২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মানুষের জন্য মানুষ হওয়া

-


কারো উপকারে না আসতে পারলেও কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু কারো ক্ষতির কারণ না হওয়াটা বড্ড জরুরি। আপনি কারো হাসির কারণ নাইবা হলেন কিন্তু কারো কান্নার উপলক্ষ হতে কোনোভাবেই যাবেন না। কাউকে সুখের সন্ধান নাও দিতে পারেন তবে মনে রাখবেন, দুঃখ বিলানোর মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। মানুষ হিসেবে প্রশংসা অর্জনের কোনো কাজ না করলেও মানুষের ঘৃণা আসে এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে পারাটা ছোট্ট জীবনে বড় গৌরবের বিষয়।

কারো ক্ষতি করা, দুঃখ দেয়া কিংবা ঘৃণা পাওয়া- এ সবের সাথে আমাদের যোজন যোজন দূরত্ব হোক। ব্যক্তি স্বার্থের অন্ধকার আমাদেরকে যেন ঘিরে ধরতে না পারে। ভোগের আতিশয্যে যেন জীবনকে উন্মুখ না রাখি। চাইলেই কারো পেছনে কথা বলা যায়, ক্ষতি করা যায় কিন্তু এসব কি ভালো আচরণ? মানুষ হিসেবে সৎ হওয়ার পথে যদি কেউ আঘাত পায়, দুঃখ পায় সেটি বারবার দিন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কারো মনোকষ্টের কারণ হলে অযাচিত অভিশাপে জীবন পুড়তে পুড়তে বিক্ষিপ্ত হবে। কথা বলে আঘাত দেয়ার চেয়ে চুপ থাকা শ্রেয়। ধমক দিয়ে ভয় দেখানোর মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই; বরং হাসিমুখে ভালোবাসা বিলাতে পারলে শ্রদ্ধা বাড়ে! মাত্রাতিরিক্ত কঠোরতা দেখিয়ে কারো ভালোবাসা অর্জন করা যায় না। হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজ আদায় করা যায় না। হাসিমুখে কথা বলে, মাথায় হাত রেখে যা আদায় করা যায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে তা দখল করা যায় না! যারা ক্ষমতার জুজু দেখিয়ে সব পেতে চেয়েছে, তাদের অনুপস্থিতিতে মানুষ চিৎকার করে গালি দিয়ে, সামনে বসে অন্তরের ঘৃণা পুষেছে! হারিয়ে যাওয়া সম্রাট ও সাম্রাজের প্রতি মানুষের ঘৃণা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণের পর্যাপ্ত রসদ আছে!

মানুষ সহজাতভাবে উপকার মনে রাখতে না পারলেও ক্ষতি ভোলে না! দরদ না বুঝলেও আঘাতকারীকে ছাড়ে না। যে তার দুঃখের কারণ তাকে মনের কোথাও রাখে না। মানুষের জন্য মানুষ হোন। এমন মানুষ যাকে অকাতরে বিশ্বাস করা যায়, যেকোনো পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পরিবর্তনে ভরসা করা যায়। অনেক কথাই যার সাথে ভাগাভাগি করা যায় তার সাথে রাগারাগি করা ঠিক নয়। সবাই আপনাকে বুঝবে না এবং আপনারও সবাইকে বুঝতে যাওয়া ঠিক হবে না। সাধারণের জন্য সাধ্যমতো নিরপেক্ষ থাকুন তবে যারা আপনের আপন তাদের জন্য সাধ্যাতীত করুন। তবে সেখানে অন্যায়ের পথ ও অন্ধত্বের পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রত্যয় ও শপথ থাকুক।
জীবনটা শিশিরের মতো ক্ষণিকের! কারো ক্ষতি কিংবা ক্ষতির ভাবনায় যদি মুহূর্ত কেটে যায় তবে সেটুকুই উপভোগের বাইরে থাকবে। এই যে বড়ত্ব, ক্ষমতার আমিত্ব-আমার না থাকায় এ সবের মূল্য কতটুকু? বরং একটু যদি বিনয়ী হই, সামান্য হলেও কারো উপকার করি, কারো সাথে মুহূর্তের দেখায় হাসি দিয়ে কথা বলি, কারো বেদনায় একটুখানি সহমর্মী হলে তবেই জীবনে অফুটিত পুষ্পগুলো পরিস্ফুটিত হবে। আত্মসুখের প্রবাহে স্বর্গসুখের ছোঁয়া দেবে। মানুষ হিসেবে অমরত্বের স্পৃহা থাকুক।
মানুষের জন্য তো মানুষ হওয়া কিন্তু অমানুষদের জন্য? তাদের সামনেও আপনি মানুষ থাকুন।


আরো সংবাদ



premium cement