জীবনের কতরূপ
- তালুকদার জাহিদুল ইসলাম
- ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:১৫
বৈচিত্র্যময় রাজধানী শহর ‘ঢাকা’। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বাস করে এই শহরে। জীবিকা উপার্জন থেকে বিলাসবহুল জীবনযাপন কিংবা শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত মানুষের প্রথম পছন্দ ঢাকা। প্রতি অর্থবছর বাজেটের বড় একটি অংশ নির্ধারণ করা হয় ঢাকার বিভিন্ন খাতে। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরটি দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে এবং মানুষকে বসবাসের সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা দিতে সক্ষম হচ্ছে। এসব নানাবিধ বৈশিষ্ট্যই মানুষকে প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী করে তুলছে।
রহস্যময় এই শহরে প্রতিদিনই ঘটে শত শত ঘটনা। কিছু সুখের, কিছু দুঃখের আর কিছু ভয়াবহ কিংবা মর্মান্তিক। স্যাটেলাইট মিডিয়ার কল্যাণে আমরা কিছু ঘটনার সাক্ষী হলেও এখানকার বেশির ভাগ ঘটনাই থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। হয়তো দেখার সুযোগ হয় না কিংবা এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাববার ফুরসত পাই না আমরা। সম্প্রতি আমার সাথে ঘটে যাওয়া কয়েক মুহূর্তের একটি ঘটনা পাঠকদের জানাতে চাই।
শরতময় এক বিকেলে বাতায়ন খুলে সুমুখে প্রকৃতি দেখতে দেখতে কিছুটা অন্যমনস্ক ও বিরক্তিকরভাবে সময় পার করছিলাম। দিগন্তের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বর্ষণ কিংবা মৃদু বাতাসে রাস্তার ধারে দুলতে থাকা কাশফুল কবিদের কাব্যসঞ্চার করলেও আমার শব্দহীন- ছন্দহীন মনে সাড়া ফেলতে পারেনি। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মনঃপূত না হলেও অসময়ে একরাশ ভোজনে উদরপূর্তি করার ইচ্ছা মাথায় এলো।
সহসা জাগ্রত হওয়া ভাব ধূলিসাৎ হওয়ার আগেই বাল্যবন্ধু জাহিদকে সাথে নিয়ে বের হই। আমাদের গন্তব্য ডেমরা থেকে পুরান ঢাকার ‘জমিদারি ভোজ’ রেস্টুরেন্ট। যানজটের ভোগান্তি শেষ করে রাত ৮টার দিকে গন্তব্যে পৌঁছাই। যেহেতু সে দিনের জন্য আমরাই ছিলাম সর্বশেষ কাস্টমার, সুতরাং কোনোরূপ অভ্যর্থনা ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। এখানে একটি অবান্তর কথা বলে রাখি, পৃথিবীর সব লেখকের একটি কমন গুণ আছে, ভাব ও ছন্দের অভাব না থাকলেও অর্থের অভাব তাদের সব সময়ই থাকে। কারণ, মানুষ বিনামূল্যে জ্ঞান পেলে বিদ্বান হয়ে ওঠে কিন্তু অর্থের বিনিময়ে বিদ্যা শিখতে হবে- এমন দুঃসময় এখনো আসেনি।
যাই হোক, দু’জনের ইহজগতের সঞ্চয় একত্র করে জমিদারি কাচ্চির বন্দোবস্ত হলো কিন্তু খাওয়ার পর ফালুদার জন্য অর্থ রইল না। ফালুদার লোভ আর পকেটের দুরবস্থা সহসা পরিবারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। স্রষ্টা প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অসীম চাহিদা দিলেন কিন্তু পাঠালেন একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। যেখানে একটি স্বপ্ন আঁকড়ে ধরলে হাজারো স্বপ্ন ঝরে যায়। অর্থনীতির ‘নির্বাচন সমস্যা’ যেন শুধু আমাদের জন্যই প্রযোজ্য। এমন সব প্রলাপ ভাবতে ভাবতে খাওয়ার ইচ্ছা বাকি রইল না। বুকে চাপা দুঃখ আর কারো প্রতি ক্ষোভ প্রকাশিত না হলে আপনা আপনি নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে এসে করা কণ্ঠরোধ করে বসে। যাই হোক, গলাধঃকরণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অহেতুক নিজের ওপর জবরদস্তি না করে বাধ্য হয়ে বাকি খাবারটুকু রেখে দিলাম।
হঠাৎ বাইরের একটি ঘটনা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
স্বচ্ছ গ্লাসের দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, ১২-১৩ বছরের একটি ছেলে ও ছয়-সাত বছরের একটি মেয়ে কিছুটা জীর্ণশীর্ণ আর মলিন কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে ছোট মেয়েটি দৌড়ে রাস্তার পাশে রাখা ডাস্টবিনের কাছে গেলে ছেলেটি তাকে কিছু করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকে। মেয়েটি জামার টোকর থেকে পূর্বসঞ্চিত সামান্য কিছু খাবারসহ একটি পলিব্যাগ বের করে আর ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে পলিব্যাগে ভরতে থাকে। পরক্ষণেই মেয়েটি ছেলেটিকে ইশারা করে আর দু’জনেই অত্যন্ত আনন্দের সাথে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনাটি দেখার পরে আমি কিছুক্ষণের জন্য নিথর, নিস্তব্ধ হয়ে যাই। ফেলে রাখা বাকি খাবারটুকু অত্যন্ত করুণার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন কিছু বলতে চায়। দামি পোশাক পরে, দামি খাবার সামনে নিয়ে একবেলা মনোরঞ্জন হয়নি বলে স্রষ্টাকে ভর্ৎসনা করছি আর জীবনের প্রতি অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করছি। অথচ ছেড়া-মলিন কাপড় পরিহিত অভুক্ত দুই পথশিশুর জীবনের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা