২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সবুজ ধানক্ষেত ও কাকতাড়ুয়া মন

-

শরতের শেষ বিকেল। পরিচিত সেই সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় ধূসর মেঘ। সারা দিনের বিচরণ শেষে সকালের সেই প্রখর রৌদ্রোজ্জ্ব¡ল সূর্যটা পশ্চিম আকাশে। তার সোনালি আলোকচ্ছটায় বড্ড হ্রাস পেয়েছে। আপন গৃহে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। শেষ বিকেলের এই হৃদয়জুড়ানো স্নিগ্ধ হাওয়া শরীরে লাগলেও মুহূর্তেই তার শীতলতা পৌঁছে যাচ্ছে হৃদয়ের অভ্যন্তরে। বড় রাস্তা হতে নেমে একটু দূরেই যেন সবুজের সমুদ্র, বিশাল ধানক্ষেত। মৃদু বাতাসের সাথে অল্পবয়স্ক কচি ধান গাছগুলো মনের আনন্দে খেলছে। তরতাজা ধানগাছগুলোর সাথে ক্ষেতের আলোর কচি ঘাসগুলোর যেন রয়েছে গভীর মিতালী। প্রায়ই ছুটে যাই এই সবুজ সাগরে হৃদয়জুড়ানোর জন্য। কী অপরূপ সৌন্দর্য। যেন পরম আদরে কাছে টেনে নেয় সবাইকে। আলতো করে ছুঁঁয়ে দেই কচি ধানগুলোকে। কচি সবুজ ধানগাছের শীষগুলো যদিও একটু খশখশে কিন্তু নরম। যেন লজ্জা পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ‘এই যাও আমাকে ধরবে না একদমই।’
সবুজ সুন্দর ধানগাছগুলো যখন বাতাসে দোল খায় তখন কি যে ভালো লাগে তা প্রকাশ করার মতো নয়। ধানের চারাগুলো পরস্পর পরস্পরের গায়ে লুটিয়ে পড়ে। বাতাসের প্রকোপ কমলে আবার চলে আসে স্বস্থানে। বাতাসের তালে ধানগাছের এমন ছন্দময় দোলাচল ভীষণভাবে আন্দোলিত করে আমার মনকে। ক্ষেতের আল দিয়ে দু’হাতে দু’দিকের ধানগাছগুলো ছুঁয়ে যখন আমি বিলের মাঝখানে হেঁটে যাই, তখন তো অদ্ভুত শিহরণ জাগে মনে।
ঘন সবুজ গালিচার মতো এই মনোমুগ্ধকর ধান ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটি কাকতাড়ুয়া। ধানবীজ ক্ষেতে বুননের সময় তাকে দাঁড় করানো হয়েছিল। সে সঙ্গীহীন। সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। কারো সাথেই তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তবে বাতাসের সাথে তার গভীর ভাব। শুধু তার সাথেই সে মনের আনন্দে এদিক ওদিক দুলতে থাকে। যেন কথা কয়। আমার ভীষণ ইচ্ছে করে দু’হাত দু’দিকে লম্বা করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। স্বার্থপিপাসু হিংসাপরায়ণ লোকদের সঙ্গ থেকে এই নিঃসঙ্গ কাকতাড়ুয়া জীবনই অধিক উত্তম। কোনো জুটজামেলা নেই। নেই কোনো অভিযোগ কিংবা বিচ্ছেদের ভয়। কালো হাঁড়িতে সাদা চুন দিয়ে আঁকা ওর ভয়ঙ্কর মুখাবয়বও এই শান্ত স্নিগ্ধ বিকেলে ভীষণ ভালো লাগে। বারবার যেন সে বুঝিয়ে দেয়। তুমি যেমনই হও ভেঙে পড়ো না। নিজের কাজটি চালিয়ে যাও যথাযথভাবেই। নিঃসঙ্গতা কোনো আহামরি কিছু নয়। এই দেখো কত নিঃসঙ্গতার সাথে আমি পাখি তাড়িয়ে যাচ্ছি। জোছনাহীন অন্ধকার রাতেও আমি ভয় পাই না। তুমিও এমনই হও।
মন খারাপ হলেই ক্ষেতের আল দিয়ে মস্ত বড় বিলের মাঝে চলে যেতে ইচ্ছে হয়। যত দূর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। তারপর দু’হাত দু’দিকে লম্বা করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। আমি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। একাকিত্ব যার পিছু ছাড়ছেই না। কাকতাড়ুয়াই তার সব চেয়ে বড় প্রেরণা।


আরো সংবাদ



premium cement
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সকলেই ন্যায় বিচার পাবেন : মোবারক হোসেন জয়সাওয়ালের রেকর্ড ছক্কার দিনে পার্থে দাপট ভারতের তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি ‘বাবা বলে ডাকতে পারি না’ বিএনপি নির্বাচন চায় দেশকে রক্ষার জন্য : মির্জা ফখরুল জাতীয় ঐক্যের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : গোলাম পরওয়ার সাঙ্গু নদীতে নৌকা বাইচের মাধ্যমে শুরু হলো বান্দরবানে সপ্তাহব্যাপী ক্রীড়া মেলা ফার্মগেটে ৭ তলা ভবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনের ডনেটস্ক অঞ্চলের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া পর্ণো তারকাকে অর্থ দেয়ার মামলা খারিজের আবেদনের অনুমতি পেলেন ট্রাম্প দোহারে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর নামে ছাত্রলীগ নেতার মামলা

সকল