২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খাঁচায় বন্দী পাখি

-

আসি আসি বিকেল। দুপুরের তেতিয়ে ওঠা সোনারঙা সূর্যটা ক্রমেই নেতিয়ে আসছে। হলদে আবরণে ছেয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের নীলাকাশ। দোলায়িত বাতাস, সবুজে গাছপালায় মৃদু মৃদু তরঙ্গ। শাকিল তখন পা রাখছে বাড়ির উঠোনে। উঠোনের দক্ষিণ কোনায় শিমুল গাছটায় ইস্টিকুটুম, দোয়েল আর শালিকের কলতান। শাকিলের ছোট্ট আদুরে বোনটা দৌড়ে এগিয়ে এলো। কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে একছুটে দৌড়। আম্মুর সালাম, আব্বুর মোসাফাহা, ঠকঠকে দাদীর এগিয়ে আসা আর দাদুর দাদাভাই ডাকে যখন সে পুলকিত- তখন তার কানে ভেসে এলো এক বিষাদিত সুর। কিছুটা আর্তনাদের, কিছুটা মুক্তির আবেদন মাখা। স্থবির, স্তম্ভিত কম্পিত সে। স্বজায়গায় সটান দাঁড়িয়ে আছে। নড়ছে না তার পা; একটুও না। এ সুর যেন তার অতিপরিচিত। বোনটাকে জিজ্ঞেস করল সে, তুই কি শুনতে পাচ্ছিস বাতাসে ভেসে আসা একটি আর্তনাদের স্বর? নিষ্পাপ ফুটফুটে চেহারায় ধবধবে সাদা দাঁতে খলবলে হেসে উঠল ও। বলল- ওহ, তুমি তো দেখোনি। বড় ভাইয়া, গত পরশু নদীর পাড়ের শ্যাওলা গাছ থেকে দুটো ঘুঘু পাখি ধরে এনেছে। বাজার থেকে কিনে এনেছে একটা খাঁচা, খাবারের ছোট্ট একটি বাটি। পানি খাওয়ানোর জন্য একটি ছোট্ট বেদানা। আর আমাকে দিয়েছে যতœ নেয়ার দায়িত্ব। জানো, পাখিগুলোকে আমি খুব যতœ করি, ভালোবাসি। ওরা যে কি সুন্দর সুরে গান গাইতে পারে! তুমি যদি শুনো তাহলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়বে। স্কুল থেকে ফিরেই আমি আমি ওদের গান শুনি, আদর করি। খাঁচাটির কাছে এগিয়ে গেল শাকিল। কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়ল ও। তার মনে পড়ে গেল শৈশবের মখমল স্মৃতি। মনে পড়ল ওর বান্ধবী মিতুর কথা। মিতু ছিল ওর শৈশবের খেলার সাথী। মাদরাসা থেকে ফিরেই ও মিতুকে সাথী করে চলে যেত নদীর পাড়টির কাছে। ঠিক দুপুরের নির্জন সময়ে, যখন মানুষের চলাচল থাকত না; তখন ওই শ্যাওলা গাছটাই বসে ঘুঘু মায়াবী সুরে গান ধরত। ওরা তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে ঘুঘুর গান শুনত। কিন্তু কোনো দিন পাখি ধরার চিন্তাও করত না শাকিল ও মিতু। শাকিল পাখিকে ভীষণ ভালোবাসত। ও জানে পাখি খাঁচায় বন্দী করে রাখলে পাখি ভীষণ কষ্ট পায়। এ কাজ ও কোনো দিন করত না; বরং যারা পাখি ধরত তাদের বারণ করত। এক দিন মিতু শাকিলের অনুপস্থিতিতে একাই শ্যাওলা গাছটির তলায় যায় পাখি ধরার বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে। গাছে ওঠে পাখির বাসায় হাত দিতেই ডাল ভেঙে পড়ে যায় নদীতে। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো নদীর স্রোত তাকে নিয়ে গেছে বহুদূর, অদেখা এক দেশে। শাকিল ছোট্ট বোনটিকে বলে, জানো, মিতু কিন্তু পাখির অভিশাপে হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। পাখি ধরে আটকে রাখলে পাখি কষ্ট পায়, অভিশাপ দেয়। দেখো না, পাখি কাঁদছে, বেদনাশ্রুতে টলোমলো আঁখিপুট। শাকিল বলল- পাখি দুটোকে ছেড়ে দেই আমরা? রিতু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। শাকিল মুক্ত করে দিলো পাখি দুটোকে। ওরা মনের আনন্দে উড়ে নীলাকাশে। শাকিল পৃথিবীর সব শিশুদের যেন উচ্চকণ্ঠে বলল, তোমরা কেউ আর কোনোদিন পাখি ধরো না। যদি ধরো তবে কিন্তু মিতুর মতো অভিশপ্ত হয়ে যাবে। তাই, সাবধান- পাখিকে ভালোবাস, আটকে রেখো না। প্রিয় ছোট বোন রিতু, তুমিও কিন্তু মনে রেখো। কখনো পাখি খাঁচায় বন্দী করে রাখবে না।

সংশোধনী : গত সংখ্যায় ‘হৃদয় আছে যার’’ লেখাটির লেখক রেবা হাবিবার স্থলে ভুলক্রমে ছাপা হয়েছে মুহাম্মদ রাহাতুল ইসলাম। আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement
গোলান মালভূমিতে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব ৬ মাসের জন্য বাড়ালো জাতিসঙ্ঘ আইএসকে নির্মূল করার এখনই সময় : এরদোয়ান নির্বাচনী সময়ের বিষয়ে সরকারের ‘স্পষ্ট বক্তব্য’ চায় বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীরাও রাবিতে ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনকে শাস্তি প্রকল্পের পুরো কাজ দেখতে ৯ জোনে তদারকি কমিটি সড়ক দুর্ঘটনাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে : তথ্য উপদেষ্টা করাচি থেকে জাহাজে আগের চেয়ে বেশি পণ্য এলো আগামী বছর দেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট : গোলাম পরওয়ার রাজশাহীতে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৮ জেলায় নিহত ১৪ উপদেষ্টা হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শেষ বিদায় চবি ক্যাম্পাসে নির্মিত হবে ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন

সকল