একখণ্ড গ্রামের রাত
- মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম
- ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
গ্রামে সন্ধ্যার পরপরই চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। ঘন অন্ধকার। মাঝে মধ্যে এতটাই প্রকট হয় যে, নিজের হাতটা পর্যন্ত দেখা যায় না। নিঝুম নিস্তব্ধতা তো বর্ণনাতীত। তাই তো বিলের মাঝখানের শেয়ালের হুক্কাহুয়া ডাকটা স্পষ্টই শোনা যায় ভিতর বাড়ি থেকে। এই শহুরে জীবনে নীরবতা তো একদমই নেই। সেই চিরচেনা অন্ধকারটিকেও আর খুঁজে পাই না। প্রায়ই ছাদে গিয়ে দেখি। রাতটা ঠিকই আছে। কৃত্রিম আলোর দাপটে হারিয়ে গেছে প্রিয় অন্ধকার। একটা সময় ছিল রাতে জোরে আওয়াজ করে পড়ার যুগ। সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঘরে দেখা যেত কুপি বা হারিকেনের আলোয় পড়তে বসেছে ছেলেপুলেরা। গ্রামজুড়ে মাধ্যমিক অতিক্রম করা শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। তবুও পড়ার জোশ ছিল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
শুধু যে মায়েদের শাসন ছিল এমনটিই নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ভয় দেখাতেন, ‘সন্ধ্যার পর আমি হেঁটে হেঁটে দেখব। কে পড়তে বসেছে আর কে বসেনি।’ আর পড়তে বসেনি জানতে পারলেই শাস্তি। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সবাইকে বই নিয়ে বসতে হতো। আর অধিকাংশেরই সময়সীমা ছিল এশার আজান পর্যন্ত। এরপর হয়তো নিজ থেকেই পড়া বন্ধ হয়ে যেত। অথবা ঘুম এসে প্রবলভাবে জাপটে ধরত সবাইকে। এটি গ্রামীণ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অলিখিত আইন। এশার আজানের পরপরই হৈ-হুল্লোড় আর কোলাহলমুখর গ্রামটা পরিণত হতো মৃত্যুপুরীতে। সারা দিনের ক্লান্তি এসে সহজেই ঘুম পাড়িয়ে দিত পরিশ্রমী গ্রামবাসীকে।
মাঝে মধ্যে আমি সন্ধ্যার পর মায়ের সাথে রসুইঘরে গিয়ে বসতাম। মা রান্না করত আর আমি তাকিয়ে থাকতাম চুলার জ্বলন্ত আগুনের দিকে। কী তেজ কী অহমিকা আগুনের। সব কিছুই সে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয় মুহূর্তেই। ঘন অন্ধকারকে আমি ভীষণ ভয় পেতাম। কখনো জোছনার রাতে খলবল করে হেসে উঠত চাঁদ। পাশে থাকা খালের পানিতে দেখা যেত তার উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব। তবুও মাকে ছাড়া বাইরে বের হতে পারতাম না। অন্ধকারে সামান্য আওয়াজ হলেই মনে হতো এই বুঝি এসে উপস্থিত হলো কোনো অশরীরী ভূতপ্রেত।
এমন ঘন অন্ধকারকে উপেক্ষা করে কুপিবাতি জ্বেলে পাড়াপড়শিদের বাড়ি যে বুড়ো মহিলারা, তাদের ভয় কম। দীর্ঘ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত ও লব্ধ অভিজ্ঞতা তাদের ভয়কে দূর করে দিয়েছে। শুধু আমরা ছোটরাই নয়, বড়রাও অবাক না হয়ে পারত না তাদের অন্ধকারে দৃঢ় সাহসের গল্প শুনে। এখন আর সেই অন্ধকার নেই। শহরেও নেই গ্রামেও নেই। চিরচেনা সেই গ্রামটি আমূল বদলে গেছে। ইলেকট্র্রিসিটি পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। চারদিকে চকচকে ঝকঝকে রঙিন আলোর ছড়াছড়ি। ঘরে ঘরে টিভি, ফ্রিজ আর ইলেকট্রনিকস সব অত্যাধুনিক পাখা। বুড়োরা কেউই এখন আর বেঁচে নেই। দলবেঁধে তারা চলে গেছে মাটির গহ্বরে।
বাড়ি গেলে এখনো সন্ধ্যার পর বের হই। যদিও অধিকাংশ সময়ই বাড়ি ও বাজার এ টুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি। কিন্তু কোনো বাড়ি থেকেই পড়ার আওয়াজ কানে আসে না। এখন বিকেলের চেয়ে সকালেই মানুষ বেশির ভাগ সময় বাজার করে।
তাই রাতে হাটবাজারের সরগরমও যেন আগের মতো নেই। পথঘাট সব ঠিকই আছে। শুধু নেই পুরনো মানুষজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা