০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

টোকাই

-

হেই দিন আমারে অনেক মারছিল। আমি কিছু কইবার পারি নাই। ওগোরে ঠিক মতন মালের হিসাব না দিবার পারলে মারে, বহুত মারে। মাইর খাইতে খাইতে সহ্য হইয়া গেছে গা। তয়, আইজ আবার আমার বাপ-মা তুইল্লা গালি দিছিল। আমি ফ্যাল ফ্যাল কইরা চাইয়া আছিলাম। ভাববার পারতাছিলাম না আমি কি করুম! কান্দুম, না চিল্লামু।
এর আগে নয়ন রে একবার ওর বাপ-মা তুইল্লা গালি দেওনে ওয় বহুত কেচাল করছিল মালিকের লগে। মালিকও ওরে থাবরাইতে থাবরাইতে খেদাইয়া দিছে আস্তানা থেইকা। নয়ন ও চিল্লাইয়া কইছিল, করুম না আমি তর কাম, আমার বাপ তুইল্লা কথা কস! দুইন্নাত কামের অভাব নাই, দরকার হইলে ভিক্ষা করুম, তাও এই নয়ন রে আর পাবি না। গজরাইতে গজরাইতে নয়ন চইল্লা গেছিল হেইদিন। আর কামে আহে নাই। তয় রাস্তায় বোতল টোকাইতে বাইর হইলে মাঝে মধ্যে দেহি ওরে। আরেক খানে কাম করে। আগে আমার লগে বোতল টোকাইতো, আর এহন ফুল বেচে। আমারেও কাম ছাইড়া দিতে কইছিল ও, কইছিল আমিও যেন ওর লগে ফুল বেইচ্চা বেড়াই। এই কামে নাকি মেলা আনন্দ। বোতল টোকানের মতন কষ্ট ওইহানে নাই।

আমি কিছু কই নাই। এইহানে আমারে মারে, তয় থাকবার তো দেয়! অন্যহানে গেলে যদি টাকা ধরাইয়া রাস্তা মাপবার কয়? যদি থাকবার জায়গা না দেয়? তহন?
নয়নের বাপও আছে, মা-ও আছে। থাকবার জায়গাও আছে ওর। আমার না আছে মা-বাপ, না আছে ঘরদুয়ার। শুধু আমিই পইড়া আছি পেটের ধান্ধায়। হের লাইগগা আমারে যহন গালি মারে বাপ তুইলা, আমি কিছু কই না। আবার মাঝে মধ্যে হাইসা দিই। হেগোরে তো চিনিই না, হেগো নাম ধরলে আমার জ্বালা ধরবো ক্যা? হুনছিলাম, বাপে নাকি এক্সিডেন্ট এ মরছিল। আমি তহন মায়ের পেটে চাইর মাসের! দাদী মায়রে অপয়া কইয়া রোজ পিটতো। মা আমারে পেটে লইয়া হেই বাড়ি ছাইড়া বাপের ভিটায় উটছিল। হের ভাইয়েরাও হেরে শান্তি দিলো না। আমারে জন্ম দিতে গিয়া বাপের মতন মা-ও গেলো গা আামারে থুইয়া। হে তো অপয়া আছিল না, অপয়া আছিলাম আমি। না পাইলাম বাপ, না পাইলাম মা, পথে পথে ঘুইরা হইলাম টোকাই!

তয় এই কতা আমারে কে কইছিল স্মরণে আহে না। তোমরা এহন সভ্য হইছ, রাস্তায় আর বোতল ফেলাও না। আর তোমাগো এহেন সভ্যতার লাইগা আমাগো পেটে ভাত জুটে না। আমরা রাস্তায় রাস্তায় বোতল টোকাইয়া বেড়াই খাওনের জোগার করবার লাইগা। মাগার বোতল পাই না! করপোরেশনের লোক আইয়া সব সাফ কইরা দেয়। কত ওগোর পা ধরছি, ভাই বোতল দিয়া যান। বোতল তো দিলোই না, সাফ-সাফাই লইয়া জ্ঞান দিয়া গেলো। জ্ঞান দিয়া কি করুম! পেট তো চলে না। বস্তায় বোতল কম পাইলে মালিক থাবরায় ইচ্ছা মতো। মাঝে মধ্যে খাইবারও দেয় না। থাকবার যে দেয়, এইডাই শোকর! ময়লার ঝুড়ির আশপাশ দিয়া ভেউ ভেউ করা নেড়ি কুত্তার লগে যুদ্ধ কইরা ওগোর মুখের খাওন টাইনা পেটের জ্বালা মিটাই। রাস্তার ধারে খাড়াইলে দুইডা টাকা ধরাইয়া দেয় কেউ কেউ, হেইটার নাম দিছে আবার মানবতা। আমি আর আমাগো মতো আমরা এইসব মানবতা বুঝি না। আমরা বুঝি; যে বা যারা আমাগোরে ঠিক মতন দুই বেলা খাওন দিবো, আমাগোরে রাইতে চটের বস্তায় শুইবার দিবো, হে একখান মানুষ। খাঁটি মানুষ। আমরা যেহানে সেহানে খেলনা থুইয়া বোতল-ফেলনা টোগাই, কারণ পেটের তাগিদে বস্তা কাঁধে আমরাই যে টোকাই।


আরো সংবাদ



premium cement
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য : যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব পশুর নদে গ্যাস ও কয়লাবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, নিখোঁজ ১ চুয়াডাঙ্গা প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে কোপালেন যুবলীগ কর্মী ‘আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে’ গাজার জাবালিয়ায় হামাসের হামলায় ১৫ ইসরাইলি সেনা হতাহত ইসরাইলের ৫ এলাকায় হিজবুল্লাহর একযোগে হামলা শেষ মুহূর্তে জনমত সমীক্ষায় ট্রাম্পকে পেছনে ফেললেন কমলা! সোনার ছেলে বড় হয়েও যেন সোনার ছেলেই থাকে : সেলিম উদ্দিন সাফজয়ী ক্রিকেটারদের যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ কুয়াকাটায় নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা

সকল