা ও উপজেলা থেকে অডিটের নামে লোকজন ডেকে এনে অডিটের বিষয়ে কাগজপত্র জমা রাখা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হওয়া ব্যক্তিরা স্বীকার না করলেও ২ শতাংশ হারে টাকা নেয়ার বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত কমিটি কয়েকটি কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষক/অফিস সহকারীর সাথে টেলিফোনে কথা বললে তারা কাগজপত্রের সাথে টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের একাধিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বীকারোক্তি রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশ থেকে জেলা-উপজেলা, কৃষি অঞ্চল ও হর্টিকালচার সেন্টারের হিসাবরক্ষকদের ঢাকায় ডেকে এনে অডিটের (নিরীক্ষা) জন্য দু’থেকে আড়াই শতাংশ হারে টাকা তুলছেন কৃষির সবচেয়ে বড় প্রকল্প পার্টনার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট সম্পন্ন করার জন্য সারাদেশ থেকে হিসাবরক্ষকদের খামারবাড়িতে প্রকল্প অফিসে ডাকা হয় শুক্রবার (৩ জানুয়ারি)। বিগত বছরে বরাদ্দকৃত অর্থের খরচের বিল ভাউচার বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয় তাদের। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা অডিট বা নিরীক্ষা সম্পন্নের জন্য খরচের নামে দুই থেকে আড়াই শতাংশ হারে টাকা নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়। সেই হিসাবে দু’কোটিরও বেশি টাকা তোলার আয়োজন করেছে পার্টনার।
উল্লেখ্য, দেশের ৪৯৫টি উপজেলা, ৬৪ জেলা ছাড়াও ১৪টি কৃষি অঞ্চল এবং ৭২টি হর্টিকালচার সেন্টারের বেশ কিছু সেন্টারে পার্টনার প্রকল্পের কার্যক্রম রয়েছে।
দৈনিক নয়া দিগন্তে খবর প্রকাশের পর পুরো খামারবাড়িতে হৈচৈ লাগে। এমন কী বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের পর বিভিন্নজন এ টাকা কীভাবে সরিয়েছেন তা নিয়েও মুখরোচক গল্প শোনা যায়।
এ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং) ড. ফ ম মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য দু’জন হলেন উপপরিচালক (লিসাসা) এ কে এম হাসিবুল হাসান ও উপ-পরিচালক (সম্প্রসারণ) ড. এইচ এম মনিরুজ্জামান। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেয়ার কথা বললেও তারা এতে সময় নেন। তদন্ত প্রতিবেদন জমা নিয়েও নানা নাটকীয়তা দেখা যায়। কমিটি ডিজিকে প্রতিবেদন জমা দিলেও তা একবার আটকে রেখে অনেক পরে তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয় বলে জানা যায়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এটি আটকানোর চেষ্টা করা হয় বলে জানা যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিজি ছাইফুল আলম গত সপ্তাহে জানান প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির কাছে পার্টনার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: মিজানুর রহমান লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, তার অফিসের হিসাব রক্ষক মানিক পাটোয়ারী মাঠ পর্যায় থেকে হিসাবরক্ষকদের ডেকে এনে অফিসে টাকা নিচ্ছেন এবং অডিটের জন্য কাগজ সংগ্রহ করছেন।
তিনি জানান, বন্ধের দিন আমি অফিস খোলা রাখার বিষয়ে অনুৎসাহিত করা সত্ত্বেও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন ডেকে এনে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে জানতে পেরে সাথে সাথে আমি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেই। এতৎসত্ত্বেও তিনি আমার কথা না শুনে বন্ধের দিন সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যান। পুরো বিষয়টি আমার অগোচরে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের কোনো অফিসের দায়িত্ব আমার নয়। সকল ‘কষ্ট সেন্টার’ নিজ উদ্যোগে তাদের অডিট কার্য সম্পাদন করবে, এটাই আমার মতামত এবং তা মানিক পাটোয়ারীকে পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন (৩ জানুয়ারি) মানিক পাটোয়ারীকে ফোন করে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দেই। নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগত হিসাব রক্ষকদের নিকট থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন।
সেদিন যে সমস্ত অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে তা সংশোধনের জন্য আমি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং সময় সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। সেদিন যারা উপস্থিত ছিল প্রত্যেককে শোকজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের হিসাবরক্ষক মানিক পাটোয়ারী জানান, পার্টনার প্রকল্পের পিডির মৌখিক নির্দেশে সারাদেশ থেকে হিসাবরক্ষণের ডাকা হয়েছে। তার এই কাজের সহযোগিতা করেছেন মো: শাহাদাত হোসেন (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর), মাহমুদুল্লাহ (অফিস সহকারী), মো: মুইদ এবং অনিয়মিত শ্রমিক মো: সোহাগ খান ও মো: নাঈম হোসেন। ঢাকা, দিনাজপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলের হিসাবরক্ষক/অফিস সহকারীদের অডিট কার্যক্রমের জন্য কাগজপত্র গ্রহণের জন্য ডাকা হলেও কোনো প্রকার টাকা পয়সা নেয়া হয়নি বলে জানান।
নয়া দিগন্তে খবর প্রকাশের দু’দিন পর হিসাবরক্ষক মানিক পাটোয়ারিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ বিষয়ে মানিক পাটোয়ারিকে পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা