২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হাসপাতালে একটি দুপুর

-

মধ্য রাত। ফোনের বিদঘুটে রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল। আধখোলা চোখে ফোনের দিকে তাকাতেই হার্টবিট বেড়ে গেল। ফোনে মায়ের নাম ভাসছে। রাত ১০টার পর মা কখনো ফোন দেন না। একবার দিয়েছিলেন মাঝরাতে। প্রিয়জন বিয়োগের দুঃসংবাদ দেয়ার জন্যই দিয়েছিলেন সে দিন অসময়ে ফোন। আরো কয়েকবার ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মাঝরাতে ফোন পেয়েছিলাম। সবই ছিল দুঃসংবাদের যা আমার কাছে একেকটি দুঃস্বপ্নের মতো। মাঝরাতের ফোনকলগুলো সবসময় দুঃসংবাদই বয়ে আনে। এসব ভাবতে ভাবতে রিসিভ করার আগেই কলটি কেটে গেল। কালবিলম্ব না হতেই আবারো কল এলো। রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে শুনলাম মৃদু আর্তনাদ। বেশ কয়েক দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া ছোট ভাই রোহানের অবস্থার অবনতি হয়েছে। শিগগিরই অপারেশন না করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আজ রাতে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে ডাকল মা। আমি গেলে কিছুটা মানসিক শক্তি বাড়বে। এক দিকে সেমিস্টার ফাইনালের সময় ঘনিয়ে এসেছে, ওদিকে ছোট ভাইয়ের এই অবস্থায় কোন দিকে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাকি রাত আর ঘুম হলো না। একাত-ওকাত করে কাটিয়ে দিলাম। সকালে উঠে কোনো কিছু না ভেবেই রওনা দিলাম হাসপাতালের উদ্দেশে। অনেক দূরের পথ। গন্তব্য রাজশাহী থেকে ঢাকার একটি বড় হাসপাতালে। দুপুরের পরে হাসপাতালে পৌঁছলাম। সোজা গেলাম কেবিনে। ছোট ভাই বন্ধ চোখে বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। পাশে অশ্রুসিক্ত নয়নে মা বসা। বারান্দায় বাবা বিষণœ মনে দাঁড়ানো। আমাকে দেখে মায়ের মুখে স্ফীত হাসি। বাবার চেহারায় তেমন পরিবর্তন লক্ষ করলাম না। ২৩ দিন যাবৎ হাসপাতালে থাকায় সবার শরীরেই বিষণœতা ও ভঙ্গুরতার ছাপ স্পষ্ট। ছোট ভাইয়ের হাত ধরে কিছুটা সময় বসে থেকে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। আপন ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনের অসুস্থতায় বিভিন্ন সময় হাসপাতালে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে এলে রোগীদের কষ্টের চিত্র দেখে মন খারাপ হলেও নিজে সুস্থ থাকায় স্রষ্টার প্রতি নতশির হই বারবার। কিছুক্ষণ আগে পাশের কেবিনে আমার বয়সী একজন না ফেরার দেশে চলে গেছে। স্বজনদের আর্তনাদে আকাশ ভারী। ছেলেটার মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে সান্ত¡না দেই। পরক্ষণে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। আমার কাছে সান্ত্বনার অপর নাম কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া। তবুও মানুষ দুঃসময়ে সান্ত¡না দেয়। ভুক্তভোগীরাও সান্ত্বনা পেতে চায়। আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় হলেও মানুষ সান্ত¡না পুঁজি করেই ভালো থাকার চেষ্টা করে। বাঁচতে চায়।
কেবিন থেকে বের হয়ে হাসপাতালের মাঠে গেলাম। সেখানেও প্রিয়জন হারানো একদল স্বজনের দেখা পেলাম। অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তোলা হয়েছে। মধ্যবয়সী এক লোক ফোন করে কাকে যেন কী বলছে আর চিৎকার করে কান্না করছে। মনে হয় মৃতের স্বজন। লোকটার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। পৃথিবীর অসুন্দর দৃশ্যগুলোর একটি হলো পুরুষ মানুষের চিৎকার করে কান্না। পুরুষ মানুষ সহজে কাঁদে না। যখন কাঁদে তখন এই কান্নার পেছনে থাকে কোনো হৃদয়বিদারক দৃশ্যপট।
এবারো আমার চোখে পানি চলে এসেছে। ঝাঁপসা দেখছি সব কিছু। এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াতে ইচ্ছা করল না। চলে গেলাম হাসপাতালের লবিতে। বসে মোবাইল স্ক্রল করছি এমন সময় হাসিমুখে এক যুবক একটি মিষ্টি এগিয়ে দিলেন। মিষ্টি বিতরণের কারণ জানতে চাইলে বললেন, কিছুক্ষণ আগে তিনি পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন। আমি মিষ্টি খাই না। কিন্তু আজকে কেন জানি খুব আনন্দ করে মিষ্টি খেলাম। লোকটির সঙ্গী হয়ে লবিতে বসা সবার মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করলাম। লোকটির খুশি দেখে আমারও খুশি লাগছে। কখন যে খুশিতে চোখে পানি চলে আসছে বুঝতে পারিনি। লোকটি আমার দিকে তাকাতেই বিব্রত হয়ে সেখান থেকে কেটে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম কাউন্টারের কাছে। নিচতলায় রিসিপশনের পাশেই কাউন্টার। কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। দুয়েকজনের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বললাম। জানলাম লাইনে দাঁড়ানো প্রায় সবাই রিলিজ হওয়া রোগীদের স্বজন। হাসপাতালের টাকা মিটিয়ে চলে যাবে বাড়িতে। সবার মুখেই হাসির ছাপ। কি অদ্ভুত এক জায়গা হাসপাতাল! এক দিকে হাসি, অন্য দিকে কান্না। এক দিন উল্লাসধ্বনি আরেক দিন বিষাদের হৃদয়বিদারক আয়োজন সমতালে চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement
কাঁঠালিয়ায় শাহজাহান ওমরের গ্রেফতারে বিএনপির আনন্দ মিছিল ইউক্রেন রাশিয়া ইউকে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসের কুশল বিনিময় পারমাণবিক বোমা বিষয়ে ইরানের অসহযোগিতার অভিযোগ পশ্চিমা বিশ্বের, আইএইএ’র ভিন্নমত ‘সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে ছাত্রদল’ ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ আন্দোলনে সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে আস্থার প্রতীক হয়েছে সেনাবাহিনী : ড. ইউনূস ব্রিটেনের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রেসকট মারা গেছেন ১৪ বছর পর ইবি ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ দায়িত্ব নিলেন নতুন আইজিপি বাহারুল আলম উখিয়ার সীমান্তে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার

সকল