১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ওএসডি কেন করা হয়, কর্মকর্তারা তখন কী করেন?

- সংগৃহীত

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুব কবির মিলন বলেছেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় আমাকে কোনো কাজই করতে দেয়া হয়নি। ওই সময় অফিসেও গিয়েছি হাতে গোনা কয়েকবার। তবে বেতন-বোনাস নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি, ঠিকঠাক পেয়েছি।’

রেলের টিকিট কালোবাজারি বন্ধসহ অনিয়ম-দুর্নীতিবিরোধী বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় আসা মাহবুব কবির মিলনকে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট হঠাৎ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা হলেও তাকে আর স্বাভাবিক দায়িত্বে ফেরানো হয়নি। ওএসডি থাকা অবস্থাতেই পরের বছর ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি।

সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ওই সময়টা অকারণে বসিয়ে না রাখলে দেশ ও মানুষের জন্য আমি আরো অনেক কাজ করতে পারতাম। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ার আফসোস আমার বাকিটা জীবন থেকেই যাবে।’

অবসর নিয়ে মিলন শেষমেশ ওএসডি থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন। কিন্তু প্রশাসনে এখনো অসংখ্য কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা চাকরিতে থেকেও রীতিমত ‘বেকার’ জীবন কাটাচ্ছেন।

এতে একদিকে যেমন মেধা ও শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে, তেমনি ওএসডি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিবছর সরকারকে গুণতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

ওএসডি আসলে কী?
খাতা-কলমে ‘ওএসডি’ একটি বিশেষ ধরনের পোস্টিং বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এর পূর্ণরূপ ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে ওএসডির বিধান চালু করা হয়। যার চর্চা পাকিস্তান আমলেও বলবৎ ছিল।

অতীতের রীতি মেনে স্বাধীন বাংলাদেশেও সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ওএসডি করার নিয়ম রাখা হয়। বর্তমানে দেশের সংস্থাপন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরকে ওএসডি করার বিধান রয়েছে।

এর বাইরে, অন্য বিভাগ, সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে সংযুক্ত করার নিয়ম চালু আছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

প্রশাসনিক প্রয়োজনেই দেশ স্বাধীনের পর জনপ্রশাসনে ওএসডি বিধান রাখা হয়েছিল বলে জানান সাবেক আমলারা।

সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান বলেন, ‘যেমন ধরেন প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো দুর্যোগের সময় বিশেষ কোনো দায়িত্ব পালন করতে হবে। তখন নিয়মিত দায়িত্বের একজন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করে সেই কাজে নিয়োজিত করা হয়।’

যেসব কারণে ওএসডি
বিশেষ দায়িত্বের বাইরেও আরো বেশ কিছু প্রশাসনিক প্রয়োজনে ওএসডি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে যাওয়া।

চাকরিরত অবস্থায় কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ টানা তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষায় বিদেশ গমন, অসুস্থতা বা চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটি নিতে চাইলে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে রাখা হয়।

সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান বলেন, ‘প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে থাকাকালে তাদের বেতন-ভাতা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্যই এটি করার প্রয়োজন পড়ে।’

একই কারণে পদোন্নতি পাওয়ার পর কর্মকর্তাকে তার নতুন পদে পদায়ন হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে ওএসডি করে রাখা হয়ে থাকে।

এছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ প্রেষণে অন্য কোনো বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানে গেলে কিংবা অন্য কোনো বিভাগে সংযুক্ত থাকা কর্মকর্তাকে সেখান থেকে অবসর দেয়ার সময় ওএসডি করার প্রয়োজন হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।

এর বাইরে, কর্মকর্তাদের কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কোনো অভিযোগ উঠলে সেটির তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখার বিধান রয়েছে।

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) আহ্বায়ক ড. মো: আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এটি করা হয়ে থাকে যেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা তার পদে বসে আগের মতোই অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যেতে না পারেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অভিযুক্ত কর্মকর্তা যেন কোনোভাবে তদন্তকাজে বাধা সৃষ্টি করতে না পারেন, সেটিও তাকে ওএসডি করার আরেকটি উদ্দেশ্য।’

তবে সরকার চাইলে এসবের বাইরেও যেকোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি করতে পারে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখানোর প্রয়োজন পড়ে না। জনস্বার্থে করা হয়েছে বলে অনেক সময় প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।’

এ ধরনের ওএসডি করা পেছনে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও কাজ করে বলে জানান বর্তমান ও সাবেক আমলারা।

রাজনৈতিক ওএসডি
প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তার বাইরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ওএসডি করার নজির রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান বলেন, ‘বিশেষ করে গত তিন দশকে যেহারে রাজনৈতিক বিবেচনায় অযৌক্তিতভাবে ওএসডির ঘটনা ঘটেছে, সেটি বেশ উদ্বেগজনক।’

মূলত ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনা রাজনৈতিক বিবেচনায় ওএসডির সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বর্তমান ও সাবেক আমলারা।

ওই বছর ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসার পর তাদের পদত্যাগের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঢাকায় ‘জনতার মঞ্চ’ তৈরি করা হয়, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও অংশ নেন।

বিএএসএর আহ্বায়ক ও সচিব মো: আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর কর্মকর্তাদের অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে চলে আসে এবং তাদের অনেকে পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের সময় ওএসডি হন।’

একইভাবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিএনপি শাসনামলে পদোন্নতি পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়।

এমনকি সম্প্রতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরেও একইভাবে শেখ হাসিনার শাসনামলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অনেকে ওএসডি হয়েছেন।

জনপ্রশাসন, নৌ-পরিবহনসহ বেশকিছু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকেও ওএসডির সেই তালিকায় দেখা গেছে। কিছুক্ষেত্রে আন্দোলন-বিক্ষোভের মুখেও আগের কিছু কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরাতে দেখা গেছে।

আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে প্রশাসনে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন-পদোন্নতি দেয়ার কারণেই এসব ঘটনা ঘটেছে।’

অন্যদিকে, রাজনৈতিক সরকারের সময় কেউ কেউ মন্ত্রী-এমপিদের কথা না শুনে নিয়ম মেনে কাজ করতে গিয়ে ওএসডি হয়েছেন, তেমন অভিযোগও আছে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী।’

বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘রেলের নিয়োগের ক্ষেত্রে তৎকালীন মন্ত্রী প্রভাব খাটাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার কথা না শুনে আমি নিয়ম মেনে কাজ করেছি। এ ঘটনার পরেই আমাকে ওএসডি করা হয়।’

২০২০ সালে মাহবুব কবির মিলন যখন ওএসডি হন, তখন রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম সুজন।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সম্প্রতি এক হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফলে অভিযোগের বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী সুজনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এমন ঘটনা অসম্ভব কিছু নয় বলে জানান সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান।

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর কথা না শুনলে বদলি বা ওএসডি করার নজির আছে বলেই কর্মকর্তারা অনেক সময় স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। আবার পদোন্নতি-পদায়নের লোভেও অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করে থাকেন।’

ওএসডি কর্মকর্তারা কী করেন?
নামের শেষে ‘বিশেষ ভারপ্রাপ্ত’ থাকলেও ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের বেশিভাগেরই আদতে কোনো ভারই বহন করতে হয় না বলে জানান সাবেক কর্মকর্তারা।

আবু আলম মো: শহীদ খান বলেন, ‘প্রশিক্ষণ, ছুটি ও সঙ্কটকালে বিশেষ দায়িত্বের বাইরে যারা ওএসডি হন, তাদের সেভাবে কোনো কাজই থাকে না। বসে বসে বেতন-ভাতা ভোগ করেন।’

তবে কাজ না থাকলেও নিয়মিত কার্যালয়, তথা সচিবালয়ে গিয়ে হাজিরা দিতে হয় কর্মকর্তাদের।

ড. মো: আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘দায়িত্ব না থাকায় সেখানে তাদের জন্য কোনো কক্ষ বা চেয়ার-টেবিল বরাদ্দ থাকে না। ফলে তাদেরকে লাইব্রেরিতে বসতে হয় এবং সেখানে রাখা হাজিরা খাতায় সই করতে হয়।’

খাতা-কলমে হাজিরা দেয়ার নিয়ম থাকলেও উচ্চপদের কর্মকর্তাদের বেশিভাগই সেটি অনুসরণ করেন না বলে জানা যাচ্ছে।

মো: মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘ওএসডি থাকা অবস্থায় সাধারণত যুগ্ম-সচিব বা তার ওপরের পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তা সেভাবে আর অফিস করেন না। কারণ গিয়ে তারা কী করবেন? কোথায় বসবেন?’

ওএসডি থাকা অবস্থায় মাহবুব কবির মিলন নিজেও খুব একটা কার্যালয়ে যাননি বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে গিয়ে লাইব্রেরিতে অফিস করাটা একজন কর্মকর্তার জন্য খুবই অবমাননাকর। বিশেষ করে, যখন গুরুতর কোনো অপরাধ না করেও তাকে ওএসডির শিকার হতে হয়।’

অন্যদিকে, যুগ্ম সচিবের নিচের পদ-মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যেও অনেকে নিয়মিত অফিস করেন না বলে জানান বর্তমান কর্মকর্তারা।

বিএএসএর আহ্বায়ক ড. মো: আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘যেহেতু কাজ নেই, সেজন্য তারাও অফিসে আসার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। তবে হাজিরা যেন ঠিক থাকে, সেজন্য সপ্তাহে এক দিন এসে বাকি দিনগুলোর জায়গাতেও সই করে চলে গেছেন- এমন ঘটনাও আমরা শুনেছি।’

আর যারা অফিসে যান, তাদের সময় কাটে অলস বসে থেকে।

তিনি বলেন, ‘অনেকে গল্প-গুজব করে সময় কাটান। কেউ হয়তো বইপত্র নেড়ে-চেড়ে দেখেন। কোনো কাজ নেই, কী করবে?’

মেধা ও অর্থের অপচয়
ওএসডি হওয়ার পর কর্মকর্তারা কোনো কাজ না করলেও তাতে বেতন-ভাতা আটকে থাকে না। পদ অনুযায়ী আগের মতোই বেতন-বোনাস, গাড়ি-বাড়িসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন বলে জানান কর্মকর্তারা।

সাবেক সচিব আবু আলম মো: শহীদ খান বলেন, ‘কাজে না লাগিয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের এভাবে বসিয়ে বসিয়ে বেতন-বোনাস দেয়াটা জনগণের করের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।’

২০১৩ সালে হাইকোর্টে জমা দেয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার আগের নয় বছরে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার ৬০০ জন।

ওই নয় বছরে তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫১ কোটি টাকা।

এর মধ্যে মুনির হোসেন নামে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে প্রায় ১১ বছর ওএসডি রাখার পর ২০২২ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, যা দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানান কর্মকর্তারা।

মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর এভাবে চাকরি থেকে বিদায় নেয়াটা যে কতটা কষ্টের এবং অসম্মানের, সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না।’

বছরের পর বছর ধরে কর্মকর্তাদের ওএসডি রাখা বন্ধ করতে ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সাবেক সচিব আসাফ উদ-দৌলা, যার রায় প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে।

হাইকোর্টের সেই রায়ে বলা হয়, সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে ১৫০ দিনের বেশি ওএসডি রাখা যাবে না।

এরপর গত তিন বছরে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা অনেকাংশে কমে এসেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ঠিক কতজন কর্মকর্তা ওএসডি আছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলেও সংখ্যাটি এক শ’র কিছু বেশি হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এদিকে, সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির (জিইএমএস) ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ওএসডি থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ জন সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিবের নাম রয়েছে।

শীর্ষ এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই ওএসডি হয়েছেন শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর।

ওই তালিকায় আরো প্রায় অর্ধশত অতিরিক্ত সচিবের নাম দেখা গেছে।

বিএএসএ আহ্বায়ক ড. মো: আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত শেষ করা উচিত বলে আমি মনে করি। সেখানে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ওএসডি করে না রেখে বরং তাকে বরখাস্ত বা অন্য কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না হলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।’

তারপরও প্রশাসনিক প্রয়োজনে কোনো কর্মকর্তাকে ওএসডি করার প্রয়োজন পড়লে তাকে বেকার বসিয়ে না রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বর্তমান ও সাবেক আমলারা।

আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, ‘বেকার বসিয়ে রাখলে কর্মকর্তাদের দক্ষতা কমে যায় এবং মনে দুঃখ-হতাশা দানা বাধে। সে কারণে তাদেরকে অলস বসিয়ে না রেখে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোই ভালো সমাধান হতে পারে।’

এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, গবেষণাসহ অন্যান্য সরকারি কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুব কবির মিলন।

তিনি বলেন, ‘এতে কর্মকর্তাদের মেধা এবং জনগণের করের টাকা- উভয়েরই অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।’

কী বলছে সরকার?
ওএসডি করার মাধ্যমে কর্মকর্তাদেরকে বেকার বসিয়ে রাখার ফলে যে মেধার পাশাপাশি যে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হচ্ছে, সেটি সরকারও স্বীকার করছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

এ জন্য ওএসডি কর্মকর্তাদেরকে বসিয়ে বেতন না দিয়ে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে এবং কিভাবে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের অন্য সরকারি কাজে যুক্ত করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।’

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ আমলে পদোন্নতি পাওয়া জ্যেষ্ঠ সচিব থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওএসডি হয়েছেন। প্রায় সবগুলো প্রজ্ঞাপনেই ওএসডির কারণ হিসেবে ‘জনস্বার্থে’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনাতেই তাদেরকে ওএসডি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্প্রতি ওএসডি হওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় পদোন্নতি বা ভালো পদায়ন হওয়া তো কোনো অপরাধ হতে পারে না। আমার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করুক। সেটা না করে ওএসডি কেন করা হলো?’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে নতুন সরকার।

উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়। কাজেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ওএসডি করার প্রশ্নই আসে না।’

গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর প্রশাসনে যে অস্থিরতা ও ধীরগতি দেখা যাচ্ছিল, সেই অচলাবস্থা কাটানোর জন্যই বিভিন্ন পর্যায়ে রদ-বদল এবং কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক প্রয়োজনেই এটি করতে হয়েছে। অন্য কোনো কারণে নয়।’

এখন যারা ওএসডি রয়েছে, দ্রুতই তাদের পদায়ন করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশকে দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি-পদায়নের কারণে কর্মকর্তাদের অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হচ্ছে। ফলে পদোন্নতিজনিত কারণেও অনেকে ওএসডি হয়ে আছেন, যেটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না।’

এছাড়া দলীয়করণের ফলে প্রশাসনে যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি কাটিয়ে সরকার পুরো জনপ্রশাসনকে পুনরায় নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে বলেও জানান উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই একটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করি।’

জনপ্রশাসনকে ঠেলে সাজানোর জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি কমিশন গঠন করেছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সাবেক আমলা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ওই কমিশনের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফরিদপুরে মেডিক্যালে চিকিৎসা সেবার মান আরো উন্নত করা উচিত’ মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার ইসরাইলের চূড়ান্ত যুদ্ধ ও বিলোপ শঙ্কা সিলেটে গরু-মহিষসহ পৌনে ২ কোটি টাকার মালামাল জব্দ ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১০৮ পলিথিন নিষিদ্ধে জবরদস্তি নয় সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রাকহেলপারকে মারধর করে টাকা ছিনতাই, গ্রেফতার ৪ সংবিধান : জনগণের ক্ষমতা না সোনার পাথর বাটি ‘জিএম কাদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে’ ৪৩তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ : ২০৬৪ জনকে নিয়োগ জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ড. আসিফ নজরুল

সকল