২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অশ্রুভেজা আর্তনাদ

-


আর মাত্র তিনটি পরীক্ষা বাকি। পরীক্ষা শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়া যাবে। এমনটি চিন্তা করছে নিতু। পরীক্ষাটা শেষ হোক তার পর শহরে মামার বাড়িতে বেড়াতে যাবে। সেখানে গিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবে। মনে মনে ভাবছে লালবাগ কেল্লাতেও যাবে। তার পর সময় থাকলে অনন্য জায়গায় যাবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর দিয়ে দেখে অনেক সময় হয়ে গেছে। ঝটপট করে ফ্রেস হয়ে হালকা কিছু খেয়ে রওনা দিলো কলেজের দিকে। গাড়িতে বসে এদিকে ওদিকে তাকায়। আবার বন্ধুরা মিলে না কথা বলে। কেউ কেউ বলছে, পরীক্ষা শেষে বন্ধটা কাজে লাগাবে।
দেখতে দেখতে কলেজের কাছেই তাদের গাড়ির সাথে পণ্যবাহী এক ট্রাকের সাথে ধাক্কা। পণ্যবাহীর ট্রাকের কিছু না হলেও পরীক্ষার্থীদের গাড়ির শনির দশা পেয়েছে। রক্তাক্ত নিতু, পায়ে হাত দিয়ে কান্না করছে রুমী, মিতুরও বেশ আঘাত লেগেছে। শফিক ও রফিক সামনে থেকে লাফ দিয়ে কোনো রকম বেঁচে আসছে, তবুও কেটে ছুলে গেছে। দেখা গেল সবার থেকে বেশি রক্তাক্ত নিতু। সবাই নিতুকে নিয়ে ছোটাছুটি করল। স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে দেখা গেল বিরাট সমস্যা হয়ে গেছে। নাক, হাত, মুখে প্রচণ্ড আঘাত লাগছে। ডাক্তার বলছে, নাক ও হাতে বেশি সমস্যা হয়েছে।

যে সুখের নহরে হাসছে, আর সে-ই হসপিটালে এখন। সবাই অবাক, নিতু কথা বলতে পারে না। কোনো রকম ফোনে সে তার বন্ধুকে জানাল সে খুব অসুস্থ, তাদের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করছে। সবার অবস্থাই মোটামুটি ভালো, আমি হসপিটালে।
বন্ধুর অসুস্থার খবর শুনে বন্ধু রবিন খুব ভেঙে পড়ছে। রবিন বারবার চায় খোঁজ নিতে কিন্তু নিয়তি খুব অসহায়, খোঁজ নেয়ার মতো অবস্থা নেই। নিতুর ফোন কার হাতে কেউ জানে না। রবিন একা একা খুব কান্না করে। রবিনের প্রিয় বন্ধুই নিতু। নিতু মাঝে মধ্যে এসে রবিনকে ম্যাসেজে জানায় তার এ অবস্থা।
তবে ভাগ্যক্রমে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে তারা অল্পতেই বেঁচে গেছে। নয়তো বড় কোনো বিপদ হতে পারত। নিতু হাসপাতালে, রুমি ও মিতু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। শফিক, রফিক পরীক্ষা দিচ্ছে আপন মনে। যার বিপদ তাকেই পোহাতে হয়। নিয়তি সবাইকে সুখে রাখে না, সে তার মতো চলতে থাকে।

সপ্তাহ পার হলো নিতু একটু সুস্থ। আগে তরল থাবার থেতে পারত একটু। কথা বলতে পারত না। এখন একটু আধটু কথা বলে। সে রবিনকে জানায়, সুস্থতার কথা এবং একটু খেতে পারে সেই কথা। রবিন শুনে খুব খুশি হলো।
হসপিটালে থাকা ১০ দিন হলো। ডাক্তার সন্দেহ দূর করতে সব পরীক্ষা করেছে। ১১ দিন থাকল ১২তম দিনে ডাক্তার রিলিজ দিয়েছে।
প্রথমে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বেশি চলাফেরা করা যাবে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রবিনের ফোনে নিতুর কোনো ম্যাসেজই আসেনি। রবিন চিন্তা করছে, আজ কি আবার সেই দিনের মতো হলো কি না?
হঠাৎ রবিন ফোনের দিকে চেয়ে দেখে, আজ দুপুরে বাড়িতে আসছি, চিন্তা করো না বন্ধু।
রবিন চিন্তামুক্ত হলো কিন্তু তার মন বারবার কাঁদে।
পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে যাবে আর সেই শহরেই গেছে, তবে সুস্থ দেহে নয় অসুস্থ দেহে।
রবিন প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখে নিতুর। নিতু দেশে এসে অতীত ভাবে। কথায় কথায় বলে মরে গেলে আজ এত দিন হতো।
রবিন নিতুর খোঁজ নিলেও নিতু রবিনের প্রতি আগের মতো বন্ধুত্বভাব দেখায় না।
রবিন নিতুর কাছে হঠাৎ নিশাতের খুব প্রশংসা শোনে। নিশাতের অর্থের কাছে রবিন শূন্য। এক ভোরবেলা রবিন পড়শি ছোট ভাই মালেকের কাছে শুনে রবিনের নিতু নিশাতের নিঃশ্বাসের প্রধান বাহন। নিতুর নতুন নিঃশ্বাসের নিউজে রবিন ঘোর আঁধারের রথে।

 


আরো সংবাদ



premium cement