০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফিলিস্তিনের স্বাধিকার ও অধিকার

ফিলিস্তিনের স্বাধিকার ও অধিকার -


স্বাধীনতা অভিধানের একটি শব্দ। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে মহাকাশের বিশালতাসম মানুষের অধিকারের স্বপ্ন, এক পরম পাওয়া ও মুক্তির পদচিহ্ন। আরেকভাবে যদি বলি, তাহলে মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার কিভাবে অর্জন করবে এটি তারই যেন এক রূপকল্প। অসহায়, দুর্বল, সুবিধাবঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষ যখন তার প্রাপ্য পাওনাটুকু বুঝে নিতে চায়, তখন তার ভেতরে এক ধরনের স্বাধিকারবোধের সৃষ্টি হয়। আর সেই স্বাধিকারের পূর্ণাঙ্গ রূপই হলো স্বাধীনতা। এ জন্যই বলা হয়, মানুষের স্বাধিকার থেকেই স্বাধীনতা। বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস থাকে সহস্র বছর ধরে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জাজ্বল্যমান। এই স্বাধীনতা কখনো হঠাৎ করে উদয় হওয়া নয়; বরং প্রতিটি স্বাধীনতা অর্জনে রয়েছে বহু ত্যাগের ও সংগ্রামের ইতিহাস। বহু প্রাণের বিসর্জনের লাল রক্তমাখা ইতিহাস। তাই সময়ের প্রতিটি কার্যকর মুহূর্ত যেন ধাপে ধাপে প্রতিটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে চলে মুক্তিকামী মানুষের দুয়ারে। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে।

যেমনি আমরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে সংগ্রাম শুরু করা বাঙালি জাতি পরবর্তীতে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। সত্তরের নির্বাচন পেরিয়ে একাত্তরের মহান স্বাধীনতার সূর্যটি ছিনিয়ে আনি বীরদর্পে। আরো এই রকম প্রতিটি ধাপে ধাপে আমরা বাঙালি জাতি প্রমাণ দিয়েছি আমাদের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বতা কতটা। আর এ জন্যই আমরা বাঙালিরাও স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হই। বিজয় অর্জন করি।
তেমনি ফিলিস্তিনবাসীর সেই স্বাধিকার ও প্রয়োজন থেকেই তাদের চাওয়া-পাওয়া। আর এই চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছে বলেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষ তাদের অধিকারের প্রশ্নে সজাগ হয়ে উঠছে। জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য চলমান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে। যুবক, বৃদ্ধ, কিশোর, নারী সবাই তাদের মুক্তি চাচ্ছে। জবরদখলকারী জালিমদের থেকে নিজ জন্মভূমির স্বাধীনতা কামনা করছে। গড়ে তুলছে সামর্থ্যরে মধ্যে আন্দোলন। ফিলিস্তিনি জাতি বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন পতাকা উড়াতে চাচ্ছে। আর হ্যাঁ, স্বাধীনতা অর্থ তারা তাদের নিজস্ব ভূমির মালিকানা উদ্ধার করা। দখলদার বাহিনীর হাত থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে মুক্ত করা। মুক্ত করে নিজ জাতির জন্য প্রাপ্য আলোটুকু নিশ্চিত করার মধ্যে স্বাধীনতার সাফল্য অর্জন করা। আর জাতি হিসেবে এটি তাদের কাম্যও বটে।

একটি ব্যাপারে তো নিশ্চিত যে, স্বাধীনতার মতো বৃহৎ বিষয়টি সম্মুখে আনতে হলে জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও অত্যাচারিত এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে। কেননা, ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন দিন দিন ক্রমেই বেড়ে চলছে। প্রতিনিয়ত নারী তার প্রাপ্য স্বাধীনতাকে হারাচ্ছে। গরিব-অসহায়, অধিকার বঞ্চিত মানুষ তার স্বাধীনতাকে হারাচ্ছে। এই স্বাধীনতা হরণ করছে। এই স্বাধীনতাকে পরাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন তো ফিলিস্তিনের গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও সাধারণ ফিলিস্তিনিকে তারা মেরে ফেলেছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়ে পড়ে রয়েছে। জীবন প্রবাহের সব ধরনের মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। আর উপর থেকে ভয়ঙ্কর সব রকেট ও বোমা হামলা করে সব তছনছ করে দিচ্ছে। এটি কি ফিলিস্তিনিদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? আর তাদের কী স্বাধীনতা অর্জন করার অধিকার নেই। অবশ্যই আছে।

আর হ্যাঁ, বাংলাদেশ বা বঙ্গবন্ধুর দেশের একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসেবে বলব! ফিলিস্তিনিরাও একটি আশাবাদী, সংগ্রামী ও ঈমানদার জাতি, তারা পথচলায় অবিচল, কর্মের মাধ্যমে একদিন তারা তাদের স্বাধীনতাকে অর্জন করবে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে। যা আজ তাদের কাম্য।
অতএব, ফিলিস্তিনের মজলুমদের এই স্বাধীনতার জন্য আমরা সবসময় তাদের পাশে থাকব। তাদের অধিকার আদায়ে আমরা তাদের সমর্থন করব। তাদের অঙ্গীকার! বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বা দেশ হিসেবে অন্যান্য স্বাধীন দেশের মতো তাদের নামও থাকুক সবার সাথে। শহীদের রক্ত ঝরানো ফিলিস্তিনের জেরুসালেম হোক ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাজধানী। মুক্ত হোক সর্বপ্রথম কিবলা আল-আকসা। কোনো কলঙ্কের দাগ আর না লাগুক প্রিয় আকসার চত্বরে। নিজস্ব মানচিত্র নিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে অক্ষুণ্ন থাকুক মুক্তিকামী ফিলিস্তিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement