০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

স্মৃতির আলপনা আঁকি

স্মৃতির আলপনা আঁকি -

পশ্চিম আকাশে লাল হয়ে আছে সূর্যটা। সম্পূর্ণ তেজহীন। দুপুরের তপ্ত আলোর বিকিরণ নেই একদমই। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। নিঃসঙ্গ বৈকালিক স্নিগ্ধতায় অজস্র স্মৃতিরা এসে ভিড় জমায় মনে। এক আকাশ নীরবতায় ছেয়ে যায় চারপাশ। কালবৈশাখী ঝড়ের আগে কালো মেঘে যেমন ছেয়ে যায় আকাশ। ঠিক তেমনই হৃদয়েও জমা হয় অজস্র স্মৃতির মেঘ। আবার প্রবল ঝড়ের শেষে আকাশের মতোই হৃদয়টাও পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে সেখানে থেকে যায় দগদগে ক্ষত। তারপর শুরু হয় দহন যন্ত্রণা। শারীরিক ক্ষতের চেয়ে হৃদয়ের ক্ষতের যন্ত্রণা কিন্তু একদমই কম নয়। মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু তার নিরাময়ের সন্ধান পায় না। একেকটি স্মৃতি যেন একেকটি ব্যথার পাহাড়। কোনোক্রমেই তাকে উপেক্ষা করা যায় না। আমরা প্রতিনিয়ত পালিয়ে বেড়াই এসব স্মৃতিদের থেকে। আর এভাবেই সময়ের সাথে লুকোচুরি খেলে, হঠাৎ আমরা জটিল সব নিয়মে আটকে যাই। ভাবনার ঘোর কাটে না। হৃদয়ে অসীম শূন্যতা নিয়ে আমরা এদিক ওদিক ছুটে বেড়াই। কোথাও আমাদের সাথী সঙ্গী নেই। আমরা তো আসলেই নিঃসঙ্গ। সম্পূর্ণ একা। এই তো কতশত মানুষ। অথচ আমি সম্পূর্ণ সঙ্গীহীন। ভগ্নমনোরথে অলস্য বসে স্মৃতি হাতড়াই। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বিকেলে বাজারের দিকে ছুটে যাচ্ছে গ্রামের লোকজন। আমাদের বাজারে দু’দিন হাট জমত। শনি ও বুধবার। আশপাশ থেকে অনেক মানুষ আসত। প্রত্যেকেই সাপ্তাহিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচাকেনা করত এই দু’দিন। গ্রামের লেনদেন সভা সমাবেশ সবই হতো সপ্তাহের এই দুই দিনকে কেন্দ্র করে। হাটের দিন এলেই দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর প্রস্তুত থাকতাম বিকেলে বাজারে যাওয়ার জন্য। আমি আব্বার সাথে বাজারে যেতাম। আব্বা দু’হাত পেছনে রেখে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতেন। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে চেষ্টা করতাম ঠিক সেই জায়গাতেই পা রাখার জন্য। যেখান পরেছে আব্বার পা। যদিও খুব বেশিক্ষণ এভাবে তাল মেলাতে পারতাম না। স্মৃতিময় সেই গ্রামটি এখন নেই। নেই বাবার পেছনে পেছনে হাঁটা সেই পথঘাটগুলোও। নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে সেই কবেই। নদীর পাড়ের বালিতে বসে কত যতœ করে ঘর বানাতাম। মোহগ্রস্ত হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতাম সে ঘর নিয়ে খেলতে গিয়ে। তারপর জোয়ারের সময় আসত। আমরা তাকিয়ে দেখতাম কিভাবে জোয়ারের পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় সেসব ঘরবাড়ি। বড় আনন্দ হতো। কষ্টও লাগত একটু-আধটু। শত হলেও পরিশ্রমের জিনিস তো তাই হয়তো। এরপর লাফাতে লাফাতে চলে আসতাম বাড়িতে। মনে মনে ভাবতাম এ আমার পরম আরাধ্যের ঠিকানা। এখানেই সব সুখ। এই বাড়িঘরেই আমি সারাজীবন থাকব। আমাকে এখান থেকে পৃথক করার সাধ্য আছে কার। কে জানত সকালে দাঁত মাজতে মাজতে যে সৌম্য শান্ত স্থির নদীটাকে দেখতাম সে-ই আমাকে আলাদা করে দেবে এই বাড়ি থেকে। আমার শৈশব কৈশোরের সব স্মৃতিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তিরতির করে বইতে থাকা এই স্রোত। প্রত্যেক মানুষের কাছেই তার শৈশব কৈশোর খুব দামি, ভীষণ আনন্দের। ভালোলাগার ভালোবাসার। বুড়ো বয়সেও মানুষ নদীর কাছে ছুটে আসে। পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে সেসব জায়গাতে সুখ খোঁজে, সান্ত¡না খোঁজে। কিন্তু আমার তো আর কিছুই বাকি রইল না। আমি কার কাছে ফিরে যাব। কোথায় আমার শৈশবের সেই সোনালি দিনের খেলাঘর। বুকে কান্না চেপে রেখে চুপিচুপি তাই স্মৃতির আলপনা আঁকি।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সাথে জাতিসঙ্ঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ বিপিএল থিম গ্রাফিতি ও থিম সং প্রকাশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত সেনাসদস্যদের দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে : সেনাপ্রধান এক বিজয় অর্জন করেছো, আরেক বিজয় আসবে : শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টা জবির ঐক্যের মঞ্চে থাকবেন হাসনাত-রাকিব-মঞ্জুরসহ ১২ সংগঠনের নেতা প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে যাবেন বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল লেবাননে যুদ্ধ শেষ হয়নি : নেতানিয়াহু বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার নিহত ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

সকল