০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদায়নের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ

আন্দোলনে খাদ্য পরিদর্শকরা
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদায়নের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

খাদ্য অধিদফতরের আওতাধীন ১৩ গ্রেডের ৬৯ জন কর্মচারীকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে ‘চলতি দায়িত্ব’ প্রদান করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ‘যোগ্য কর্মকর্তা’ থাকা সত্ত্বেও নীতিমালার লঙ্ঘন করে তাদের ‘চলতি দায়িত্ব’ প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ব্যপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) খাদ্য অধিদফতরে প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন সারাদেশ থেকে আগত খাদ্য পরিদর্শকরা।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৬৯ জনকে পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। যা নিয়ে শুরু হয়েছে এ সমালোচনা। অথচ এই পদায়ন যাতে না হয়, সেজন্য নয় মাস আগে যখন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল তখন থেকেই এর প্রতিবাদ শুরু করে খাদ্য পরিদর্শকরা।

জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে এক হাজার ৪০০-এর মতো কর্মকর্তা রয়েছেন। যাদের বেশিভাগই এখন নবম গ্রেডের কর্মকর্তা।

খাদ্য পরিদর্শকরা বলছেন, প্রথমত জোষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক, সুপারিনটেনডেন্টের মতো পদের কর্মচারীদের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে পদায়ন করা হয়েছে। এদেরকে এই দায়িত্বে দেয়ার নিয়ম রয়েছে, তবে তাদের চাকরির মেয়াদ হতে হবে অন্তত ১১ বছর। কিন্তু যাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে তাদের এ শর্ত পূরণ হয়নি। অথচ দশম গ্রেডে যোগদান করা অনেক খাদ্য পরিদর্শক রয়েছেন, যারা এখন নবম গ্রেডে চাকরি করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত বছরের (২০২৩) ১৮ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনে চলতি দায়িত্ব প্রদানের বিধি-বিধান জারি করা হয়েছে। এর ধারা ৮ এর গ উপধারায় বলা হয়েছে-যাকে চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে তার উপরের পদধারী কোনো কর্মচারীকে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর অধীন করা যাবে না।

একইসাথে ধারা ৫ এর উপধারা গ এ বলা হয়েছে, পদোন্নতির জন্য জোষ্ঠ্যতা সংক্রান্ত গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। পরিদর্শকরা বলছেন, এই বিধির কোনো ধারাই এখানে মানা হয় নাই।

বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সভাপতি মো: আব্দুর রহমান খান বলেন, যখন থেকে এদেরকে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়, তখন থেকেই আমরা এর বিরোধীতা করছিলাম। কিন্তু এতকিছুর পরও গত মাসের ২৩ তারিখ তাদেরকে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এরা যোগ্য হলে পদায়ন করলে আমাদের কোনো অভিযোগ থাকত না। যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কেন এভাবে পদায়ন করা হলো সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। অবিলম্বে এ প্রজ্ঞাপন বাতিল করে যোগ্যদের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী ও চট্টগ্রামের আদালতে তিনটি মামলা করেছেন খাদ্য পরিদর্শকরা। যেগুলো এখনো চলমান।

এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আব্দুল খালেক। তবে, অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মো: জামাল হোসেন বলেন, আমাদের (খাদ্য অধিদফতর) দুটি গ্রুপ আছে, একটা ইন্সপেক্টর, আরেকটা প্রধানসহকারী, হিসাবরক্ষক, সুপারিনটেনডেন্ট। তাদেরই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক করা হয়। তাদের আলাদা কোটা নির্ধারিত আছে। ইন্সপেক্টরদের কোটা অনুযায়ী সব উপজেলায় আমরা পদায়ন (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) করেছি। অন্যদিকে, প্রধানসহকারী বা হিসাবরক্ষকদের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কোটায় সম্প্রতি এই পদায়ন বা চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদের এ পদায়ন না করলে উপজেলাগুলো ফাঁকা থাকত। কারণ, ইচ্ছে করলেই প্রধানসহকারীদের কোটার ১২০টি পদ অন্যদের দিয়ে পূরণ করার সুযোগ নেই। এ নিয়ে খাদ্য অধিদফতর উভয় সঙ্কটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, খাদ্য অধিদফতরের নিয়োগ বিধিতে কোটা রয়েছে যেখানে ১৮ শতাংশ এই ক্লারিক্যাল পোস্ট (প্রধানসহকারী) থেকে আসতে হবে। আমরা সেটাই করেছি। কারণ সারাদেশে ৫০০ পদের মধ্যে এই ১৮ শতাংশের ভেতরেই রয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে তাদের কারো চাকরির মেয়াদ ১১ বছর হয়নি, তবে এখানে যদি তাদেরকে দেয়া না হয় তাহলে পদগুলো খালি পরে থাকবে। এটা একটা সঙ্কট। এ কারণে তাদেরকে দেয়া হয়েছে। তবে, চলতি দায়িত্ব যেকোনো সময় তুলেও নেয়া যায়। আমি এখন অন্য মন্ত্রণালয়ে, যদি এটা নিয়ে কোনো সঙ্কট হয় তাহলে সেটা বর্তমান সচিব, খাদ্যের ডিজিসহ অন্যরা বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement