২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফিলিস্তিনের যুদ্ধ থামাতে বিশ^ মানবতার ঐক্য চাই

-

শান্তিকামী ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। গোটা পৃথিবী এখন এই যুদ্ধের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাসের আকস্মিক হামলার পর প্রতিশোধ নিতে বেপরোয়াভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকের ওপর শত শত গুলি চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার শিশু-নারী ও নিরস্ত্র শান্তিকামী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। একের পর এক ইসরাইলের জঙ্গি হামলায় গাজা উপত্যকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত। বিমান বোমা ও অস্ত্রবারুদে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে ৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ছোট্ট এই এলাকাটি, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশে গেছে। তাদের আর্তনাদ ও চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। মানবিকতা, নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক সব আইন অগ্রাহ্য করে ইসরাইল তার মিত্রদের সহযোগিতায় মানবহত্যা অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত স্থল ও বিমান হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে গেছে গাজা শহর। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নজিরবিহীনভাবে মানবিক সঙ্কটে পড়েছে। তারা হামলার টার্গেট করেছে হাসপাতালকে পর্যন্ত। হাসপাতালে গিয়েও আহতরা নিস্তার পাচ্ছে না। অনেক হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যায়। ইতোমধ্যে চার হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নারী শিশু ও নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থাগুলো বলেছে। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই শিশু। বাকিরা সবাই নিরস্ত্র নারী ও পুরুষ। এসব হামলার ও যুদ্ধের লেলিহানে গোটা দুনিয়া এখন শোকাহত। মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব কিছু রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে এ জঘন্য হামলার জন্য ইসরাইলের প্রতি দোষারোপ করছে। ইসরাইল সর্বশক্তি দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত যুদ্ধবাহিনী দিয়ে পুরো গাজা শহরকে রণাঙ্গনে পরিণত করেছে।
মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ মসজিদুল আকসার প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিশে^র বিশেষ একটি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে। মসজিদুল আকসাকে পবিত্র রাখা ও সেখানে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা ধর্ম-কর্ম নামাজ আদায়ে অনড় ও বিশ^াসী। তাদের এই বিশ^াসকে ইহুদি ইসরাইলি কোনোভাবেই পালন করতে দিচ্ছে না। প্রায় ৭৫ বছর থেকে এই পবিত্র মসজিদটি ইসরাইলি জবরদখলকারী তথাকথিত রাষ্ট্রটি মুসলমানদের ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। ফলে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ইসরাইল ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়ে চলছে। পবিত্র এ মসজিদটি মুসলমানদের সর্বপ্রথম মসজিদ। এটির পবিত্রতা মুসলমানদের ঈমানের একটি অংশ। তাই ফিলিস্তিনি মুসলমান ও মসজিদুল আকসার পবিত্রতা রক্ষার জন্য সারা পৃথিবীর মুসলিম বিশ^ ঐক্যবদ্ধ। ২০ অক্টোবর সারা পৃথিবীতে ফিলিস্তিনি নিরীহ শান্তিকামী মানবতার মুক্তির জন্য প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। বিশ^ মুসলমানদের একটিই দাবি আর সেটি হচ্ছে- ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ইসরাইল সেখানে জবরদখল করে প্রবেশ করেছে। মূলত রাষ্ট্রটি হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের। ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ও রাষ্ট্রকে পূর্ণরূপে স্বাধীন করার জন্য লম্বা সময় থেকে যুদ্ধ করে আসছে। তাদের যুদ্ধকে ইহুদিরা সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যা দিয়ে দমন করার জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সশস্ত্রবাহিনীকে ব্যবহার করছে। বিশ্বের মানবতাবাদী সব ধর্মের মানুষ জানে, এই রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের। রাষ্ট্রটি এক দিন না এক দিন পূর্ণভাবে স্বাধীন করবে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। এই রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হাজার হাজার মূল্যবান জীবন শহীদ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের মৌখিকভাবে সমর্থন করলেও গোলাবারুদ অস্ত্র অর্থ দিয়ে তাদের পাশে আসতে এখনো দেখছি না। ওদিকে ইসরাইলের পাশে আমেরিকা ফ্রান্সসহ পুরো ইহুদি রাষ্ট্রগুলো ঐক্যবদ্ধ। আজকে তারা নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তি প্রদর্শন করে শান্তিকামী ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষকে হত্যা করছে। হাজার হাজার শিশুকেও নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ফিলিস্তিন দেশকে রক্তাক্ত করছে।
শনিবার বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি জনগণকে সহানুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য শোক দিবস হিসেবে পালন করেছে। বাংলাদেশের সব মসজিদ মাদরাসা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনি শান্তিকামী মানুষের জানমাল ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রতিবাদ সভায় মিছিল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাখ লাখ মসজিদে তাদের উদ্দেশে মুনাজাত প্রার্থনা করা হয়েছে। বিশ^ শান্তিকামী মানুষের সাথে বাংলাদেশের ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপ্রিয় জনগণ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সবসময় ছিল এখনো আছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকায় ২০ অক্টোবর জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। এ দেশের মানুষ জানান দিয়েছে, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। অবিলম্বে ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীদের যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। এ দাবিতে পুরো বাংলাদেশ রাজপথ কেঁপে উঠেছে। মসজিদে মসজিদে তাদের জন্য দোয়া হয়েছে।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তাদের জানমাল ইজ্জত রক্ষার জন্য মুসল্লিরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে প্রার্থনা করেছে। পরিষ্কার করে আমরা বলতে চাই- যুদ্ধের মাধ্যমে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। ফিলিস্তিনিদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। জুলুম-অত্যাচার-যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। নারী শিশু ও নিরস্ত্র জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য বিশে^র নেতৃত্বে যেসব সংগঠন রয়েছে জাতিসঙ্ঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। মুসলিম বিশে^র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন আরব লিগ, ওআইসি এবং বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শক্তি দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জয় হোক মজুলম মানুষের, প্রতিষ্ঠা হোক শান্তি, বন্ধ হোক জুলুম ও যুদ্ধ।


আরো সংবাদ



premium cement