২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হৃদয় আছে যার

-


অফিস ছুটির পর হাবিব গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। হঠাৎ দেখল রাস্তার পাশে কিছু লোক ১২-১৩ বছরের একটি ছেলেকে মারছে। কাছে গিয়ে মারধরের কারণ জানতে চাইল। একজন বলল, এই ছেলেটি আমার দোকান থেকে বিস্কুট চুরি করেছে।
দোকানদারকে বিস্কুটের দ্বিগুণ দাম দিয়ে ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলো হাবিব। জিজ্ঞেস করল, তুমি কেন চুরি করেছ?
ছেলেটি বলল, কাল থেকে আমি কিছুই খাইনি। খাবারের জন্য এখানে-সেখানে ঘুরছি, ওই দোকানটার সামনে বিস্কুটের প্যাকেট পড়েছিল। কুকুর খাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমি যখন কুকুরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিস্কুট খেতে শুরু করি, তখন এই লোকগুলো আমাকে দেখে মারে।

তোমার নাম কী?
তানভির।
হাবিব তানভিরের বাবা-মায়ের খোঁজখবর নিয়ে জানল সে এতিম। কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার ছেঁড়া নোংরা জামাকাপড় দেখে কেউ তাকে কাজে নিচ্ছে না। লোকে তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সবাই ভাবছে ছেলেটি চুরি করে পালাবে। হাবিব তানভিরকে সঙ্গে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলো। বাড়িতে শুধু তার মা থাকেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তানভির বাড়িতে আসার কারণে মাও কাজে স্বস্তি পেলেন। ছোট ছোট গৃহস্থালির কাজ এখন তানভির করবে। সে আমার মাকে মা ডাকতে শুরু করলো। আমাকে ভাইয়া ডাকে। অর্থাৎ আমি তার বড় ভাই।

হাবিবের ছুটি শেষ হয়ে গেল। তানভিরকে ডেকে বলল মায়ের যত্ন নিতে। ফোনে রোজ মা আর তানভিরের খোঁজখবর নেয়। একদিন হঠাৎ মা ব্যথা অনুভব করলে তানভির মাকে কাছের একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার তানভিরকে জানায় তার দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কেউ তার কিডনি দান করলেই সে বাঁচতে পারবে। কোনো কিছু না ভেবেই মাকে কিডনি দান করার কথা ভাবল তানভির। ডাক্তারকে বলল, আমি মাকে আমার কিডনি দান করতে প্রস্তুত।

কিন্তু এই কথা শুনে ডাক্তার স্পষ্টভাবে নিষেধ করলেন। সে কিডনি দান করতে পারবে না কারণ তার বয়স ১৮ বছরের কম, আর তার ওজন এবং রক্তও যথেষ্ট নয়। কিন্তু তানভির ডাক্তারের পায়ে পড়ল, বলল, সে যা-ই হোক, আমার একটি কিডনি মায়ের কাছে দিয়ে দিন, মাকে বাঁচানো যাবে। কিন্তু ডাক্তার রাজি হন না। তানভির ডাক্তারকে তার পুরো ঘটনা বলল। এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই, আজ যদি আমার মা মারা যায়, তাহলে আমার ভাইও আমার মতো এতিম হয়ে যাবে। আমি কখনোই তার এই অবস্থা দেখতে পারব না। আমার কিডনি মাকে দান না করলে মা এই পৃথিবী থেকে চলে যাবেন। তখন আমি ভাইকে যন্ত্রণায় দেখতে পাব না। আমার কিডনি না নিলে আজ রাতে আত্মহত্যা করব।

তানভিরের অবস্থা বুঝে ডাক্তার সাহেব অপারেশনের জন্য রাজি হলেন। কিন্তু তার শরীর পরীক্ষা করে দেখা গেল তার নিজের একটি কিডনি ফেইলিওর হয়েছে, ডাক্তার রাজি হলেন না, এখন তারা কিছু করতে পারবেন না। এমন করলে তানভিরের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। ডাক্তার তানভিরকে এই কথা বলার সাথে সাথে তানভির বলল, মাকে আমার কিডনি দান না করলে আমি আত্মহত্যা করে মরে যাব কারণ আমি আমার ভাইকে দম বন্ধ করতে দেখতে পারব না, তাই ভালো হয় আপনি আমার কিডনি দেন। আমার ভাইয়ের হাসি বেঁচে থাকবে। অনেক চিন্তাভাবনার পর ডাক্তাররা তানভিরের কিডনি মায়ের কাছে প্রতিস্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত নিতে ডাক্তারের চোখ ভিজে উঠল। আজ সে জীবনে প্রথম এমন ঘটনা দেখল। কিন্তু অপারেশনের আগে তানভির বলল, মা যদি আমি কোথায় গেছি জিজ্ঞেস করে, তাহলে বলবেন যে আমার গ্রামে ফিরে গেছি। সকাল হলে মা কিছুটা সুস্থ হলেন কিন্তু তানভির অনেক দূর চলে গেছে। মা ডাক্তারদের কাছে তানভিরের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা তানভিরের কথাই বলল। রাতে হাবিব ফোন করলে মা জানাল, কাল তার শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ গেছে। তানভির তাকে হাসপাতাল থেকে অপারেশন করিয়েছে।

হাবিব জিজ্ঞেস করল, তানভির কোথায়?
মা বললেন, সে তার গ্রামে ফিরে গেছে।
হাবিব অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এলো। হাসপাতালে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমার মায়ের কী হয়েছে?
একজন ডাক্তার বললেন, আপনার মায়ের দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু সেই ছেলেটি জীবন দিয়ে আপনার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। এ কথা শুনে হাবিবের হুঁশ উড়ে গেল, চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরল। কান্নায় তার জামাকাপড় সম্পূর্ণ ভিজে গেল। মনে মনে বলল, তানভির তুই মানুষ ছোট হয়ে আমাদের জীবনে এসেছিলি, কিন্তু তোর হৃদয় অনেক বড়!

 

 


আরো সংবাদ



premium cement